শঙ্খদীপ ভট্টাচার্য
(একবিংশ শতাব্দীতে প্রযুক্তির চরম বিকাশের যুগে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও নবতম সংযোজন হলো মেটাভার্স। এই বিষয়টি নানান দিক দিয়ে বিশদে আলোচনার দাবি রাখে, যা আজকের দিনে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও প্রাসঙ্গিক। তাই এই সুদীর্ঘ লেখাটি কয়েকটি পর্বে ধারাবাহিকভাবে পরিপ্রশ্নের ওয়েব ম্যাগাজিনে প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল পরিপ্রশ্ন পত্রিকার সম্পাদক মন্ডলী পাঠক ও শুভ্যানুধায়ীদের সহৃদয় সহযোগিতার প্রত্যাশায়। আগের পর্বের ধারাবাহিকতায় প্রকাশিত হলো পঞ্চম তথা শেষ পর্ব। লেখার শেষে আগের চারটি পর্বের লিঙ্ক দেওয়া আছে, আগ্রহীরা আগের পর্বগুলোও পড়ে নিতে পারেন)।
মেটানমিক্স – অ্যাভাটার অথবা নিছক উদীয়মান নব্য দাস ক্যাপিটালিস্ট
রেক্স উডবারি লিখেছেন,
The first era of the web about was about how we interact with information. Google “won” this era. The second era was about how we interact with each other, giving us Facebook. Web3 is about how we interact with value. This era will redefine how we create and capture economics online. An early proof-point of the shift to Web3 ethos is everyone becoming an investor. (1)
ওয়েব ১ থেকে ওয়েব ৩, গুগল থেকে ফেসবুক, ফেসবুকের জমজমাট সময় পার করে হালের মেটাভার্স আগাগোড়াই প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে তৈরি হওয়া ম্যামথ এক তথ্য সাম্রাজ্য। এই সাম্রাজ্যের আনাচকানাচে চিরুনি তল্লাশি চালিয়েও কারখানায় উৎপাদন করে প্রস্তুত কোনও স্পর্শযোগ্য বস্তুর ছিঁটেফোঁটাও পাওয়া যাবে না। গুগল সার্চ বক্সে আমাদের অনুসন্ধানের বিষয়, ফেসবুকের নিজের হালহকিকত জানিয়ে দেওয়া লম্বাচওড়া পোস্ট বা মেটাভার্সের ছটফটে কার্টুন অ্যাক্সি, এই সব তথ্যেরই নানান রূপ। পুরোনো দিনের ভারী শিল্পের উৎপাদনের পরিবেশ ছাড়াই দিনের পর দিন উবার, আমাজন, ফেসবুকের রেভেনিউয়ের গ্রাফ সতত ওপরের দিকে। উৎপাদন-ভিত্তিক অর্থনীতি থেকে বাজার কেন্দ্রিক অর্থনীতির দিকে ঝুঁকে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই জ্ঞানের বিকাশও ঘটেছে বাজারকে ঘিরেই। প্রযুক্তির ওপর জ্ঞান, সস্তা-সহজলভ্য-লুণ্ঠনযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর জ্ঞান, মানুষকে নতুন কোনও পণ্যের দিকে আকৃষ্ট করে রাখতে হালের মানব মনস্তত্ত্বের ওপর জ্ঞান। অর্থনৈতিক সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসতে আস্ত একটা ভার্চুয়াল জগত উদ্ভাবন করে মানুষকে বিনিয়োগ করতে প্রলুব্ধ করার জন্যেও দরকার হয় নিবিড় জ্ঞানের। তাত্ত্বিক দিক থেকে দেখলে এই অর্থনীতি তাই জ্ঞান অর্থনীতি (knowledge economy) ।
তথ্য প্রযুক্তি সংস্থায় চাকরি বাগিয়ে নিতে যে বায়োডেটা তৈরি করতে হয় তাতে প্রার্থী বিভিন্ন সফটওয়্যারের ওপর নিজের জ্ঞানের কথা লিখেই ভরিয়ে তোলেন। সেটাই তার কর্ম সংস্থানের ছাড়পত্র। সংস্থাটিকেও বাজারে টিকে থাকতে নিত্য নতুন তথ্য জানতে হয়। গুগলকে প্রতিযোগিতায় পিছনে ফেলে দিতে মাইক্রোসফটকে, মাইক্রোসফটকে পেছনে ফেলে দিতে ফেসবুককেও ওয়াকিবহাল থাকতেই হয় প্রযুক্তির আটঘাট সম্পর্কে। আগামীর নতুন প্রযুক্তি, সেই প্রযুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় খনিজ দ্রব্য, সেই খনিজ দ্রব্য কোন দেশের মাটির নিচে লুকিয়ে, সেই খনিজ হস্তগত করতে সেই দেশের সঙ্গে অপরিহার্য ভূ-রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং নতুন তথ্য-পণ্যে বাজার ছয়লাপ করতে মানুষের ওপর প্রয়োজনীয় নজরদারি, অনলাইন বিজ্ঞাপনের ভাষা ইত্যাদি এই সকল জ্ঞান আয়ত্ত করতে পুঁজিপতিরা দিনরাত পরিশ্রম করছেন, মোটা মাইনে দিয়ে পুষে রেখেছেন বিশেষজ্ঞদের। ঠিক এইভাবেই, একই যুক্তিতে প্রতিযোগীদের পেছনে ফেলে দিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ব্লকচেন প্রযুক্তির মিশেলে কীভাবে ব্যবসাকে আরও ছড়িয়ে দিতে হয় তা গভীরে জেনে বুঝে নিতে হয় মেটাভার্স ডেভেলপারদের। শুধু মেটাভার্সের অন্তর্গত হায়ারার্কির ওপরের
সারির মানুষ নয়, খেলোয়াড়দেরও সারাটাদিনই ব্যস্ত থাকতে হয় সকল রকম মেটাভার্স সংক্রান্ত তথ্যের খোঁজ খবর হাতের মুঠোয় রেখে। যত বেশি জ্ঞান লাভের অংকও ততটাই বেশি। জ্ঞান অর্থনীতির এই কাঠামোয় যে শ্রম প্রক্রিয়াটি দিনে দিনে আরও বেশি মজবুত হয়ে উঠছে তার সঙ্গে দূরদূরান্ত অব্দি প্রকৃতির কোনও সম্পর্ক নেই কারণ এখানে উৎপাদন নেই। উৎপাদন এখন উদ্বৃত্ত। ডিজিটাল বাজারে এখন হাজারো রকমের সানগ্লাস, খাবার দাবার, টুথপেষ্ট, অন্তর্বাস। ফলত পুঁজিবাদের কাঠামোটিকে আবার অদলবদল করে সাজিয়ে নেওয়া এমনই ভাবে যাতে শোষণ প্রক্রিয়াটি
হয়ে উঠবে আরও বেশি অমানবিক অথচ মানুষের মনে হবে ‘ফেলো কড়ি মাখো তেল’ পদ্ধতিটি নিছকই জীবনদায়ক এক তুমুল খেলা, যুগের সহজ স্বাভাবিক জীবন-দর্শন।
রেক্স উডবারির কথায়,
What’s fascinating about play-to-earn games is how they foreshadow future labor structures—structures that will become more common in an increasingly-digital, borderless economy. (2)
আদৌ প্রয়োজন আছে কিনা সে ব্যাপারে মাথা না খাটিয়ে হুজুগে পড়ে দেদার জিনিসপত্র কিনে, খেয়ে, পরে শেষমেশ গাড়ি কেনার বা ইকো ফ্রেইন্ডলি থ্রি বিএইচকে কেনার জন্য দরকারি সঞ্চয়ে খামতি হলে হোম লোন, পারসোনাল লোন দেওয়ার ব্যবস্থাও করে দেয় ব্যাঙ্ক। আগামীর ক্রয় ক্ষমতাকে মাউসের কয়েকটা মাত্র ক্লিকে এখনই ক্রেতার হাতের কাছে পৌঁছে দিতে রয়েছে সুদর্শন ক্রেডিট কার্ড। কিন্তু মানুষের এই জৈবিক চাহিদা কাহাতক ডানা মেলতে পারে। কাহাতক পুঁজিবাদ লোন আর অবিরত ক্রেডিট কার্ড দেওয়ার জন্য মানুষকে প্রলুব্ধ করতে পারে। একটি গাড়ি বা একটি বাড়ি, একটি স্মার্ট ফোন কিনে ফেলার পর ক্রেতা নিশ্চিন্ত হলেও পুঁজিবাদ কীভাবে নিশ্চিন্ত হতে পারে। ডিজিটাল বাজারে রিয়ালাইজেশনের গতিবেগ শ্লথ হওয়া মানেই বাজার থেকে সেই পুঁজিপতির বিদায়। এই সব আঁচ করেই জটিল অঙ্ক কষে বর্তমানের সঞ্জীবনী অবলম্বন মেটাভার্সে গাড়ি, বাড়ি, জমি, অন্তর্বাস, কারণ সেখানে সবই ভার্চুয়াল। একটার বেশি দুটো কিনলে মাথাব্যথা নেই, আলমারি ভরে যাবার ভয় নেই, ইনকাম ট্যাক্সের ঝামেলা নেই বরং ভবিষ্যতে আয়ের জন্য এইসবই আদর্শ বিনিয়োগ। কিন্তু কেনার সামর্থ্য নাও থাকতে পারে অনেক মানুষের। সকলেই সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার বা ব্যাঙ্ক ম্যানেজার নন। আলোর গতিতে যাতে এই খেলা আর বিনিয়োগ চলতে পারে , ব্যক্তিগত আর্থিক সমস্যা যাতে পুঁজির প্রবাহে বাধা না হয় তার সমাধানও এই অর্থনীতির ভিতরেই থাকতে হবে। সমাধান নিয়ে হাজির ইল্ড গিল্ড গেমস (Yield Guild Games ) বা ওয়াইজিসি ( YGC)।

এনএফটি, ক্রিপ্টোকারেন্সি ইত্যাদির ব্যক্তিগত মালিকানা এই ওয়াইজিসির মালিকের। তার অধীনে থাকবে কিছু মিডলম্যান। ভালো নাম কমিউনিটি ম্যানেজার। তারাই লিজে (lease) খেলোয়াড়দের অ্যাক্সি দেবেন। জেতার পর আয়ের ৭০ ভাগ খেলোয়াড়ের, ২০ ভাগ কমিউনিটি ম্যানেজারের আর ১০ ভাগ থাকবে ওয়াইজিসির জিম্মায়।
অ্যাক্সি ইনফিনিটির ভিতর এমন একটি কাঠামোর বর্তমান নাম অ্যাক্সি ইউনিভার্সিটি এবং তাদের এই প্রক্রিয়াটি ‘স্কলারশিপ মডেল’ নামে ভীষণ জনপ্রিয়। যদিও এখানে কোয়ান্টাম মেকানিক্স বা হারমোনিক অ্যানালিসিসের ওপর গভীরে পড়াশোনার কোনও সুযোগ নেই। ইউনিভার্সিটি এবং স্কলারশিপ শব্দদুটির অভিঘাত এখানে বিনিয়োগ করে ‘খেলো আউর জিতো’ কে ঘিরেই। এই নতুন কাঠামো সম্পর্কে ওয়াইজিসির বক্তব্য,
Currently, we are in the alpha stage of our automated “scholarship program”, leasing out Axies to players who want to get started playing Axie Infinity. YGG recruits existing members of the community as our “scholarship managers”, who recruit and train our Axie “scholars” or players that are leasing Axies from the guild. Each manager recruits players from their respective sub-communities, trains them in how to win games in Axie Infinity, and starts them on the road of earning SLP for their families. (3)
যেকোনও পুঁজিপতি নিজের পুঁজি বাড়িয়ে তোলার প্রক্রিয়ায় বিপুল সংখ্যক মানুষদের উদ্দীপিত করতে মধুর বচনে সকলের ভিতর পর্যন্ত নাড়িয়ে দেন। ওয়াইজিসির কর্ণধার গ্যাবি ডিজো (Gabby Dizon) সেই কাজটিই করেছেন মেটাভার্সের কৃত্রিম আলোয়। তার কথায় কমিউনিটি ম্যানেজার হোক বা খেলোয়াড় কেউই এখানে কর্মচারী নন। সকলেই অন্ত্রুপ্রুনেও (entrepreneur)।
স্যাম পিউরিফয়ের মতো অনেক যুবকই প্রথমে খেলোয়াড় হিসেবেই পথ হাঁটতে শুরু করেছিল মেটাভার্সের ফ্যান্টাসি দুনিয়ায়। অবিরাম ভিডিও গেম খেলে এখন তাদের সঞ্চয়ের পরিমাণ এতটাই বেড়ে গিয়েছে, যে তারা নিজেরাই এখন মস্ত বড়ো পুঁজিপতি। এই প্রসঙ্গে চার্লি ওয়েলস বলছেন,
In this new world order, Peurifoy is a bit like a banker. He’s created his digital Guild built around his online persona, literally called Das Kapitalist. Members of this Guild meet on Twitch, a sort of YouTube for video games with live streams and chat functionality. (4)
আমেরিকার স্যাম পিউরিফয় বা ফিলিপিন্সের হাওয়ার্ড, মেটাভার্সে জড়িয়ে পড়ার আগে এদের জীবন ঠিক কেমন ছিল? ছোটবেলায় তাদের নাগালের মধ্যেই ছিল মোবাইল, ল্যাপটপ। যখন তখন সেগুলো হাতে নিয়ে যা খুশি তাই দেখা যায়, যা খুশি তাই করা যায়। সেগুলিতে মজুত হাজারো ভিডিও গেম। কিছুটা সময়ের জন্য হলেও গেম না খেললে তাদের ঘুম আসত না। ক্রমশ গেম খেলার নেশা এমনই পেয়ে বসে যে বরাবরই সেই দুনিয়ায় হারিয়ে যেতে তাদের মন আনচান করে উঠত। হারিয়েও যেত তারা। তাছাড়াও এই কাজে ইন্ধন যোগানোর জন্য রয়েছে অতিলৌকিক কান্ডকারখানায় ভরা সিনেমার পসরা। ভিডিও গেমকে আরও বেশি করে জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলার নিখুঁত অনুঘটক। দুজনেই তাড়িয়ে তাড়িয়ে দেখেছে সুপারহিরোদের। স্পাইডার ম্যান, সুপারম্যান, আয়রন ম্যান, ক্যাপ্টেন আমেরিকা। তারা উড়ে বেড়ায়, গায়ে হাত না দিয়েই কেবল মনের জোরে চুরমার করতে পারে দশাসই ইমারত। অলৌকিক ক্ষমতাবান অশুভ প্রাণীদেরকে তুড়ি মেরে কী নাজেহালই না করে। ছোটবেলা থেকেই তাদের আকাঙ্ক্ষাকে ভীষণরকম প্রভাবিত করেছে ক্যাপ্টেন আমেরিকা ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। তারা সুপারহিরোর মতোই হতে চাইত কিন্তু বাস্তব পৃথিবী এবং বিজ্ঞান তাদের কিছুতেই এইসব অপার্থিব কান্ডকারখানায় সায় দেয় না। এমন একটা সময়ে তাদের সামনে অতিলৌকিকতার ভান্ডার নিয়ে হাজির হয় মেটাভার্স। তারা সিনেমায় ইতিমধ্যেই দেখেছে মাল্টিভার্স, প্যারালাল ইউনিভার্স, ব্ল্যাক হোল, ওয়ার্ম হোল, অতিলৌকিক চেহারার এলিয়েনের দল। নিরন্তর এইসবে মনোযোগ দিয়ে বাস্তব জগতকে তাদের মনে হত নিতান্তই সাদামাটা, ম্যাড়ম্যাড়ে । সেখানে রোমাঞ্চ নেই, রোমহষর্ক ঘটনা নেই কিন্তু মেটাভার্সে যা ঘটছে বা ঘটতে পারে তাকে আয়ত্ত করাও দারুণ রকমের এক রোমাঞ্চকর ব্যাপার। এমন অনুভব তো আগে হয়নি। হেডসেট পরলেই অসীম ক্ষমতা, খুলে ফেললেই তারা আর পাঁচটা মানুষের মতোই সাধারণ। পরিবারে, রাস্তাঘাটে সমস্ত জায়গায় মানুষের দুঃখ-কষ্ট, ঝগড়াঝাটি, সস্তা রাজনীতির কারবার বোঝার বয়েস তাদের হয়েছে। সেসবে বিরক্ত হয়ে, সেসব ভুলতে আবার তারা হেডসেট পরে নেয়। প্যানডেমিকের জন্য এখন তাদের স্কুলেও যেতে হয় না। পোড়াশোনাও এখন অনলাইন। স্কুল খুললেও তাদের স্কুলে যাওয়ার মানসিকতাও তারা হারিয়ে ফেলেছে। অনলাইন ব্যবসার কর্ণধাররা এখানেই সফল। তাদের ব্যবসায় ঘাটতি হবে না। এই ফাঁদে পড়ে পিউরিফয়, হাওয়ার্ডরা বুঝতেই পারে না যে তাদের মস্তিষ্ক ক্রমশ এমনভাবেই বদলে দেওয়া হচ্ছে যে আজকাল ল্যাপটপ বা মোবাইলের সাময়িক বিচ্যুতিও তারা বরদাস্ত করতে পারছে না। তাদের হাত অজান্তেই খুঁজে বেড়াচ্ছে মোবাইলের আয়তঘন আরাম, ল্যাপটপের ভিতর ফ্যান্টাসির দুনিয়া। মেটাভার্সে এইসব তো আছেই, উপরি পাওনা হিসেবে রয়েছে মিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আয়ের বিপুল সুযোগ। পছন্দসই অ্যাভাটার সেজে সুপারহিরোর জীবন যাপন এবং হেডসেট পরে অশুভ প্রাণীদের মেরে ফেলার বাস্তব-বাস্তব রোমাঞ্চ। নিজের খেয়াল খুশি মতোই এইসব অশুভ প্রাণীদের বানিয়ে নেওয়া যেতে পারে। অ্যাভাটার ইহুদি হলে অশুভ প্রাণীটি ফিলিস্তিনি, হিন্দু হলে মুসলমান, সাদা চামড়ার সুপারহিরো টারগেট করবে কালো চামড়ার মানুষকে। এখানে কোনও নজরদারি নেই। যে কেউ যাকে ইচ্ছা মেরে ফেলতে পারে। এই মারাত্মক ইচ্ছেটুকু ‘ম্যানুফ্যাকচার’ করতে পারলেই কেল্লা ফতে।

মোদ্দা কথা, ভবিষ্যত প্রজন্মকে এই অভূতপূর্ব বিনোদন, বন্যতম ফ্যান্টাসি আর আশ্চর্য ক্রিপ্টো কয়েন আয়ের কম্বো প্যাকেজের হাতছানি থেকে দূরে সরিয়ে রাখা বেশ কঠিন। কারণ রসায়ন, পদার্থবিদ্যা বা সাহিত্য-শিল্প নিয়ে উচ্চ শিক্ষার জগতে প্রবেশ করার আকাঙ্ক্ষা যে সকল মনে স্বাভাবিক ভাবেই জন্মাতো স্যাম পিউরিফয়ের মতো ছেলেরা সেই মন ইতিমধ্যেই হারিয়ে ফেলেছে। যেটুকু বেঁচেবর্তে রয়েছে তাও সমূলে বিনাশ করতে উঠেপড়ে লেগেছে জাকারবার্গ বিল গেটসের মতো মানুষেরা। ক্রিপ্টোকারেন্সি আর মেটাভার্স যেহেতু তাদের চর্চার বিষয় তারা চায় গোটা বিশ্বও এই চর্চায় মেতে উঠুক। বাইজুস, আনএকাডেমি ইত্যাদি শিক্ষামূলক অ্যাপ ইতিমধ্যেই জাকারবার্গের নজর কেড়েছে। মেটাভার্সের সঙ্গে সেগুলি জুড়ে দিয়ে ভাঙাচোরা শিক্ষা-ব্যবস্থার কফিনে শেষ পেরেকটি তারাই গেঁথে দেবেন হাসিমুখে। ভারতের নতুন সংস্থা মেটাস্পেসের ( metaspace) কিউরেটর বিবিন বাবুর (Bibin Babu) গলাতেও চরম পুঁজিবাদী সুর। জাকারবার্গের গালভরা বক্তব্যে তিনিও অনুপ্রাণিত। তার বিশ্বাস ২০২৪-র ভারতে মেটাভার্সের বাজার মূল্য দাঁড়াবে ৮০০ বিলিয়ন ডলার। এই লক্ষ্যে পৌঁছাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যে খেসারতই দিতে হোক না কেন তা মেটানমিক্সের (metaverse economics) বিচার্য বিষয় নয়। অথচ তাদের সকলের কথা শুনলে সাধারণ মানুষের মনে হবে বিচ্ছিরি রকমের সম্পত্তির অধিকারী এই পুঁজিপতিরাই আগামীর মসিহা। গোটা অর্থনীতির ধারক-বাহক। তারাই তো গোটা সমাজটাকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। তারাই রক্তমাংসের সুপারহিরো। জাকারবার্গ, বিল গেটসের মধুর বচনে কিন্তু কখনোই প্রকাশ পাবে না যে ক্রিপ্টোকারেন্সির দাম ভয়ংকর ভাবে ওঠানামা করে। আজ যে কয়েনের দাম কয়েক লাখ, কাল তা শূন্য হতে পারে নিমেষে। (5) তারা কখনোই বলবেন না,
video games are the “paradigmatic media of Empire”—a totalizing regime of “planetary, militarized hypercapitalism.” (6)
তারা পুঁজিবাদের অমানবিক, অপ্রাকৃতিক দিকগুলোকে কখনই সামনে আনবেন না। ভিডিও গেমে আসক্ত স্যাম, হাওয়ার্ডের মতো কোটি কোটি ছেলে মেয়েদের সাবধান করে কোনদিনই বলবেন না,
The Metaverse Blockchain (hereinafter referred to as “Chain Tour”) can be “really earned” under the propaganda of certain businesses, and the monthly income is more than 100%. The industry believes that such games not only hide a Ponzi scheme, but because they have to pay with virtual currency, they may themselves be suspected of illegal fund-raising or financial fraud. (7)
চোখে ঠুলি পরলে বাস্তবে ঘটে যাওয়া ঘটনার নেপথ্যে প্রকৃত সত্য আর দেখা যায় না। অন্যদিকে হেডসেট পরলে চোখের সামনে খুলে যায় ত্রিমাত্রিক অর্থে বিমূর্ত এবং অবাস্তব এক জগত। বাস্তুতন্ত্রকে কলা দেখিয়ে যেখানে মরুভূমিতে তুষারপাত হয়। শিশুর হাত ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে মাকড়শার জাল। প্রতিযোগীকে খুন করে দু পয়সা কামিয়ে নেওয়া যায় খেলাচ্ছলে। হেডসেট নামের এই অভূতপূর্ব মহার্ঘ্য ঠুলি আজকাল অনলাইন কিনতে পাওয়া যায়।
তথ্যসূত্র :
- https://digitalnative.substack.com/p/how-people-in-the-philippines-are
- Ibid
- Ibid
- https://www.bloomberg.com/news/features/2021-10-30/what-is-the-metaverse-where-crypto-nft-capitalism-collide-in-games-like-axie
- https://menglish.sakshi.com/news/technology/india-set-drive-800-billion-metaverse-boom-149837
- https://www-newyorker-com.cdn.ampproject.org/v/s/www.newyorker.com/news/letter-from-silicon-valley/money-in-the-metaverse
- https://min.news/en/tech/2859c6929eef736574bd358b3d6ce3d3.html
আগের পর্বগুলি