তারাশঙ্কর ভট্টাচার্য
চাষি কি সত্যিই শ্রমদাসে পরিণত হতে চলেছে ?
মোটামুটি১২ হাজার বছর আগে চাষবাসের মাধ্যমে মানুষের প্রথম উৎপাদনে হাতে-খড়ি। এই কৃষি উৎপাদনের মধ্যে দিয়েই শোষণ-বঞ্চনার শুরু। ভারতে ব্রিটিশ শাসনের আগে কৃষিজমির মালিকানা চাষিদের দখলে ছিল না, কৃষিব্যবস্থা সামন্তশক্তি বা রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রনে ছিল। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কল্যাণে একসময় যন্ত্রপাতির আবিষ্কার হয়, চাষের শিক্ষা ও উৎপাদন পদ্ধতির উন্নতি ঘটে। প্রযুক্তির প্রয়োগের ফলে উৎপাদনের পরিমাণ দ্রুত বেড়ে যায়। আর ফসলের মূল্যও আনুপাতিক হারে পড়ে যেতে থাকে। এখন এই কৃষিব্যবস্থা, রাষ্ট্রীয় নাগপাশের সাথে সাথে কর্পোরেট অর্থনীতির নিয়ন্ত্রনে চলে এল। বাজার অর্থনীতিতে চালু ব্যষ্টিক মৌল -অর্থনীতি ( Micro-Economics ) এতদিন ব্যক্তির উপযোগের মাধ্যমে পণ্য ও সেবার বিনিময় ঘটিয়ে সমাজের সামষ্টিক অর্থনীতিকে ( Macro-Econonomics) জোরদার করে এসেছে । তারই ফলশ্রুতিতে স্কুলছুট আটকাতে মিড-ডে-মিল দেওয়া , রেশন বন্টন , নারেগা প্রকল্প চালু করা, কৃষি সহ বিভিন্ন খাতে ভাতা-প্রদান ইত্যাদির মাধ্যমে শ্রমশক্তির উৎকর্ষ বৃদ্ধিতে নিয়োজিত ছিল । সরকার বেশী দামে ফসল কিনে মূল্য ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে গেছে । অন্যদিকে কর্পোরেটরা একচেটিয়া মূল্য অর্জন করতে সক্ষম হচ্ছিল না । এতদিন কৃষিতে যন্ত্রপাতি বীজ-সার, ট্রক্টর , হার্ভেস্টিং মেসিন , জলের পাম্প এসব বিক্রি করার মাধ্যমে কর্পোরেটকুল নিজেদের পুঁজির বৃদ্ধি ঘটাচ্ছিল । এবার সরাসরি চুক্তিচাষের মাধ্যমে ফসলের মূল্য নিয়ন্ত্রন ও রপ্তানি-বাণিজ্য নিজেদের দখলে পেয়ে গেল । এই কাজ অরো গতি পাবে গ্লোবাল ভ্যালু চেন সিস্টেমের হাত ধরে। চাষির সাথে জমির মালিকানা সম্পর্ক ধীরে ধীরে অবলুপ্ত হবে। কৃষিব্যবস্থা একচেটিয়া পুঁজির অধীনস্থ হওয়ার ফলে ভারতের চাষি একসময় স্বাধীন সত্তা হারিয়ে শ্রমদাসে পরিণত হবে এবং গোটা দেশের জল-জমি-জঙ্গল কর্পোরেটের হাতে চলে যাবে।
এই বন্টনশৃঙ্খল নীতির (Distribution Chain) ফলে একচেটিয়া বিশ্ব-পুঁজির মূল্যশৃঙ্খল (Value Chain ) পরিসর পাচ্ছিল না । ভ্যালু-চেন-সিস্টেম অবাধ বাণিজ্য নীতির মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশের বাজারে শ্রমশক্তিকে ও প্রাকৃতিক সম্পদকে লুণ্ঠন করে বাজার-অর্থনীতিকে বিকশিত করতে চায় । সাম্প্রতিক কৃষি আইন সংস্কারের কাজটি ডিস্ট্রিবিউশান চেনকে ভেঙে ভ্যালু চেনকে পরিসর দেওয়ার জন্যেই নির্মিত । সেই আলোচনাতেই আসব ।
তিনটি আইনের মাধ্যমে সংস্কার যা আনা হল
১) আনাজ বা সব্জির দাম বা মুল্য নির্ধারণ (ফারমার্স প্রোডিউস ট্রেড অ্যান্ড কমার্স (প্রোমোশন অ্যান্ড ফেসিলিটেশন আইন ২০২০) :-
বলা হচ্ছে এই আইনের ফলে বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে চাষিরা চুক্তির মানদণ্ড ঠিক করতে পারবেন এবং ফসলের ঠিকমতো দাম পাবেন। কিন্তু বৃহৎ পুঁজির বাজার-অর্থনীতির দাপটে ৮৬ শতাংশ দরিদ্র চাষি কতখানি আইনি সুরক্ষা পাবেন বা ফসলের দাম পাবেন তা বলা মুস্কিল । কেননা চুক্তিচাষের ক্ষেত্রে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের কোন ভূমিকা নেই । সরকার খাদ্যশস্য মজুত করা বন্ধ করলে রেশনের মাধ্যমে খাদ্যবণ্টন ব্যবস্থাও বন্ধ হয়ে যাবে । অন্যদিকে সহায়ক মূল্য ছাড়াই চাষি হয়তো দাম পাবে । ধরা যাক , চাষি প্রতি ফুলকপি বাজারে বেচে ২৫ টাকা পেল। কিন্তু যখন ডাল কিনতে গেল তখন দেখল কেজি পিছু তা ৫০ টাকা বেড়ে গেছে । সেজন্যে কৃষির এই বাজারীকরণে চাষির কোন লাভ হতে পারে না ।
২) ফারমার্স (এমপাওয়ারমেন্ট অ্যান্ড প্রটেকশন) এগ্রিমেন্ট অব প্রাইস অ্যাসিওরান্স অ্যান্ড ফার্ম সার্ভিসেস আইন, ২০২০:
এককথায় এর মানে “চুক্তি চাষ”। এই চুক্তিচাষ হবে দেশি-বিদেশি বিগ-কর্পোরেট জিও-মার্ট, আমাজন , রিলায়েন্স রিটেল , আদানি উইলমার , লেইজ , ওয়ালমার্টের ফ্লিপকার্টদের সাথে । এক্ষেত্রে যেহেতু বিপনন বাজারের উপর নির্ভরশীল এবং মূলত চুক্তিনির্ভর সেহেতু সহায়কমূল্যের নিশ্চয়তার প্রশ্ন ওঠে না ।
৩) এসেন্সিয়াল কমোডিটি ( এমেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট (নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সম্পর্কিত আইন ( ECA-1955) সংশোধন ২০২০:-
স্বাধীনতার পর চাল, ডাল, আলু, পিঁয়াজ, তেল,তৈলবীজ ইত্যাদির মজুতদারি বন্ধ করে ফসলের ফাটকাবাজারি আটকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নয়া আইনে বেসরকারি সংস্থাগুলিকে যত ইচ্ছে খাদ্যশস্য মজুত করার সুযোগ করে দেওয়ার ফলে কালোবাজারি, লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি ও কৃত্রিম খাদ্যাভাব তৈরি হবে দেশে। এখন বৃহৎ পুঁজির স্বার্থে মজুতদারির সীমা তুলে দেওয়ায় কৃষিতে রপ্তানি আরো বাড়বে ঠিকই , কিন্তু মূল্য-নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সরাসরি বাজার-অর্থনীতির অধীনে চলে যাবে ।
কৃষি উৎপাদনকে দুটো ভাগে ভাগ করা হয়েছে:-
১) শস্য যা নন-পেরিশেবল যেমন, চাল- ডাল- তৈলবীজের সহায়কমূল্য ৫০ শতাংশ ২) শষ্য যা পেরিশেবল যেমন আলু শাকসব্জী এর সহায়কমূল্য ১০০ শতাংশ।
এই আইনি কাঠামোয় , কৃষিপণ্য পরিবহন করা যাবে অন্তরাজ্য ও আন্তরাজ্য বিনা শুল্কে । শুধু e-NAM বা APMC এর মাধ্যমেই নয়, খোলাবাজারে ইলেকট্রনিক অনলাইন মাধ্যমে কেনাবেচার পদ্ধতিকে অনুমতি দেওয়া হল । নতুন ব্যবস্থায় চুক্তিচাষের মাধ্যমে বৃহৎ পুঁজির খোলা বাজারে চাষিরা ফসল বেচতে পারবে ।
২০১৫-য় মোদী সরকার নিযুক্ত শান্তা কুমার কমিটি সুপারিশ করেছিল- মাত্র ৬ শতাংশ চাষি এমএসপি-র সুবিধা পান, কাজেই তা তুলে দেওয়া হোক। এফসিআই ও নাফেড-এর মাধ্যমে ফসল কেনা বন্ধ হোক। রেশনে খাদ্যবণ্টন বন্ধ হোক। তিনটি আইনে শান্তা কুমার কমিটির সুপারিশই রূপায়ণ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার।
স্বাধীনোত্তর ভারতে কৃষিব্যবস্থা
১৯৫১ সালে জমিদারি প্রথা আইন করে তুলে দেওয়া হয় এবং কৃষিকে সরাসরি রাজ্যের নিয়ন্ত্রনে আনা হয় ।
খাদ্যবস্তুর দামের ফাটকাবাজারী ও মজুতদারি রুখতে সরকার ১৯৫৫ সালে “এসেনসিয়াল কমোডিটিজ এক্ট” লাগু করে । ফলে মজুতদারি ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রন হয় ।
১৯৬০ সালে আমেরিকার সাথে PL480 চুক্তি মোতাবেক দানাশষ্য আমদানি করা হত । নানা শর্তে ভারত-সরকারকে এই খাদ্য আমদানি করতে হত । পিএল ৪৮০ কৃষিনির্ভর ভারতের খাদ্যসঙ্কটকে মোকাবিলা করতে পারেনি । সত্তরের দশকে ভারতে তথাকথিত “সবুজ-বিপ্লব” ঘটে পাঞ্জাব-হরিয়ানা-মহারাষ্ট্র সহ বিভিন্ন রাজ্যের হাত ধরে। উৎপাদনে দেশীয় জৈবসার প্রয়োগ বন্ধ হতে থাকল, ক্যানেলেসেচ পদ্ধতি অপ্রচলিত হয়ে পড়ল । শ্যালো, ডিপ , মিনিডিপ টিউবওয়েলের বিক্রি বেড়ে গেল দেশে । দেশীয় বীজ বন্ধ হয়ে অধিক ফলনশীল টার্মিনেটর বীজ এদেশে চাষের বাজার দখল করল। আশির দশকে বিশ্ব-উদারিকরণের যুগে চাষে যন্ত্র ব্যবহার বাড়তে শুরু করল ।
পি ভি নরসীমার সরকারের আমলে মনমোহনীয় বিশ্বায়নের অর্থনীতি আবার আমেরিকার লবিতে ঢুকে পড়ল। খোলা বাজার অর্থনীতির হাত ধরে সার, বিদ্যুতের ভর্তুকি কমানো হল। একবার ফলনের টার্মিনেটর বীজ তৈরি ও তার বাণিজ্য একচেটিয়া পুঁজিবাদী ব্যবস্থার হাতে তুলে দেওয়া হল।
১৯৯৪ সালে গ্যাটচুক্তির ফলশ্রুতিতে মনস্যান্টো জাতীয় কৃষি-বহুজাতিক সংস্থার মাধ্যমে জেনেটিক মডিফায়েড বীজের ব্যবহার শুরু হল । বিটি কটন পোকার হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে কিন্তু এই চাষে সার এবং কীটনাশক লাগে অস্বাভাবিক হারে, ফলে কৃষকের সর্বস্বান্ত অবস্থা । দেনার দায়ে ডুবে থাকা কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনা বাড়তে থাকল ১৯৯৫ সাল থেকে । অবাধ কৃষিবাণিজ্যের ফলশ্রুতিতে চাষি ফসলের দাম না পাওয়ার কারণে , দেনার দায়ে ১৯৯৫ সাল থেকে ২০১৭ পর্যন্ত ৩ লক্ষ ৩০ হাজার চাষি আত্মহত্যা করলো এটাই পরিসংখ্যান ।
এগ্রিকালচার প্রোডিউস মার্কেট কমিটি আইন ২০০৩ (APMC) বা মান্ডি
এই আইন আনা হয় কৃষক আত্মহত্যার পরিপ্রেক্ষিতে, যাতে কৃষক ক্ষেতের ৫/৬ কিলোমিটারের মধ্যে ধান বিক্রয়কেন্দ্রে সরকারি সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রি করতে পারেন ।
FPO ( Farmers Producers Organisation) বা কৃষক সমবায় সমিতি তৈরী করার উদ্দেশ্য ছিল খরচ কমাবার জন্যে ব্যাপক উৎপাদন বাড়ানো । এই মান্ডিগুলোর মধ্যে দিয়ে সরকার চালকল গুলোর সমবায়ের মাধ্যমে এফসিআই বা নাফেডে খাদ্য মজুত রাখার ব্যবস্থা করল। ভারতে ৫৮৫ টি e-NAM মান্ডি এবং ৭.৫ হাজার অফলাইন মান্ডিব্যবস্থা আছে বর্তমানে।
তিন দশকের কৃষি-সংস্কারে ভারতের কৃষি:
৫২ শতাংশ কৃষিজীবী মানুষের দেশ এই ভারতবর্ষ । কৃষিতে ভারতের জিডিপির ১৬ শতাংশের মতো অবদান । তা সত্বেও ধান রপ্তানিতে ভারতের স্থান প্রথম, গম রপ্তানিতে দ্বিতীয়। খাদ্যপণ্য রপ্তানির কারণেই ভারতের জিডিপি গত ত্রৈমাসিকে মাইনাস ২৩.৯% হওয়া সত্বেও একমাত্র কৃষিক্ষেত্রেই ৩.৪% বৃদ্ধি পেয়েছে ।
অথচ ৮৬ শতাংশ দরিদ্র চাষিকে একচেটিয়া পুঁজির দাসত্ব করতে হচ্ছে । কৃষকদের মধ্যে ১৪ শতাংশ ধনী চাষি একচেটিয়া পুঁজির দালাল হয়ে গেল, তাদের হাতে ৭৩ শতাংশ জমি চলে গেল । বীজ, সার, বিদ্যুৎ, জল কিনে ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করিয়ে লোকসানে পড়ে যাওয়ার ফলে বর্গাদাররা ভূমিহীন চাষি বা ক্ষেতমজুরে রূপান্তরিত হলেন। সারের উপর ভর্তুকি উঠে গেল । এবার বিদ্যুৎ বিলে ভর্তুকি কাটছাঁট হতে চলেছে। ২ হেক্টর কম জমির মালিকের সংখ্যা বেড়ে গিয়ে ৮৬ শতাংশ হলো । প্রায় ১৫ কোটির মতো মানুষ সম্বলহীন প্রান্তিক ক্ষেতমজুরে পরিণত হলেন। এদের মধ্যে বিরাট অংশের মানুষ ভালো মজুরীর প্রত্যাশায় পরিযায়ী শ্রমিকে পরিণত হলেন।
অন্যদিকে ধনী চাষিরা FPO (Farmer Producers Organisation) , Agri-Society গঠন করে ব্যাঙ্কঋণ বা সরকারি ভর্তুকির বৃহদাংশ হাতিয়ে নেবার সযোগ নিতে থাকল। নতুন আইনে সরকার চুক্তি চাষ করতে বাধ্য করবে চাষিকে পরোক্ষ এবং প্রত্যক্ষভাবে । জিও-মার্ট প্রাথমিক ভাবে ১৪ টি আন্তর্জাতিক একচেটিয়া পুঁজির সহযোগে চুক্তি চাষের মাধ্যমে ১২ কোটি চাষি ও ৩ কোটি দোকানদারকে নিয়ে একচেটিয়া মুনাফা অর্জনের আয়োজনে নেমেছে এই সরকারের রাজত্বে । বাজারে ফসল লুঠ করতে নেমেছে জিও-মার্ট, রিলায়েন্স রিটেল , আদানি উইলমার । নেমেছে লেইজ , ওয়ালমার্টের ফ্লিপকার্ট ইত্যাদি হাঙর পুঁজিপতি সংস্থাগুলো ।
মিনিমাম সাপোর্টিং প্রাইস বা ফসলের সহায়ক মূল্যের দায়, তা হয়ে থাকল সরকারের মর্জিমাফিক । গতবছর সহায়কমূল্য বেড়েছিল ৩.৬% , এবার তা কমিয়ে হল ২.৬% ।
কৃষিতে ভর্তুকি-এক আন্তর্জাতিক দ্বিচারিতা
২০০১ সালে দোহায় অনুষ্ঠিত কৃষি-বৈঠকে আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো কথা দিয়েছিল- কৃষিপণ্যের উৎপাদন ও রপ্তানিতে ভর্তুকি এবং আমদানি শুল্ক কমিয়ে আনবে । কিন্তু বাস্তবতই দেখা যায় আমেরিকা ইউরোপ সহ বিশ্বের প্রায় সব দেশই কৃষিতে ভর্তুকি দিয়ে যায় যা ভারতের দেয় ভর্তুকির চেয়েও অনেক বেশী হারে। পুনরায় ২০০৬ সালে WTO এর সর্বদেশ বৈঠকে ঠিক হয়- ২০১৩ সালের মধ্যে সব দেশ কৃষিতে ভর্তুকি তুলে দেবে । আর্থিকভাবে উন্নত দেশগুলি কৃষিক্ষেত্রে Blue Box , Green Box ভর্তুকি দিয়ে যাবে আর অনুন্নত দেশগুলি ভর্তুকি তুলে দেবে তা ভারত অবশ্য এতদিন মানেনি । আসলে একচেটিয়া পুঁজিবাদ চাইছে কৃষি-উৎপাদনকে সরকারি সাহায্যমুক্ত করতে । অনুন্নত দেশের সরকার পরিকাঠামো নির্মাণ করবে আন্তর্জাতিক পুঁজি বিনিয়োগের সুবিধে করে দেওয়ার জন্যে । আর বহুজাতিক একচেটিয়া বাজার কৃষকের শ্রমকে নির্বিচারে শোষণ করে পুঁজির কেন্দ্রিভবন বাড়িয়ে যাবে ।
বিকল্প মডেল- জৈব-চাষ
দশম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা অনুযায়ী, ভারতের জৈব খামারগুলি গড়ে তোলার চেষ্টা হচ্ছে উত্তর-পূর্ব ভারতে, যেখানে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক খুব কম ব্যবহৃত হয়। সিকিম সরকার রসায়নমুক্ত চাষের আইন প্রণয়ন করেছে। জৈব ফসলের বিশ্ববাজার ধীরে ধীরে চাষিদের উৎসাহিত করছে জৈব কৃষিতে। বিশ্বের বিভিন্ন সুপারমার্কেট চেন, এমনকি এ দেশের বড় বিপণিতেও বেশ ভাল ব্যবসা করছে জৈব খাদ্য। বিকল্প মডেল হিসাবে আবার উঠে আসছে “জৈব-চাষ” যা সিনথেটিক প্রোডাকসনের একটি বড় চ্যালেঞ্জ । পরিবেশদূষণের বিরুদ্ধে লাগাতার বিদ্রোহ পুঁজিবাদকে বাধ্য করবে হাইব্রিড বীজ ও কেমিক্যাল নির্ভর কৃষিব্যবস্থাকে বদলাতে । খামারে যে জৈব সার, গোবর সার ব্যবহার হয়, তার উৎস ও ব্যবহার সম্পর্কে চাষিকে সচেতন থাকতে হয়। যেমন সচেতন থাকতে হয় ব্যবহার্য বীজ নিয়ে, যা অবশ্যই জৈব পদ্ধতিতে উৎপন্ন হতে হবে। বিশ্ব-একচেটিয়া পুঁজির কৃষির সিনথেটিক মডেল বাতিল করে প্রকৃতি-নির্ভর চাষের আয়োজন না করতে পারলে গ্রীন হাউস গ্যাস তথা বিশ্ব-উষ্ণায়ন থেকে পৃথিবীকে বাঁচিয়ে রাখা যাবে না বেশীদিন ।
তথ্যসূত্র:
১)উইকিপিডিয়া
২) বিশ্ব-বাণিজ্য সংস্থা, ভারতের অর্থনৈতিক সংস্কার ও উন্নয়ন -শান্তনু নাগ।
৩) আনন্দবাজার পত্রিকা।
৪) ভারতে প্রত্যক্ষ বিদেশীপুঁজি নিবেশ: সমস্যা ও সম্ভাবনা –অমিতেন্দু পালিত ।
লেখক একজন নাট্যকর্মী ও পরিবেশ কর্মী।
ই-মেইল: tarash01@gmail.com
সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ে যেটুকু বুঝলাম তাতে দেশের কৃষি ব্যবস্থা বলে তো সবটাই করপোরেটদের অধীনে নিযনত্রিত হবে আর দেশের কৃষি ব্যবস্থা ওবহু সংখক কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনা ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পাবে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম। এক ভযংকর পরিস্থিতির সম্মুখীন গোটা দেশ বাসী।তাহলে তো বিকল্প ভাবনাতে জোর দেওয়া জরুরী মনে হচ্ছে । ঠিক বুঝলাম কিনা জানিও। সমৃদ্ধ হবো।
কৃষি আইন যা সংসদে পাস হলে,যা লকারের অবিবেচনাপ্রসূত চিন্তা ভাবনার ফসল । মোদ্দাকথা আগামি দিনে চাষিদের জীবনে চরম অস্থিরতা নেমে আসবে । আম্বানি বা ইদানিং কেউই ভারতবর্ষের কৃষি ব্যবস্থার কান্ডারী হতে পারবে না কোনদিন । কেননা কৃষি থেকে দীর্ঘমেয়াদি মুনাফা অর্জন করা কর্পোরেটের পক্ষে কিছুতেই সম্ভব নয় ।
https://pariprashna.in/society/towards-the-agro-movement-a-survey/
ভুল ধারণা ! কৃষি মানে শুধু ধান চাল আলু পটল চাষ নয়। অর্থকরী কৃষি ইত্যাদিতেও কৃষি সংক্রান্ত বিনিয়োগ সম্ভব !কৃষি উপকরণ -সার -কীট নাশক উৎপাদনেও বিনিয়োগ হবে !সর্বোপরি কঋষি মানেই জলের উৎসের ওপর অধিকার কায়েম !কর্পোরেটরা জানে এই বিশাল ক্ষেত্রজুড়ে কিভাবে ফায়দা তুলতে হয় ! দেখলেন না কোভিড-১৯-এর দাপটে যখন সারা বিশ্ব বিপর্যস্ত তখন কর্পোরেটা উপার্জন বৃদ্ধি করেছে দেড় থেকে তিনগুণ ! বস্তুত এই তিন কৃষিবিল চাষের জগতে কর্পোরেটদের অনুপ্রবেশের ছাড়পত্র !ভারতের কৃষিজীবীরা সূচনাতেই ষড়যন্ত্রের কূটকৌশল ধরে ফেলেছেন এটাই একমাত্র সুসংবাদ!
কেন্দ্রের মোদী সরকার সংসদীয় নিয়মকানুন অগ্রাহ্য কোরে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে তিনটি কৃষি সংক্রান্ত আইন করিয়ে নিল। তার দু’একদিনের মধ্যেই সম্ভবত ওয়ালমার্ট মুকেশ আম্বানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করল। দেশি বিদেশি শকুনেরা হতদরিদ্র কৃষকদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। স্নেহভাজন তারাশংকর তথ্য ও যুক্তি দিয়ে বিষয়টি সুন্দরভাবে পরিবেশন করেছেন। লেখাটি পড়ে আমিও অনেক নতুন তথ্য জানলাম।
লেখাটা খুব মনোযোগী হয়ে পড়লাম। লেখকের সাথে আমিও সহমত, কর্পোরেটগুলোর টার্গেট এখন কৃষি কে কুক্ষিগত করতে এবং কৃষক কে শ্রমদাসে পরিণত করতে।
কৃষির শিল্পায়ন কি আটকানো যাবে? বিশেষতঃ ভারতের মতো দেশে, যেখানে কর্পোরেট পুঁজি ক্রমশ দেশের নিয়ন্ত্রণ নিতে চলেছে।