‘সেই ঘৃণ্য বিশ্বাসঘাতক ওয়াজিদ আলি শাহ’: সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের তিক্ত স্মৃতি

মোবাইল স্ক্রিনের শুধু এই দাড়িওয়ালা মুসলমানই নন, তার পূর্বসূরিরাও একই অপরাধে লিপ্ত ছিলেন। এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে উপস্থাপনযোগ‍্য ‘অপরাধী’ হলেন অবিস্মরণীয় কাজী নজরুল ইসলাম, যাকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অত‍্যন্ত স্নেহ করতেন।

wajid ali shah

শুভরঞ্জন দাশগুপ্ত

সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন সম্পর্কিত চেতনা এবং অনুশীলনকে আন্তরিকভাবে ভারতীয়রা প্রায়শই অভিবাদন জানিয়েছেন। তবে এখন, একটি সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা আমাকে শিখিয়েছ যে এ’থেকে আমরা যথেষ্ট দূরে সরে যাচ্ছি ।

আমার ছেলে, অন‍্যমনস্কভাবে, তার মোবাইলের স্ক্রিনে একটি ছবি দেখায় –একজন দাঁড়িওয়ালা মুসলমান সংস্কৃত মন্ত্র পাঠ করছিলেন। ছেলে বলেছিলো, “এই ছবি দেখলে বেশ কিছু মানুষের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়বে।”

সম্ভবত, সে ঠিক কথাই বলেছিল। হিন্দু সম্প্রদায়ের কিছু অস্বচ্ছ-দৃষ্টি সদস্য বলবেন, “আমাদের আদিভাষা [আক্ষরিক অর্থে, প্রাচীন ভাষা] সংস্কৃতে লেখা আমাদের বিশুদ্ধ শ্লোক উচ্চারণ করার সাহস একজন অবিশ্বাসীর কীভাবে হয়?”

একইভাবে, মুসলিম সম্প্রদায়ের কিছু সদস্য সম্ভবত বলবেন, “একজন প্রকৃত মুসলমান কীভাবে ‘কাফির’-এর জন্য সংরক্ষিত একটি প্রার্থনা পাঠ করার সাহস পায়?” এই দুটি পক্ষের মধ্যে একটি উদ্বেগজনক মিলমিশ রয়েছে, একটি অন্যটিকে উস্কে দেয় এবং উভয়ই তুলনামূলকভাবে অজানা আলোকিত ঐতিহ্যকে প্রত্যাখ্যান করে।

তবুও, আমি এই পোস্ট দেখে আনন্দিত। মোবাইল স্ক্রিনের শুধু এই দাঁড়িওয়ালা মুসলমানই নন, তাঁর পূর্বসূরিরাও একই অপরাধে লিপ্ত ছিলেন। এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে উপস্থাপনযোগ‍্য ‘অপরাধী’ হলেন অবিস্মরণীয় কাজী নজরুল ইসলাম, যাকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অত‍্যন্ত স্নেহ করতেন। তিনি শুধুমাত্র হৃদয়গ্রাহী ও আজ অবধি অত্যন্ত জনপ্রিয় শ্যামাসংগীত (হিন্দু দেবতা শ্যামা বা কালীর প্রতি উৎসর্গীকৃত গান) রচনা করেননি, তিনি প্রতিবাদের আবেগঘন গানও লিখেছেন এবং ‘কমিউনিস্ট ইন্টারন‍্যাশনাল’ সঙ্গীতের বাংলা অনুবাদ করেন। নজরুল ছিলেন অসাধারণ প্রতিভাবান। অনেকে উদ্দেশ‍্যমূলকভাবে তাঁকে আপাতদৃষ্টিতে ‘অপ্রতিরোধ্য’ মুসলমানদের মধ্যে একটি বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিত্ব হিসাবে বন্ধনীভূক্ত করার চেষ্টা করেন। এটি ভুল।

খ্যাতিমান আরও পাঁচজন মুসলিম বাঙালি কবি কালীকে শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রার্থনা রচনা করেছেন। তাছাড়া মাইহারের কিংবদন্তি আলাউদ্দিন খান যিনি সরোদ বাদক আলী আকবর খানের পিতা এবং রবিশঙ্করের গুরু, ছিলেন কালীর একনিষ্ঠ ভক্ত।

আমার ছেলের ফোনে থাকা মুসলিম লোকটি অনন্য কিছু করছিলেন না। প্রকৃতপক্ষে, ভক্তির এই সম্পূর্ণ ঐতিহ্যটি মুঘল সম্রাট আকবরের সময় থেকে শুরু হয়েছিল যখন তিনি ব্রাহ্মণ পণ্ডিত এবং হিন্দু ঋষিদেরকে হিন্দু দর্শন ও ধর্মের মৌলিক নীতিগুলিতে ‘আলোকিত’ করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তাঁর বিশ্বস্ত লেফটেন্যান্ট, আবুল ফজল, যিনি আইন-ই-আকবরি লিখেছেন, তিনি ছিলেন একজন নিবেদিত ফারসি ও সংস্কৃত পণ্ডিত।

সম্রাট শাহজাহানের প্রথম পুত্র দারা শিকোহ যখন সংস্কৃত পণ্ডিতদের সাহায্যে উপনিষদগুলিকে প্রথমবার ফার্সি ভাষায় অনুবাদ করার চেষ্টা করেন তখন এই ঐতিহ্যটি তার কাঙ্খিত পরিপূর্ণতা লাভ করে। অমর্ত্য সেন দারা শিকোহ-এর অনুকরণীয় অবদানের কথা, যিনি মোবাইলের পর্দায় দেখা মুসলিম পুরুষটির প্রকৃত অগ্রজ ছিলেন,  তাঁকে স্মরণ করতে কখনই ক্লান্ত হন না ।

এমনকি বাংলায়, যেখানে আমি থাকি, বাল্মীকির রামায়ণ সংস্কৃত থেকে দক্ষ, পঠনযোগ্য বাংলায় অনুবাদ করেছেন বিশিষ্ট কবি কৃত্তিবাস। মুসলিম শাসক নবাব আলাউদ্দিন হোসেন শাহের রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতায় যিনি ১৪৯৪ থেকে ১৫১৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত শাসন করেছিলেন। এমনকি জসীমউদ্দীনের মতো আধুনিক বাঙালি মুসলমান কবি এবং কায়েস আহমেদের মতো ঔপন্যাসিকরা (বাঙালি ঔপন্যাসিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই একনিষ্ঠ অনুরাগী বাংলার ধর্মীয় বিভাজন মেনে নিতে না পেরে আত্মহত্যা করেছিলেন), সেলিনা হোসেন এবং হাসান আজিজুল হক প্রশংসনীয় অন্তর্দৃষ্টিসহ হিন্দু দর্শন অনুশীলন ও অন্বেষণ করেছেন।

প্রকৃতপক্ষে, জসীমউদ্দীনের কাজ সরস্বতী এবং অন্যান্য হিন্দু দেবতার উল্লেখে পরিপূর্ণ। যদিও আমরা ‘হিন্দু’ রচিত সমসাময়িক বাংলা কবিতায় ইসলামী বিশ্বদৃষ্টির একটি পারস্পরিক উচ্চারণ খুঁজে পাইনি – অবশ‍্যই সুভাষ মুখোপাধ্যায় এবং সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো অনেক কবিই ‘হিন্দু’ বলে শ্রেণীভূক্ত হ’তে আপত্তি জানাবেন । একমাত্র উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম সম্ভবত অতুলনীয় জীবনানন্দ দাশ যাঁর ‘মিলন-কবিতা’ (confluence poetry)-এর সবচেয়ে চমৎকার উদাহরণ ‘রূপসী বাংলা’: একটি কবিতামালা যা গ্রামীণ বাংলার নির্ম‍াল‍্য ও সৌন্দর্যকে উদযাপন করে। বাংলাদেশের মুক্তির জন্য যুদ্ধের ময়দানে এগিয়ে যাওয়ার সময় মুসলিম ও হিন্দু মুক্তিযোদ্ধারা রূপসী বাংলাকে তাঁদের ন্যাপস্যাকে নিয়ে যেতেন। এটা ছিল তাঁদের অনুপ্রেরণামূলক মন্ত্র এবং আজান দুটোই।

কেন আমাকে মিলন-কবিতার জন‍্য কলম ধরতে হচ্ছে? সম্প্রতি, আমাকে ‘সংস্কৃতি ও সৃজনশীলতার সঙ্গম এবং ধারাবাহিকতা’ শীর্ষক একটি সিম্পোজিয়ামে বক্তৃতা করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। আমি সংস্কৃতির আলোচনায় বিমূর্ত এবং উত্তর-আধুনিক তাত্ত্বিক এবং জটিল বিতর্কে লিপ্ত হতে চাইনি। তাই, আমি একটি প্রাথমিক উদাহরণ বেছে নিয়ে বললাম, “আমি বিষয়টি সম্পর্কে কিছুই জানি না। কিন্তু আমার স্ত্রী এবং কন্যা, যাঁরা কেবল শিল্পী হিসেবে কত্থকের প্রতি অনুগত, তাঁরা আমাকে বারবার আশ্বস্ত করেছেন যে কত্থক, ভরতনাট্যম এবং কথকলির বিপরীতে, একমাত্র ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্য যা হিন্দু ও মুসলিম উভয় প্রভাবকে ধারণ করেছে। এটি মন্দির থেকে উদ্ভূত হয়নি বরং সাধারণ দৈনন্দিন জীবন (পরিবার এবং সমাজ) থেকে উদ্ভূত হয়েছে; এটি গল্প বা কথকতা বর্ণনা করত এবং এর সর্বশ্রেষ্ঠ পৃষ্ঠপোষক ছিলেন লক্ষ্ণৌয়ের নবাব ওয়াজিদ আজিদ আলি শাহ, যিনি নিজে রাজপরিবারে অনুষ্ঠিত মুগ্ধকর পরিবেশনায় কৃষ্ণের ভূমিকা পালন করেছিলেন।”

শ্রোতারা আমার ব্যাখ্যা গ্রহণ করেছেন বলে মনে হয়েছিল। কিন্তু একজন তিলকধারী,  তিলক পরা একজন লোক, উঠে দাঁড়ালেন। তিনি বললেন, আপনি কিছুই জানেন না। আপনি ধর্মহীন কমিউনিস্টদের ‘পেইড এজেন্ট’। কত্থক হল ১০০ ভাগ হিন্দু, মন্দিরের নৃত্য। আর নরকবাসী কাফের ওয়াজিদ আলী আমাদের প্রিয় কৃষ্ণের ছদ্মবেশ ধারণ করার সাহস পায় কী করে! আমাদের দিন আসছে, আমরা কত্থককে শুদ্ধিকরণ করতে এবং এটিকে এর সমস্ত তথাকথিত মুসলিম প্রভাব থেকে মুক্ত করতে যাচ্ছি।”

একজন শ্রোতা অবশ‍্য কক্ষের বাইরে তাকে পাঠিয়ে দিতে গিয়ে বলে উঠলেন, তাঁরা ঐ ব‍্যক্তির কথা শুনতে চান না –“এখানে নয়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এবং রবীন্দ্রনাথের দেশে “। আমি যা বলে লেখা শুরু করেছিলাম  –তাঁর মতো একজন ব্যক্তি অবশ্যই সংস্কৃত শ্লোক উচ্চারণকারী মুসলিম ব্যক্তির উপর থুথু তো ছিটাবেনই।

প্রসঙ্গত, আমরা বর্তমানে (ডিসেম্বর ২০২৩ -এর শেষ সপ্তাহ-অনুবাদক) কলকাতায় নবাব ওয়াজিদ আলী শাহের অবিনশ্বর সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার উদযাপন করছি। ব্রিটিশরা লক্ষ্ণৌতে তাঁকে সিংহাসনচ্যুত করার পর শাহকে এই শহরে নির্বাসিত করা হয়েছিল। প্রেমচাঁদের গৌরবময় গল্প ‘সতরঞ্জ কি খিলারি’ এবং সত্যজিৎ রায়ের তৈরি একই শিরোনামের সমান গৌরবময় চলচ্চিত্রের কথা মনে করুন। তিনি ১৮৬ বছর (১৬৭ বছর: অনুবাদক) আগে লক্ষ্ণৌ থেকে নির্বাসিত হয়েছিলেন। কৃষ্ণের এই ইসলামিক সংস্করণ, যিনি তাঁর গোপিনীদের সঙ্গে নাচতে আনন্দ পেতেন, তাঁর প্র-পৌত্র শাহেরিয়ার আলী মির্জার মাত্র তিনদিন আগে উচ্চারিত কথায় তা , “মানবতা এবং আন্তঃবিশ্বাসের সম্প্রীতিকে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন। আমরা সেই চেতনা ও সংস্কৃতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে চাই।”

(“শিল্পের পৃষ্ঠপোষক হওয়ার পাশাপাশি, ওয়াজিদ আলি শাহ মানবতা এবং আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতিকে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন। আমরা সেই চেতনা ও সংস্কৃতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে চাই,” বলেছেন নবাবের প্র-পৌত্র শাহেরিয়ার আলী মির্জা, যিনি অনুষ্ঠানের আয়োজক রিচ আউট স্টার ফাউন্ডেশনেরও প্রধান: অনুবাদক)। সংস্কৃতির মিলন সম্পর্কিত এই চেতনা ও অনুশীলনকে আমরা আন্তরিকভাবে শুভেচ্ছা জানিয়েছি। আমরা সভ্যতার সংঘর্ষের বিষয়ে স্যামুয়েল হান্টিংটন (স্যামুয়েল পি. হান্টিংটন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রসিদ্ধ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন: অনুবাদক)-এর বিষাক্ত থিসিস (তাঁর ‘সভ্যতার সংঘর্ষ’ -এ তিনি বলেন যে “জনগণের সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় পরিচয়ই হবে ঠান্ডা যুদ্ধ-পরবর্তী বিশ্বে সংঘাতের প্রাথমিক উৎস”: অনুবাদক) সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছি। একইভাবে, আমরা অতুলনীয়  শ্রইয়োহান ভল্ফগাং ফন গ্যোটে  (একজন জার্মান কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, দার্শনিক, বিজ্ঞানী, চিত্রশিল্পী: অনুবাদক), শ্রদ্ধা করি, যিনি সচেতনভাবে দেবনাগরী শেখার জন্য তার পূর্বনির্ধারিত পাশ্চাত‍্যমুখী নির্দ্ধারক (Occidental Parameter)-এর বাইরে চলে গিয়েছিলেন এবং কালিদাসের ‘অভিজ্ঞানম শকুন্তলা’- কে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নাটকগুলির মধ্যে একটি হিসেবে স্বাগত জানান, যেখানে “ফুল এবং ফল একটি অবিভাজ্য সমগ্রে মিশে গেছে”। পরে, তিনি মহান ফার্সি কবি হাফিজকে তার সর্বোচ্চ গুরু হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন, যিনি তাকে অনন্য ‘ওয়েস্ট-ওস্টলিচার দিওয়ান’ লিখতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন।

সিম্পোজিয়ামে বাঙালি শ্রোতার ক্ষোভ আমাকে শঙ্কিত করেনি। কারণ, বর্তমান ব্যবস্থা এই ধরনের আরও অনেক উপাদানকে উৎসাহিত করবে।

ক্ষুব্ধ সেই আগ্রাসী শ্রোতার জন্য আমি একটি, অসামান্য, সংশোধনমূলক পরামর্শ দিতে পারি: ক্ষিতিমোহন সেনের সহজবোধ‍্য এবং অনন্য গ্রন্থ ‘হিন্দু-মুসলিম যুক্ত সাধনা’ (ভারতে হিন্দু- মুসলমানের যুক্ত সাধনা– লেখক ক্ষিতিমোহন সেন, প্রকাশক: বিশ্বভারতী: অনুবাদক) পড়ে দেখার। এই ক্লাসিক গ্রন্থে লেখক ষোড়শ শতকের পর থেকে সঙ্গীত, কবিতা, শিল্প এবং স্থাপত্যের ক্ষেত্রে উভয় সম্প্রদায়ের উল্লেখযোগ্য এবং সামঞ্জস‍্যবাহী অবদানের কথা লিপিবদ্ধ করেছেন। তিনি ছিলেন ফার্সি ও সংস্কৃতের একজন শক্তিশালী পণ্ডিত। তিনি ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের একজন এবং বিশ্বভারতীর সহ-প্রতিষ্ঠাতা, যিনি কবীরের অমূল্য দোহাগুলি চয়ন এবং বাংলায় অনুবাদ করেছিলেন। তিনি ছিলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও ধর্মমুক্ত মানবতাবাদের শক্তিশালী সমর্থক অমর্ত্য সেনের পিতামহ।

সর্বোপরি, তাঁর লেখা হিন্দুধর্মের প্রথম সম্পূর্ণ পাঠ্যটি এবং সেইসঙ্গে জওহরলাল নেহরুর ঘনিষ্ঠ বন্ধু সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণান (ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি: অনুবাদক)-এর সংস্করণটি বর্তমান ব্যবস্থা দ্বারা পাঠযোগ্য হিসাবে গ্রাহ‍্য হবে না। কারণ, তার মধ‍্যে নেই বীর সাভারকর এবং গোলওয়ালকরের আগ্রাসী হিন্দুত্বের প্রতিধ্বনি। পরবর্তীকালের অন্ধ ভক্তদের মাথায় স্বর্গ ভেঙ্গে পড়তেই পারে যদি তারা কোন মুসলিম ব্যক্তিকে সংস্কৃত পাঠ করতে দেখেন, যখন আমি এবং আমার মতো আরও অনেকেই তাঁকে আলিঙ্গনবদ্ধ করতে চাইবো। একইভাবে, আমরা সমানভাবে আনন্দিত হই, যখন আমার ছেলের মোবাইলের স্ক্রিনে একজন তিলকধারী ব্রাহ্মণকে অ্যাসিসিসের সেন্ট ফ্রান্সিস (একজন খৃষ্টীয় যাজক ও কবি: অনুবাদক)-এর টগবগে কবিতা আবৃত্তি করতে বা আরও সুনির্দিষ্টভাবে বললে, বিখ্যাত দার্শনিক ইবনে রুশদ (পশ্চিম-বিশ্বে আভেরোস নামেও পরিচিত, মুসলিম ধর্মতত্ত্ব বিশারদ: অনুবাদক)-এর অধিবিদ্যামূলক গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃতি দিতে দেখা যায়।

[লেখক শুভরঞ্জন দাশগুপ্ত মানববিদ‍্যার একজন প্রাক্তন অধ্যাপক, ইংরেজি ও বাংলায় বেশ কয়েকটি বইয়ের লেখক এবং একজন ‘কলামনিষ্ট’।]

  • ইংরেজিতে লিখিত মূল লেখাটি জানুয়ারি ২০২৪, The Wire-এ প্রকাশিত।
  • অনুবাদকর্ম : অনিরুদ্ধ দত্ত

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top