হোমো ভার্চুয়ালিস পর্ব ৩

পোস্টটি দেখেছেন: 34 শঙ্খদীপ ভট্টাচার্য নেশা ঘন ভিডিও গেম:  ব্লকচেন বাস্তুতন্ত্রে আগামীর কর্মক্ষেত্র  অচেনা নম্বর থেকে ফোন এলে আজকাল আর তাকে এড়িয়ে যাওয়া যায় না। দুর্দিনে সামান্য সুসংবাদের আশায় মুঠোফোন কান চেপে ধরে। আপনি স্টক মার্কেটে ইনভেস্ট করতে চান? আপনার ট্রেডিং একাউন্ট আছে? এতদিন ক্রেডিট কার্ড আর পারসোনাল লোন গছিয়ে দেওয়ার অনুরোধের আসর বসাতেন কম […]

শঙ্খদীপ ভট্টাচার্য

নেশা ঘন ভিডিও গেমব্লকচেন বাস্তুতন্ত্রে আগামীর কর্মক্ষেত্র

 অচেনা নম্বর থেকে ফোন এলে আজকাল আর তাকে এড়িয়ে যাওয়া যায় না। দুর্দিনে সামান্য সুসংবাদের আশায় মুঠোফোন কান চেপে ধরে। আপনি স্টক মার্কেটে ইনভেস্ট করতে চান? আপনার ট্রেডিং একাউন্ট আছে? এতদিন ক্রেডিট কার্ড আর পারসোনাল লোন গছিয়ে দেওয়ার অনুরোধের আসর বসাতেন কম বয়সী যুবক যুবতীরা। বিপন্ন সময়ে এইটাই তাদের চাকরি। এখন সুপারভাইজারের তরফ থেকে নতুন কাজের দায়িত্ব পেয়েছে তারা। মানুষকে শেয়ার বাজারে প্রলুব্ধ করার কাজ। ফাটকাবাজিতে মানুষকে অভ্যস্ত করে তুলতে তারা অবিরাম ফোন করেই চলেছে। আপাতত বিটকয়েন কেনার অনুরোধে কান ঝালাপালা না হলেও  সামাজিক মাধ্যমে তো বটেই এমনকি  টেলিভিশন বিজ্ঞাপনে অসামান্য অভিনয়ে, আকর্ষণীয় ঢঙে হাসিমুখ অনুরোধ করতে দেখা যাচ্ছে সুদর্শন সেলেব্রিটিদের। কিন্তু ডলারের মতো দাপুটে একচেটিয়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা থাকতে এই বিটকেলে বিটকয়েন কেন?

   সালটা ২০০৮। বিশ্বব্যাপী ঘোর অর্থনৈতিক মন্দার সময়। দিনের পর দিন একের পর এক আমেরিকান কর্মী চাকরি হারাচ্ছেন। কাঁচুমাচু মুখে আমেরিকান সংস্থায় মোটা মাইনের কাজ করা ভারতীয়রা তখন ভাবছিলেন, সর্বশক্তিমান ডলার কামানোর দিন এবার বুঝি শেষ। পাত্তালা গুটিয়ে দেশে না ফিরলেই নয়। নামী দামী বহু বহুজাতিক কোম্পানির সর্বস্বান্ত হওয়ার খবর ছাপা হচ্ছে তখন। ১৫ই সেপ্টেম্বর বন্ধ হয়ে গেল বিখ্যাত ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক লেম্যান ব্রাদার্স (Lehman Brothers)। অর্থ ব্যবস্থার এই ধ্বসের কারণ খুঁজতে শুরু করলেন দুঁদে অর্থনীতিবিদরা। তাঁরা বলতে চাইলেন যে ধ্বসের কারণ ও তার ব্যাপ্তির পরিমাণ সঠিক মাত্রায় বোঝা সম্ভবপর হয়ে উঠছে না। সংকট এতই গভীর যে তা বুঝতে নতুন এক হিসাবশাস্ত্রের দরকার হয়ে পড়ছে। এখান থেকেই জন্ম ব্লকচেইন প্রযুক্তির(blockchain technology) । প্রযুক্তিবিদ সাতশি নাকামোতো (Satashi Nakamoto) এই বিটকয়েন ব্লকচেইনের জনক। সেই সময়ে এই প্রযুক্তির কিছু সীমাবদ্ধতা থাকায় পরে ২০১৪ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়েসের টরেন্টোর ভিটালিক বুটারিন (Vitalik Buterin) তুলনামূলকভাবে আরও বড় ও উন্নততর ইথুরিয়াম ব্লকচেইন (Ethurium Blockchain) আবিষ্কার করেন। আমাদের দৈনন্দিন  যেকোনও আর্থিক লেনদেনের মধ্যে ব্যাঙ্ক বা কোনও বেসরকারি সংস্থার হাত থাকেই। ব্যাঙ্ক তো বটেই, সরাসরি ব্যাঙ্ককে এড়িয়ে গেলেও গুগুলপে পেটিএম ইত্যাদির সাহায্য নিতেই হয়। কিন্তু ব্লকচেইন প্রযুক্তির মাধ্যমে এই অর্থপ্রবাহ কোনও দেশ, ব্যাঙ্ক, আন্তর্জাতিক সংগঠন বা কোনও ক্ষমতাবান ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণে থাকে না। লেনদেনের সঙ্গে জড়িত মানুষগুলিই কেবল অংশ নিতে পারে। খুব প্রয়োজনে আমার টাকার দরকার পড়লে বন্ধুর সঙ্গে গোপন লেনদেনে জড়িত ডিজিটাল অর্থের ওপর কোনও ব্যক্তি, ট্রেজারি, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, মার্কিন ফেডেরেল রিসার্ভ এমনকি বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। এই হল বিটকয়েন এবং তার ধারক ও বাহক ব্লকচেন প্রযুক্তির অভূতপূর্ব মহিমা। ফিলিপিন্স, ভেনেজুয়েলা, ভারত কিংবা বাংলাদেশের বেকার যুবকের এতসব অবশ্য না জানলেও চলে। সুপারহিরো মার্কা চেহারায় ভর করে, বুদ্ধি খাটিয়ে ভয়ংকর ভার্চুয়াল শত্রুটাকে মারতে পারলেই বিটকয়েন অর্জন। তা ভাঙিয়েই সত্যিকারের টাকা। সেই টাকা থেকে ঘরে আসবে চাল-ডাল, মায়ের ডায়াবেটিসের ওষুধ, নিজের হাতখরচ যা আবার সেই ভিডিও গেম খেলতেই কাজে লাগবে।

অ্যাক্সি ইনফিনিটি ও জনৈক ফিলিপিনো

ফিলিপিন্সে প্যানডেমিকের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছিল ভয়ানক। বেকারত্বের হার ৪০ শতাংশ ছুঁইছুঁই। তুলনায় মহামন্দার সময় আমেরিকায় এই হার ছিল ২৫ শতাংশ। রুজিরোজগার যখন স্থবির অতএব বিকল্প চাকরির সন্ধানই একমাত্র রাস্তা। ডালা সাজিয়ে হাজির হল অ্যাক্সি ইনফিনিটি ( Axie Infinity) , ডিসেন্ট্রাল্যান্ড (Decentraland), স্যান্ডবক্স, (Sandbox), এনজিন কয়েন (Enjin Coin), গালা(GALA) ইত্যাদি বিভিন্ন মেটাভার্সের দুনিয়া। চূড়ান্ত অভাবের সময় ঘরে  বসেই অর্থ উপার্জনের এমন বিচিত্র উপায়ের যে অদম্য হাতছানি তাকে উপেক্ষা করার মতো অবস্থা বেশিরভাগ ফিলিপিনোদেরই ছিল না। অভাবে পড়ে টাকা দিয়ে তাস খেলা, রেসের মাঠে ঘোড়ার ওপর বাজি রাখা ইত্যাদি বিভিন্ন রাস্তা বেছে অবশেষে সর্বস্বান্ত হয়ে যাওয়া মানুষের কথা সকলেই জানেন। তবু মানুষ সেদিকেই ছুটে যায়। এইবার বুঝি জিত নিশ্চিত। সমস্ত দুঃখ কষ্টের অবসান মোক্ষম এক চালে। জুয়া খেলা মানুষের রক্তে নেই। মায়ের কোলে শিশু যখন পরম সুখে হাত পা ছোঁড়ে সে কি থুড়ি বোঝে জুয়া, ফাটকা এইসবের তীব্র আকর্ষণ! জুয়া, খুন, রাহাজানি, ধর্ষণের নির্দিষ্ট কার্যকারণ থাকে। পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির শিকার হয়েই মানুষ এইসব সিদ্ধান্ত নেয় যেন তা সেই মুহূর্তে নিতান্তই স্বাভাবিক। আপাতত প্যানডেমিক সেই পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি যেখানে মেটাভার্স একটি প্রলুব্ধকর বিকল্প কর্মক্ষেত্র হয়ে ওঠে বিশ্বের বিভিন্ন শ্রেণির বেকার মানুষের কাছে। রেক্স উডবারি (Rex Woodbury) তাঁর ‘ How People in the Philippines Are Making Money in the Metaverse’  নামের প্রবন্ধটিতে লিখছেন,

অ্যাক্সি এনএফটি, দাম ১০০ ডলার

It started with Axie Infinity, a popular blockchain-based game full of digital cartoonish creatures called Axies. Axie Infinity is what’s called a “play-to-earn” game: if you win battles with your Axie, you earn an in-game resource called Small Love Potion. You can exchange Small Love Potion, or SLP, for the cryptocurrency ETH and eventually convert it into real-world dollars.  (1)

ফিলিপিন্সের কাবানাতুয়ান (Cabanatuan) শহরের তরতাজা ছেলে হাওয়ার্ড। প্যানডেমিকের ছোঁয়াচে হাওয়ায় অনেকের মতো সেও বেকার এবং ঘরবন্দী। শুরু হল অ্যাক্সিতে ‘খেলো আউর জিতো’-র নতুন যাত্রা। সারাদিন মোবাইলে ডুবে থেকে, নিত্যনতুন স্ট্র‍্যাটেজি খুঁজে শত্রু নিধন করে সে মাসে প্রায় ৩০০ ডলার আয় করে। জিতলে প্রাপ্তি স্মল লাভ পোসন (Small love potion), তা ভাঙিয়ে ইটিএইচ (ETH) নামের ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং শেষে হাতে-গরম কড়কড়ে ডলারের নোট। প্রযুক্তিগতভাবে পুরো ব্যাপারটাই পরিচালিত হবে ব্লকচেইনে। শুধু হাওয়ার্ডের মতো যুবক নয়, ষাটোর্ধ মানুষও এই খেলায় মেতেছেন। রেক্স উডবারি লিখছেন,

One 75-year-old man plays from 4am to 10pm and says, “This is my only entertainment.” His wife adds, “We’re praying to the Lord that Axie doesn’t go away. It’s how we pay for our medicine.” (2)

এই অ্যাক্সি অন্যান্য সমস্ত ভিডিও গেমের থেকে গুণগত ভাবে আলাদা কারণ এখানে বোনাস পয়েন্ট কিমবা খেলার শেষে লজেন্স প্রাপ্তি নেই। হঠাৎ কোনও ভুল চালে ‘Game Over’ হয়ে খেলোয়াড়কে আবার নতুন করে শুরু করার নির্দেশ দেয় না। এখানে হাওয়ার্ডের জন্য জুয়া খেলার এক ফ্যান্টাসির মুক্তাঞ্চল গড়ে তোলা হয়েছে সুদীর্ঘ এবং সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনায়।  অ্যাক্সি পোকেমনের মতোই একটা কার্টুন চরিত্র। সে লড়াই করে, রক্তবীজের মতো বংশবৃদ্ধি করে খেলোয়াড়ের বুদ্ধির ওপর ভরসা করে। এক একটি অ্যাক্সির দাম প্রায় ১০০ ডলার। খেলায় অংশ নিতে নূন্যতম তিনটি অ্যাক্সি কিনতেই হবে। খেলার শুরুতেই সাকুল্যে ৩০০ ডলার লগ্নি করতেই হবে আরও অনেক বেশি ডলার আয়ের প্রত্যাশায়। এই ৩০০ ডলার অনেক ফিলিপিনোর মাসিক আয়ের সমান। এই অ্যাক্সি আসলে একটি নন- ফাঞ্জিবল টোকেন বা এক কথায় এন.এফ.টি (NFT)। বিটকয়েন অন্য আর একটি বিটকয়েনের থেকে আলাদা নয় যেমন একশ ডলারের নোট পৃথিবীর যে কোনও এটিএম থেকে বেরিয়ে আসুক না কেন সেগুলির মধ্যে মূল্যের কোনও ফারাক নেই। ফারাক নেই বলেই সেগুলির কপি বানানো সম্ভব যার মূল্য একই থাকবে কিন্তু এনএফটির কোনও কপি হয় না। যেমন আমাজন থেকে কোনও বই কিনলে সেই একই বই আমার বন্ধুর কাছেও থাকতে পারে কিন্তু আমার বইটির সঙ্গে কেবল আমার নাম জড়িয়ে আছে, আমার হাতের স্পর্শ রয়েছে তাই সেটি অনন্য। এই এনএফটি ব্যবহার করেও ভিডিও গেম বিপুল জনপ্রিয় কারণ এনএফটির ওপর ব্যক্তিগত মালিকানা রয়েছে এবং ভিন্ন পদ্ধতিতে খেলে সেখানে আয়ের পরিমাণও বেশি এবং সেই সঙ্গে প্রাথমিক বিনিয়োগের খরচাও। তবু মিলিয়ন ডলারে এনএফটির মাধ্যমে প্রচুর ডিজিটাল শিল্পের তুমুল লেনদেন

চলছে মেটাভার্সে। এক অনন্য ডিজিটাল সার্টিফিকেট হিসেবে এনএফটি অন্য আরও মেটাভার্সের অন্যান্য এনএফটির সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে, সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নিজের দাম বহুগুণ বাড়িয়ে নিতে পারে। পুরোনো দিনের সেই মারিও কার্ট গেমের কথা অনেকেরই জানা। মারিও অক্লান্ত পরিশ্রম করে একটার পর একটা বাধা কাটিয়ে লক্ষ্যের দিকে এগিয়েই চলেছে। কিন্তু মারিও যখন নিজেই একটি এনএফটি এবং তাকে হাওয়ার্ড বা স্যাম পিউরিফয় কিনে নেয় তখন তারা নিজেই মারিও। এই মারিও একমেবাদ্বিতীয়ম। যেহেতু মারিও গো-কার্ট ভিডিও গেমের চারণভূমিতে সবচেয়ে দক্ষ, সবচেয়ে দ্রুত তার চলন তাই তারই প্রতিপক্ষ অন্যান্য এনএফটি লুইগি, টোড বা প্রিনসেস পিচের থেকে অনেক এগিয়ে। তাই হাওয়ার্ড বা স্যাম মারিওর মালিক হয়ে প্রচুর কয়েনস আয় করতে পারে। ধরা যেতে পারে এই কয়েনের নাম মারিও কয়েন। জেতার জন্য মারিও কয়েন লুইগি কয়েন বা টোড কয়েনের থেকে বেশি পরিমাণে কিনতে হবে কিন্তু আয়ের সম্ভাবনাও অনেক বেশি কারণ মারিও লুইগি বা টোডের থেকে অনেক বেশি দক্ষ। মেটাভার্সের দুনিয়া থেকে বেরিয়ে হাওয়ার্ডকে বাস্তব জগতে ফিরে আসতেই হয়। কারণ ভার্চুয়াল খাবারে শরীরে পুষ্টি হয় না। কিন্তু ভরসা একটাই। মারিওর মালিক সে। মারিওর জন্যই তার খাবারদাবার জুটছে এই প্যানডেমিক আকালে। মারিও তাকে আবার হাতছানি দেয় বাস্তব জগত ছেড়ে মেটাভার্সে বুঁদ হয়ে আরও বেশি মারিও কয়েন আয়ের উদ্দেশে। বেশ কিছুটা সময় পর হাওয়ার্ডের নিজস্ব মারিওর মেটাভার্সের বাজারে চাহিদা আগের থেকে অনেক বেশি। অসাধারণ খেলেছে এই মারিও। হাওয়ার্ড নিজেও মারিওর প্রচার করেছে এন্তার। এমন মারিও আর দুটি নেই। মেটাভার্সের অ্যাভাটারদের মুখে মুখে মারিওর গুণগান। সকলেই হাওয়ার্ডের মারিও পেতে চায়। এই মারিওর দাম এখন শতগুণ। মারিওকে বেচে দেওয়ার এটাই যথার্থ সময়। এমন এক সুসময়ের আশায় অ্যাক্সির ভরসায় বুক বাঁধছেন হাওয়ার্ড এবং তার মতোই আরও অনেক বেকার যুবক যুবতী। তাদের এই আশাকেই প্রশ্রয় দিচ্ছেন জাকারবার্গ, বিল গেটস, ছোটো বড়ো আরও অনেক পুঁজিপতি। ব্যক্তিগত বিপুল সম্পদ তৈরির জন্য তারা সকলেই একে অপরের প্রতিযোগী এবং একে অপরকে টেক্কা দিতে নিত্য নতুন লাভজনক ভিডিও গেম তৈরি করতে  সকলেই গভীর গবেষণায় নিযুক্ত। গবেষণার উদ্দেশ্য, তাদেরই কুশলি হাতে তৈরি মানবমনের অন্ধকার দিকগুলিকে আরও বিকশিত করে ভিডিও গেমগুলিকে এতটাই প্রলুব্ধকর বানিয়ে ফেলা যা বেঁচে থাকার এক অপরিহার্য অবলম্বন হিসেবে জনপ্রিয় হবে আগামীর প্রজন্মের কাছে। 

‘Into the Metaverse: Where Crypto, Gaming and Capitalism Collide’ প্রবন্ধটিতে বলা হয়েছে,

 Axie — which is at the forefront of this “GameFi” trend — has already generated more than $2.5 billion in trading volume. Several other rivals offering games that lure players with the promise of crypto are also gaining popularity. Venture capitalists and hedge funds are trying to cash in on this new online gold rush in which they predict billions of people will swipe, crush, shoot or kill in the hope of earning digital tokens. (3)

মেটাভার্সের সাম্রাজ্য নেহাৎ ছোট নয়। এক একটি মেটাভার্স বিশেষ বাণিজ্যিক লেনদেনে দক্ষ। যেমন ইদানীং ফ্যাশন হালের একটি বেশ জনপ্রিয় ইন্ডাস্ট্রি। ফ্লিপকার্ট, মিন্ট্রা, স্ন্যাপডিল ইত্যাদি সাইটে হাজারো বিচিত্র ধরনের 

IMVU মেটাভার্সে ভার্চুয়াল ফ্যাশন শো

পোশাক কেনার হিড়িক বর্তমানে কম নয়। ওয়ারড্রোব ভরে গেলেও নতুন একটি পোশাক অনলাইনে কিনে, তা পরে ফেসবুকে চটজলদি তার চমৎকার একটি ছবি পোস্ট করে লাইক এবং কমেন্ট পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা হামেশাই চোখে পড়ে। এই পোশাককে ঘিরে কারবারটি ডিজিটাল হলেও পোশাকটি কিন্তু ডিজিটাল নয়। তার নরম পশম দেহ ছুঁয়ে দেখা যায়। মেটাভার্সের রমরমা এবং ভবিষ্যৎ পৃথিবীর কথা মাথায় রেখে ফ্যাশন ডিসাইনাররাও অগমেন্টেড (Augmented) এবং ভার্চ্যুয়াল রিয়ালিটির সাহায্য নিয়ে এইসব স্পর্শ-যোগ্য পোশাক ছেড়ে আধা-বাস্তব আধা-ডিজিটাল এবং আপাদমস্তক ডিজিটাল পোশাক তৈরিতে হাত পাকাচ্ছেন। তারা জেনেছেন, এই পোশাকের খদ্দেররা সকলেই অ্যাভাটার এবং তারা আপাতত সকলেই ভিডিও গেম খেলতে খুব ব্যস্ত।

২০১৯ সালে লুই ভুইটো ( Louis Vuitton) রায়ট গেমসের (Riot Games) সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে লিগ অফ লেজেন্ডস (League of Legends) ভিডিও গেমের চরিত্রগুলির জন্য পোশাক তৈরি করেছে। সবচেয়ে সাদামাটা পোশাকের  দাম প্রায় ১৭০ ডলার আর লেদার জ্যাকেট কিনতে হলে গুণতে হবে ৫০০০ ডলার। একইভাবে প্রথম সারির ফ্যাশন সংস্থা গুচি (Gucci) অনলাইন গেম প্ল্যাটফর্ম রোব্লক্সের (Roblox) এর সঙ্গে সহযোগিতায় কুইন বি ডাওইনিসাস (Queen Bee Dionysus bag) ব্যাগ প্রায় ৪০০০ ডলারে বিক্রি করেছে। বাস্তবে হাতেনাতে কিনলে কিন্তু দাম অনেকটাই কম পড়ত। (4)

ফ্যাশন সাহিত্য খেলাধুলা সবই যখন ভার্চুয়াল তাহলে শিল্প সাহিত্যই বা বাদ যায় কেন! ডিজিটাল জমি কম দামে কিনে পাঁচগুণ দামে নিলামে বিক্রি করা গেলে ডিজিটাল ছবি নিয়েও একই কাজ করা সম্ভব। এখানে ডিজিটাল ছবির কপিরাইটে সাহায্য করবে সেই একমেবাদ্বিতীয়ম এনএফটি। মিরর (Mirror) নামের একটি ক্রিপ্টো প্রযুক্তি ভিত্তিক প্ল্যাটফর্মের কথা না বললেই নয়। এটি মূলত একটি ডিজিটাল প্রকাশনা। প্রকাশনার সাইটে আগামীর লেখকদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে,

Mirror’s publishing platform revolutionizes the way we express, share and monetize our thoughts.  (5)

 ‘monetize our thoughts’ এই অংশটি প্রণিধানযোগ্য।  সম্প্রতি এই প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করে একজন লেখক ৮৮ হাজার ডলারের আর্থিক সাহায্য পেয়েছেন। এই বিপুল টাকা দিয়ে তিনি চাকরিতে সাময়িক ইস্তফা দিয়ে মূল্যবান ব্যক্তিগত সময় কিনে নিভৃতে উপন্যাসটি লিখে ফেলতে পারবেন। যারা আর্থিক সাহায্য করে লেখককে উপন্যাসটি লিখতে উৎসাহ যুগিয়েছেন তারা আসলে কেউ পাঠক নন, মধ্যবিত্ত বিনিয়োগকারী। বইটি প্রকাশিত হওয়ার পর লেখকের আয়ের অংশীদার হবেন তারা। টোকেন ($NOVEL) কিনে যে সকল মানুষ যে পরিমাণ টাকা লেখককে  পাঠিয়েছেন তার চেয়ে বেশি টাকা ফিরিয়ে আনাই এখানে মূল লক্ষ্য। যে যত বেশি টাকা পাঠিয়েছেন তার সুযোগ সুবিধা ততটাই বেশি। যেমন লেখকের পাণ্ডুলিপির কিছু অংশ নিজের কাছে রেখে দেওয়া বা বিনিয়োগকারী থেকে সরাসরি লেখক হওয়ার শর্টকাট ধরে কীভাবে খ্যাতির চূড়ায় পৌঁছে যাওয়া যায় তার উপদেশ স্বয়ং সেই লেখকের মুখ থেকে শোনার অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ বিনা পয়সায়। লেখক এই নতুন প্রক্রিয়ার শরিক হতে পেরে আপ্লুত হয়ে জানিয়েছেন,

Usually, novelists go to great lengths to fund their own novel-writing process by working other gigs, selling commercial writing, or – in significantly fewer cases – getting an advance from a publishing company. All of these methods have drawbacks, in the forms of limited time or limited creative freedom for the author. On top of that, the process of creating these works of art goes on behind a veil of secrecy, away from the community that will ultimately enjoy the final product. As an author and publisher, I’d like to change all that. This crowdfund will take us one step closer to a better future for writers and readers everywhere. (6)

মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের মধ্যে ফোর হুইলার, হেলথ ড্রিংক,  ডুপ্লেক্স, আইফোন ইত্যাদি বিচিত্র সব পণ্য ঢুকে পড়ে অনেকদিন আগেই মানবিক জায়গাটুকু ধীর প্রক্রিয়ায় নষ্ট হতে হতে পুরোপুরি বস্তুর সঙ্গে বস্তুর সম্পর্কে প্রতিস্থাপিত হয়েছে। এই সকল পণ্যকে এতদিন হাতে ধরা যেত, খারাপ হলে সারিয়ে নেওয়া যেত কিন্তু মেটাভার্সের জগতে পণ্যর চরিত্র একেবারেই আলাদা। এই পণ্যের কোনও নির্দিষ্ট দাম নেই। তাকে দুমড়ে মুচড়ে ভেঙে ফেলা যায় না। আগুনে পুড়িয়ে ফেলা যায় না।  এই নতুন পণ্য, এই নতুন বিনিয়োগ নিয়ে মেটাভার্সের ইকোনমিকে পুঁজিবাদের নতুন এবং এক বিচিত্র কাঠামোয় দাঁড় করাতে একনিষ্ঠ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন জাকারবার্গ বিল গেটসরা। চার্লি ওয়েলসের (Charlie Wells) কথায়,

Games like Axie show why tech titans are gravitating toward the concept: The metaverse and its possibilities have the potential to upend not just how we work, earn and spend, but also the fundamental ways in which we live, plan and run our lives. In essence, they promise to transform the way capitalism functions. (7)

 অ্যাক্সি ইনফিনিটি হোক বা মিরর, মেটাভার্সের এই দুনিয়ায় খেলোয়াড়, ফ্যাশন ডিসাইনার, শ্রমিক, শিল্পি, সাহিত্যিক সকলের রয়েছে একটি সাধারণ পরিচয়। এই নতুন কর্মক্ষেত্রে তারা টাকা ঢালছেন  আরও কিছু বেশি টাকার আশায়। পুঁজিবাদের নতুন কাঠামোর ভিতর আটকে পড়া আবালবৃদ্ধবনিতা সকলেই এখানে বিনিয়োগকারী।  

তথ্যসূত্র :

  1. https://digitalnative.substack.com/p/how-people-in-the-philippines-are
  2. Ibid
  3. https://www.bloomberg.com/news/features/2021-10-30/what-is-the-metaverse-where-crypto-nft-capitalism-collide-in-games-like-axie
  4. https://www-rollingstone-com.cdn.ampproject.org/v/s/www.rollingstone.com/culture-council/articles/fashion-is-moving-into-the-metaverse-heres-what-to-expect-1274264/amp/?
  5. https://mirror.xyz/
  6. https://digitalnative.substack.com/p/how-people-in-the-philippines-are
  7. https://www.bloomberg.com/news/features/2021-10-30/what-is-the-metaverse-where-crypto-nft-capitalism-collide-in-games-like-axie

আগের পর্বগুলি

হোমো ভার্চুয়ালিস: পর্ব ২

হোমো ভার্চুয়ালিস

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top