অতিমারি কোভিড: মহামারি অর্থনীতি

পোস্টটি দেখেছেন: 65 হর্ষ দাস বিশ্বের কুড়িটি দাতব্য সংস্থার অলাভজনক সংগঠন হচ্ছে অক্সফ্যাম যেগুলি পৃথিবী থেকে দারিদ্র্য দূরীকরণের কাজ করে। তাদের “পাওয়ার প্রফিট অ্যান্ড এন্ডেমিক” শীর্ষক প্রতিবেদন বলছে -“এই অতিমারিকে কাজে লাগিয়ে আমজনতার রক্ত শুষে নিচ্ছে বিশ্বের ধনকুবেররা।” কোভিডে মানুষ কী হারিয়েছে   এক কোটি মানুষের জীবন  বিপন্ন, ৪০ কোটি  মানুষ কাজ হারিয়েছেন, অনাহারে রয়েছেন ২৬ […]

অতিমারী ও অর্থনীতি

হর্ষ দাস

বিশ্বের কুড়িটি দাতব্য সংস্থার অলাভজনক সংগঠন হচ্ছে অক্সফ্যাম যেগুলি পৃথিবী থেকে দারিদ্র্য দূরীকরণের কাজ করে। তাদের “পাওয়ার প্রফিট অ্যান্ড এন্ডেমিক” শীর্ষক প্রতিবেদন বলছে -“এই অতিমারিকে কাজে লাগিয়ে আমজনতার রক্ত শুষে নিচ্ছে বিশ্বের ধনকুবেররা।”

কোভিডে মানুষ কী হারিয়েছে

  এক কোটি মানুষের জীবন  বিপন্ন, ৪০ কোটি  মানুষ কাজ হারিয়েছেন, অনাহারে রয়েছেন ২৬ কোটি মানুষ যা সাধারণ অবস্থার দ্বিগুণ।    

এই মহামারিতে কতটা  মুনাফা করেছে বহুজাতিকরা

৩২ টি বহুজাতিক সংস্থার মুনাফা বেড়েছে ১০,৯০০ কোটি ডলার, যার ফলে ৫০ কোটি মানুষ পড়েছে দারিদ্রের কবলে। GAFAM (গুগোল, অ্যাপেল, ফেসবুক, আমাজন, মাইক্রোসফট) ৪৬০০কোটি ডলারের বেশি মুনাফা কামিয়েছে এই সময়। এই সময়ে ওষুধ কোম্পানী গুলির মুনাফা বেড়েছে ১২০০ কোটি ডলার, ১০০টি সংস্থার শেয়ার বাজারে দর বেড়েছে তিন লক্ষ কোটি ডলার। এইভাবে মুনাফার সমস্ত তথ্য দিতে গেলে পাতার পর পাতা লিখতে হয়। আভাসেই সাকুল্যের আঁচ পাঠক ঠিকই পাবেন।

ভারতবর্ষে মুনাফার চরিত্র কেমন 

মুকেশ আম্বানির ব্যক্তিগত সম্পত্তি ২,৭৭,৭০০কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৬,৫৮,৪০০ কোটি টাকা। মার্চ মাসের লকডাউনের পর থেকে প্রতি ঘণ্টায় ৯০ কোটি টাকা আয় করেছেন আম্বানি।     

এই লুণ্ঠনের পৃথিবীব্যাপী প্রভাব কী

বিশ্বব্যাংকের রিপোর্ট বলছে ১৯৯০ সাল থেকে ২০১৬ সাল পযর্ন্ত পৃথিবী হারিয়েছে ৫০২,০০০ বর্গমাইলের বনাঞ্চল। পুঁজির মুনাফার কারণে বনাঞ্চল হারানোর পরিমাণ দক্ষিণ আফ্রিকার মতো এক বিশাল দেশের সমান। ন্যাশনাল জিওগ্রাফি ২০১৯ সালে নিপা ভাইরাস সম্পর্কে তাদের একটা রিপোর্টে কী বলছে দেখা যাক ” it’s one of many infectious diseases usually confined to wildlife that have spilled over to people in areas undergoing rapid forest clearing….. growing body of scientific evidence suggest that deforestation creates the condition flora range deadly pathogens – such as Nipah and Lassa, and the parasites that cause malaria and Lyme  diseases- to spread people.”     

ওপরের উদাহরণ থেকে একথা স্পষ্ট  যে, বনে থাকা ভাইরাস মানুষের কাছে চলে আসছে বন ধ্বংস হচ্ছে বলে। যে পরিমানে রিয়েল এস্টেটের ব্যবসাতে পুঁজি বিনিয়োগ হচ্ছে, সেই পরিমাণে আরবানাইজেশন হচ্ছে ও  তার ফলে অরণ্য  ধ্বংস হচ্ছে এবং সেই অনুপাতে মানুষ ভাইরাসের দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে। শুধুমাত্র ২০১৯ সালে ভারতবর্ষে ৪৩,৭০০ টাকা বিনিয়োগ হয়েছে রিয়েল এস্টেটে। বোঝাই যাচ্ছে এই বিনিয়োগ কী পরিমানে ভাইরাস আক্রমণের গতিকে বাড়িয়ে তুলছে ভারতবর্ষের মানুষের ওপর। 

এগ্রোকেমিক্যালস ব্যবসার বিনিয়োগের দিকটি কী

২০১৯ সালে বিনিয়োগ ২৪৩.১  বিলিয়ন ডলার যার মধ্যে ৮৪.৫  বিলিয়ন ডলার পেস্টিসাইডে, বাদবাকিটা রাসায়নিক সারে। ২০২৪ সালে এই বিনিয়োগ বেড়ে হবে ৩০০ বিলিয়ন ডলার। এই ৩০০ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে একই হারে পেস্টিসাইডস ও রাসায়নিক সারের বৃদ্ধি ঘটবে।      

পেস্টিসাইডস প্রয়োগে এরই মধ্যে সবজি থেকে ফল সবই বিষাক্ত হয়ে উঠেছে, বন্ধু ব্যাকটেরিয়াদের নিধনের  ফলে আমাদের শরীরে ক্যানসারের মতো দূরারোগ্য ব্যাধি বেড়েই চলেছে, পাঞ্জাবের গ্রামে গেলেই বোঝা যায়। রাসায়নিক সারের ১৮ শতাংশ  জমি ও গাছ নেয়, আর বাকিটা সমুদ্রের জলে চলে গিয়ে সামুদ্রিক শ্যাওলার  অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটিয়ে  সমুদ্রতলে প্রায় ৩০টি জায়গায় ডেড জোন তৈরি করেছে। ফলে অক্সিজেন সাপ্লাই কমে গিয়ে সামুদ্রিক জীব মারা যাচ্ছে, আর পৃথিবীর ৬৫ শতাংশ অক্সিজেন সমুদ্রের থেকে আসে, সেটাও কমে যাচ্ছে ফলে বাচ্চা বয়সেই হাঁপানি দেখা যাচ্ছে শিশুদের মধ্যেও।        

আমাদের শরীর, ব্যাকটেরিয়া ও অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবসা  

আমাদের শরীরে ৩০ ট্রিলিয়ন কোষ আছে, কিন্তু ব্যাকটেরিয়া আছে ৩৯ ট্রিলিয়ন, মাত্র ১০০ রকমের ব্যাকটেরিয়া আমাদের শরীরে অসুস্থতা তৈরি করে। যার মানে দাঁড়ায় অধিকাংশ ব্যাকটেরিয়াই আমাদের বন্ধু ব্যাকটেরিয়া, যারা আমাদের শরীরকে সমস্ত প্রতিকূলতার থেকে রক্ষা করে চলেছে। ব্যবসায়ীদের স্বার্থে অ্যান্টিবায়োটিকের আবিষ্কারক আলেকজান্ডার ফ্লেমিং-এর নিষেধ না মেনে যথেচ্ছাচারে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করার ফলে, বন্ধু ব্যাকটেরিয়াদের নিধন হচ্ছে, উল্টোদিকে শত্রু ব্যাকটেরিয়ারা কিন্তু তাদের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স তৈরি করে নিচ্ছে। ফলে ব্যাক্টেরিয়া জগতে একটা বিপরীত প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়ে গেছে। বন্ধু ব্যাকটেরিয়া মারা যাচ্ছে আর শত্রু ব্যাকটেরিয়ার পুনর্গঠন হচ্ছে। এর ফলে ২০৫০ সাল নাগাদ প্রতি বৎসর ১০০ লক্ষ লোক মারা যাবে। এই অবস্থাকে সামনে রেখে ‘ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন’ কী বলছে দেখা যাক –  “a problem so serious that it threatens the achievement of  modern medicine.”

একই ঘটনা ঘটছে কোভিডকে ঘিরে, যে হারে স্যানিটাইজার উৎপাদন ও ব্যবহার হচ্ছে তাতে এই বন্ধু ব্যাকটেরিয়াদের প্রবল পরিমাণে নিধন হচ্ছে। একটা সময় এসে দেখা যাবে মানুষকে বাঁচানোর জন্য এই প্রবল ব্যাকটেরিয়া জগত ধ্বংস হয়ে গেছে আর এখন মানুষকে বাঁচাবার জন্য কেউ নেই।  

পুঁজিবাদী বিনিয়োগই কি মানুষের মৃত্যু ডেকে আনছে?

এই পুঁজিবাদী অর্থনীতি যত মুনাফা করতে চাইবে মানুষ মারা যাবে তত বেশি। আবার পুঁজিবাদ মুনাফা ছাড়া বাঁচে না। কে বেঁচে থাকবে? পুঁজিবাদ না মানুষ? এই প্রশ্নের আজ মুখোমুখি আমরা।

 বাঁচার পথ কী?

পুঁজির পুনরুৎপাদনের পথকে রুদ্ধ করে প্রকৃতি পুনরুৎপাদনে যেতে হবে। পুঁজির যে চক্র তাকে ধ্বংস করতে হবে এবং এর মাধ্যমেই  গড়ে তুলতে হবে প্রকৃতির মেরামতির কাজ। তাহলে নতুন অরন্যের জন্ম হবে, বন্য পশুরা তাদের স্থান ফিরে পাবে, পুরানো জায়গায় ফিরে যাবে ভাইরাসের দল, সমুদ্রের তলার বিষাক্ত পরিবেশ পরিশুদ্ধ হবে, নতুনভাবে সামুদ্রিক শ্যাওলা-অ্যালগিদের পুনর্জন্ম   ঘটবে। ফলে আমাদের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। এটাই বাঁচার পথ । সমস্ত পুরনো পরিচয় ভুলে গিয়ে গড়ে তুলতে হবে এই প্রাকৃতিক পরিচয়। তবেই মানুষ বাঁচবে।

ছবি :  FOREIGN POLICY

1 thought on “অতিমারি কোভিড: মহামারি অর্থনীতি”

  1. Amader ekhuni uchit sachetan howa
    o pratteker moddhe eta jagie tola.Ei kaj ekar dwara samvab noy samajer suvakangkhi der anurodh jato sigro samvab asun agami projanmo k ektu sustho vabe bachte sahajyo kori. Ami sabar age sammoti o ongikar korlam.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top