পুঁজিবাদ ও ফ্যাসিবাদ: সেকাল একাল

পোস্টটি দেখেছেন: 45 শঙ্খদীপ ভট্টাচার্য বিশেষ এক আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিতে পুঁজিবাদের আপৎকালীন অবস্থার রাজনৈতিক সমাধান হল ফ্যাসিবাদ। পুলিস মিলিটারি ব্যবস্থা মজবুত করে গণতন্ত্রকে প্রত্যাখান করা তারই এক অবশ্যম্ভাবী পরিণাম। ক্যাপিটল হিলে বর্বর আক্রমণ, দু দুটো ইমপিচমেন্ট হজম করেও নাছোড়বান্দা ডোনাল্ড ট্রাম্পের বেপরোয়া গোঁয়ার্তুমি থেকে  ‘জো হুকুম মেরে আকা’ ফিসফিসিয়ে আদানি আম্বানি গোষ্ঠীর প্রতি একবগগা আনুগত্য কায়েম […]

ফ্‌যাসীবাদ

শঙ্খদীপ ভট্টাচার্য

বিশেষ এক আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিতে পুঁজিবাদের আপৎকালীন অবস্থার রাজনৈতিক সমাধান হল ফ্যাসিবাদ। পুলিস মিলিটারি ব্যবস্থা মজবুত করে গণতন্ত্রকে প্রত্যাখান করা তারই এক অবশ্যম্ভাবী পরিণাম। ক্যাপিটল হিলে বর্বর আক্রমণ, দু দুটো ইমপিচমেন্ট হজম করেও নাছোড়বান্দা ডোনাল্ড ট্রাম্পের বেপরোয়া গোঁয়ার্তুমি থেকে  ‘জো হুকুম মেরে আকা’ ফিসফিসিয়ে আদানি আম্বানি গোষ্ঠীর প্রতি একবগগা আনুগত্য কায়েম রেখে ড্রাকোনিয়ান কালা কানুন লাগু করা নরেন্দ্র মোদীর জনবিরোধী অবস্থান  বস্তুত চূড়ান্ত সঙ্কট এবং আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব থেকে পুঁজিবাদের বেরিয়ে আসারই এক ভয়ংকর ফলাফল।  এই দুটি ক্ষেত্রেই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে শিকেয় তোলা হয়েছে। একদিকে বর্ণবৈষম্যকে হাতিয়ার করে ‘মেক আমেরিকা গ্রেট আগেইন’ তো অন্যদিকে হিন্দুত্ববাদকে সামনে রেখে ‘আচ্ছে দিন’–ওয়ালা নতুন ভারতের প্রতিশ্রুতি।

                  ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং নরেন্দ্র মোদীর ভক্তের সংখ্যা কম নয়। দুজনেই একটা বড়ো অংশের মানুষের কাছে মসিহা। ঠিক যেমন ছিলেন হিটলার, মুসোলিনি, ফ্রাঙ্কো,  অলিভিয়েরা সালাজার। দেশের মানুষকে জাতীয়তাবাদের সংকীর্ণ গণ্ডির মধ্যে আটকে রেখে সকলেই আন্তর্জাতিকভাবে আবদ্ধ তো ছিলেনই বরং একে অপরের প্রতি ছিলেন ভীষণ শ্রদ্ধাশীল। হিটলারের ঘরে রাখা ছিল মুসোলিনির আবক্ষ মূর্তি। মোদী এবং ট্রাম্পের মধ্যের বাঙ্ময় প্রেম তারই সাক্ষ্য।

           ফ্যাসিবাদের কোনও তত্ত্ব নেই, বিরোধী সমস্ত তত্ত্বকে আপাদমস্তক খারিজ করে সুপরিকল্পিত উপায়ে ক্ষমতায় থাকাই মূল লক্ষ্য। ১৯২৩ সালের ভাষনে হিটলার বলেছিলেন, ‘Let us first begin to rule, then the programme will come quite by itself.’ ঠিক চার বছর পরেই তিনি জোর দিয়ে বললেন, ‘The people want no programmes. They want someone to rule them.’ হিটলারের উত্থানের কিছুকাল আগে থেকেই বিজ্ঞানের প্রয়োগ বিশেষ করে বৈদ্যুতিক প্রয়োগ এতদূর বেড়ে গিয়েছিল যে পুঁজি উদ্বৃত্ত হয়ে উঠেছিল  জাতীয় ক্ষেত্রে। ফলে ব্যাঙ্কের দ্বারা উপনিবেশে পুঁজির রপ্তানির মাধ্যমে আপাত সংকটের হাত থেকে বাঁচলেও উপনিবেশেও দ্রুত পুঁজির ক্ষেত্র অপ্রতুল হয়ে দেখা দিয়েছিল। আবার উপনিবেশগুলিকে কেন্দ্র করে সারা বিশ্ব ইতিমধ্যেই তখন ভাগাভাগি হয়ে গিয়েছে সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির মধ্যে । অবস্থা যা দাঁড়ালো, একের দ্বার অন্য সাম্রাজ্যবাদকে উচ্ছেদ না করলে সেই সাম্রাজ্যবাদের পুঁজির সঞ্চয়নের পথ অবরুদ্ধ হবে। অর্থাৎ মার্কসের সময় পুঁজির সঞ্চয়নের ফলে শুরু হয়েছিল একই দেশের ভেতর পুঁজিপতি কর্তৃক পুঁজিপতি উচ্ছেদ। এখন তা বদলে দাঁড়ালো সাম্রাজ্যবাদ কর্তৃক সাম্রাজ্যবাদ উচ্ছেদ অর্থাৎ অবশ্যাম্ভাবী হয়ে দেখা দিল বিশ্বযুদ্ধ। লেনিন লক্ষ করেছিলেন এই সময় বিশ্বে দুটি নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। সর্বহারা কর্তৃক সমাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা অথবা ফিনান্সপুঁজি কর্তৃক বিশ্বযুদ্ধের মাধ্যমে দখলদারীর লড়াই। এই পর্বে ব্যাঙ্কের দ্বারা পুঁজির ফাইনানসিয়ালাইজেশন (financialization) ঘটে। অর্থাৎ ব্যাঙ্কের নেতৃত্বে শিল্প পুঁজি merge করানোর মাধ্যমে পুঁজির একটি উপরিকাঠামো তৈরি হয় যার নাম ফিনান্স পুঁজি। Edward Conze এবং  Ellen Wilkinson ১৯৩৫ সালে ‘Why Fascism’ প্রবন্ধে লিখলেন, “The Communists insist that Fascism is a dictatorship of finance-capital. Lenin had said that imperialism was the last stage of capitalism. He lived only to see the first stage of Fascism. So to the loyal Leninist Fascism is nothing new. It is the very last phase of the last phase of capitalist imperialism, the counter-stroke of capitalism against the workers’ world revolution.”

            যেকোনও ফ্যাসিবাদী দলে এক ভগবান তুল্য নেতা প্রকাশ্যে থাকেন। নাটুকেপনা, দেখনদারি, অসম্ভব সব প্রতিশ্রুতির মধ্যে দিয়ে আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার আভ্যন্তরীণ বিরোধী উপাদানগুলির মধ্যে সমতা বিধান করেন। হিটলার অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গেই সে কাজ করেছিলেন। হিটলার এবং মুসোলিনি দুজনেই নিজদের প্রোপাগান্ডা নিয়ে হাজির হয়েছিলেন পুঁজিবাদীদের সম্মতিতেই। general union of industrialist দের মুখপাত্র হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন মুসোলিনি আর অন্যদিকে হিটলার ঐতিহাসিক প্রাতঃরাশ সেরেছিলেন ক্ষমতাশালী এক Cologne Banker -এর সঙ্গে। তাছাড়াও ছিলেন Oppenheim & Co এবং Herr von Papen  নামের এক নামজাদা শিল্পপতি। ঠিক এর উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে কম্যুনিস্টরা তখন জাতীয় গন্ডির মধ্যে আবদ্ধ হয়ে পড়ছিলেন। Edward Conze এবং  Ellen Wilkinson এই প্রসঙ্গে তাই বলছেন, “..as the Communist political line became unreal, their technique degenerated. With Soviet Russia concentrating on building Socialism within its own borders, the Communist International could no longer form the basis of the world revolution which the Communists preached.” একইসঙ্গে লেনিনের মৃত্যু বিশ্ব্যাপী শ্রমিক আন্দোলনে এক পরাজয় ডেকে আনল। প্রথম তা ঘটল তাত্ত্বিক অবস্থান থেকে এবং ক্রমশ তার বাস্তবতা ফুটে উঠল ১৯৪‍‌৩ সালে। দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক ভেঙে তৃতীয় আন্তর্জাতিক গঠন করে সুবিধাবাদী নেতাদের থেকে আন্তর্জাতিককে মুক্ত করে মার্কসবাদের নতুন উত্থানের মাধ্যমে বিশ্ব সোভিয়েত গঠনের প্রচেষ্টা অধরাই থেকে গেল। একদিকে কমিউনিস্টরা আন্তর্জাতিক ভেঙে রাষ্ট্র বিলীনের বদলে শক্তিশালী রাষ্ট্র গঠনের দিকে অর্থাৎ হেগেলবাদের দিকে  এগিয়ে গেল আর পুঁজিবাদ হেগেলবাদ থেকে বেরিয়ে বিশ্ব-পুঁজিবাদী কাঠামো গড়তে UNO, IMF, World bank, gatt ইত্যাদি সংগঠনের জন্ম দিল।  বিংশ শতাব্দীর পর যখন একবিংশ শতাব্দীতে ফিনান্স পুঁজির জোয়ার এল, তখন বিশ্বযুদ্ধের কারণেই একক কোন প্রক্রিয়া নেওয়া যায়নি। তাই প্রাথমিক কাজ হয়ে দাঁড়াল যুদ্ধ বিধ্বস্ত অর্থনীতিকে স্থিতিশীল  করা। একটি মাত্র বাজারের ছত্রছায়ায় একত্রিত করা  পৃথিবীব্যাপী সমস্ত মানুষকে। সোভিয়েত রাশিয়ার পতনের মধ্য দিয়ে যা ত্বরান্বিত হল। www.com একটি মার্কিন প্রযুক্তি যা আগে রাষ্ট্র ব্যবহার করত যুদ্ধক্ষেত্রে বা অন্য রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি করার জন্য। তাকেই ব্যবহার করা হল বিশ্ববাজার গঠনে, মানুষে মানুষে  যে মানবিক বন্ধন থাকে তাকে ভেঙে বা তাকে তুচ্ছ প্রতিপন্ন  করে প্রত্যেক মানুষকে বাজারের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হল। এখন মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক গড়তে হলে বাজারের মাধ্যমে গড়তে হবে। সমাজ প্রতিস্থাপিত হল বাজারের মধ্যে দিয়ে। লেনিনের সময়ে ফিনান্স পুঁজির কাঠামো ছিল সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র, এখন হয়ে দাঁড়ালো বাজার। ফলত মার্কিন রাষ্ট্রের পরিবর্তে জায়গা নিল ডলার আধিপত্য। আগে ব্যাঙ্কের মাধ্যমে শিল্পের ফাইনান্সিয়ালাইসেসন হয়েছিল এখন শিল্পকে টুকরো করে বাজার ও ব্যাঙ্কের মিলিত কাঠামোর অধীনে নিয়ে আসা হল আউটসোর্সিং মারফৎ। এই কাঠামোয়  সামাজিক মানুষকে টুকরো করে ব্যক্তি-মানুষে পরিণত করা হল। ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দার রেশ থেকে পুঁজিবাদ এখনও বেরিয়ে আসতে পারেনি। অতএব এই বাজারকে গতিশীল রাখতে মানুষকে বিভাজিত করার চেয়ে আর কী উপযুক্ত হতে পারে। উৎপাদনের জগৎ থেকে বেরিয়ে আজকের পুঁজিবাদে মুখ্য হয়ে উঠেছে টাকা তছরুপ, বিশাল অঙ্কের টাকা ব্যাংক থেকে হাতিয়ে বাজারে খাটানো, ট্যাক্স ফাঁকি, শেয়ার বাজার, ফাটকা, হেজ ফাণ্ড। জুয়া, জোচ্চুরি, গায়ের জোর খাটিয়ে  যেন তেন প্রকারেণ  উদ্বৃত্ত  শোষণ, পরিবেশ বিপর্যয়কে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে এই অমানবিক অসামাজিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়া। এইসকল কাজে সিদ্ধহস্ত Koch brothers এর দরকার হয়ে পড়ল ট্রাম্পের মতো একজন উগ্র জাতীয়তাবাদী নেতা যে ক্ষমতার অনুশীলন করে তাদের সুরক্ষা দেবে। যুদ্ধবাজ মানসিকতায় মানুষকে ক্ষেপিয়ে তুলে বেলাগাম অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলা থেকে তাদের নজর সরিয়ে রাখার ব্যবস্থা হল। আম্বানি, আদানি, নীরব মোদির তুরুপের তাস তখন নরেন্দ্র মোদী। জাতীয়তাবাদের  জোয়ারে গা ভাসাতে একজন বর্ণ বিদ্বেষ তো অন্যজন উগ্র হিন্দুত্ববাদের জিগির তুলে মেতে উঠল মানুষকে টুকরো করার পরিকল্পনায়। ক্ষমতাকে চিরন্তন করতে ২০১৯ সালে মার্ক জাকারবার্গের সঙ্গে ডিনার সারলেন ট্রাম্প আর নরেন্দ্র মোদী হাসিমুখে পৌঁছে যান আদানি আম্বানির খুব ব্যক্তিগত পারিবারিক অনুষ্ঠানে। ঐতিহাসিক  বটে! এই সকল কাজের সঙ্গে গণমাধ্যম এবং গণমূল্যবোধ কিনে নিয়ে জনগণের সামগ্রিক আকাঙ্ক্ষাকেও তারা পেছনের এক অবৈজ্ঞানিক মধ্যযুগীয় সংস্কৃতির  দিকে চালিত করতে চায় একচেটিয়া পুঁজিবাদের রাজনৈতিক বহিঃপ্রকাশ হিসেবে যা বস্তুত দ্বন্দ্বতত্ত্বকেই বাতিল করে। ফ্যাসিবাদের এই প্রবণতা এবং পুঁজিবাদের সঙ্গে  আঁতাত প্রসঙ্গে Edward Conze এবং  Ellen Wilkinson বলছেন, “ While capitalism continues these tendencies must develop. It becomes a condition for existence in the modern world of finance-capital that the state should be run on the same lines as a big business, with all the secrecy and unity of control that attends the directive operations of a great combine. Under these circumstances the urge to some form of dictatorship, open or veiled, becomes inevitable.”

                  হিটলারের সঙ্গে মুসোলিনির সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্কের মতোই মোদী এবং ট্রাম্পের শেয়ানে শেয়ানে কোলাকুলি এখন সর্বজনবিদিত। সামাজিক মাধ্যম থেকে শুরু করে দূরদর্শনের প্রায় নব্বই ভাগ খবরের চ্যানেলগুলি কর্পোরেটদের দখলে। অপ্রয়োজনীয় অবান্তর হাস্যকর খবরগুলিকে ব্রেকিং নিউসের তকমা দিয়ে বাস্তব থেকে নজর ঘোরানোর এক বিশ্বব্যাপী চক্রান্ত চলছে। ক্ষমতার অনুশীলনে গায়ের জোরে  সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাষ্ট্র নির্ধারিত নিয়মে আমাদের ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। জল জঙ্গল জমি জোরজবরদস্তি হাতিয়ে নিয়ে পৃথিবীকে মানুষের প্রতিকূল করে তোলার মারাত্মক কর্মকাণ্ড চালিয়ে মুচকি হাসছেন লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার মালিক কর্পোরেট বাহিনী।

              মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সমর্থনেই হিটলারের উত্থান হয়েছিল। আজকের জ্ঞান অর্থনীতির যুগে খেটে খাওয়া মেহনতী মানুষ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে বুদ্ধিবৃত্তিক শ্রমিকদের (knowledge workers) একটা বড়ো অংশ নরেন্দ্র মোদীকেই রক্ষাকর্তা হিসেবে পুজো করছেন। এই সংস্কৃতির উল্টোপথে হেঁটে অভিজ্ঞতাবাদ থেকে বেরিয়ে আজকের বাস্তবকে বুঝে কম্যুনিস্টদের পরিযায়ী শ্রমিক এবং knowledge workers  দের নেতৃত্ব দিয়ে সংগঠিত করতে হবে। কৃষক আন্দোলন, পর্যুদস্ত ট্রাম্পিয়ানা, মেরুদণ্ডহীন সাংবাদিকতা এবং আজকের বাস্তব প্রসূত বিকশিত তত্ত্বের বস্তুনিষ্ঠ প্রয়োগে ধুঁকতে থাকা পুঁজিবাদের কফিনে শেষ পেরেক গেঁথে দিতে আন্দোলনের প্রেক্ষিতকে কয়েক শ গুণ বাড়িয়ে তুলতে হবে। এ ছাড়া আর কীই-বা পথ আছে!

লেখক পরিচিতি:

লেখক তথ্য-প্রযুক্তি কর্মী। ছোট গল্প, সমাজ- বিজ্ঞান, পরিবেশ ও তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ে নানান নিবন্ধ লেখেন নিয়মিত।

Contact:

bhattacharya.sankhadeep@gmail.com

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top