তারাশঙ্কর
তিরিশের দশকের মহামন্দা ও পরিত্রাণ
অর্থনীতিতে চাহিদা ও যোগানের মধ্যে আছে বাজার সম্পর্ক । যোগান বেশী হলে পণ্যের মূল্য কমে যায় । আধুনিক পুঁজিবাদী বাজারি অর্থনীতিতে কৃত্রিম চাহিদা সৃষ্টি করে বাজার সম্প্রসারণ করার প্রচেষ্টা নেওয়া হয় । উদ্বৃত্ত মূল্য সৃষ্টি হয় শ্রমিকের উদ্বৃত্ত শ্রমশক্তি থেকে (উদ্বৃত্ত শ্রম), যা মুনাফা হিসাবে আত্মসাৎ করে পুঁজিপতি । মার্ক্সের তত্ব অনুসারে শ্রমিকের শ্রম চুরি করে উদ্বৃত্ত্ব পুঁজি হয় । পুঁজির সঞ্চালন সঠিকভাবে না হলে অর্থনৈতিকক্ষেত্রে সঙ্কটে পড়ে পুঁজি। সেজন্যে বিশ শতক জুড়ে কম মজুরিতে দক্ষ শ্রমিক পাওয়ার উদ্দেশ্যে ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্টে্রর বৃহৎ উৎপাদক কোম্পানিগুলি এশিয়াতে পাড়ি দেয় এবং একচেটিয়া পুঁজিবাদ প্রতিযোগিতা ও বাজার সম্প্রসারণের প্রয়োজনে সারা বিশ্বের দেশগুলির জন্যে কতকগুলি নয়া অর্থনৈতিক নীতি প্রণয়ন করে । শুরু করছি ১৯৩০ সালে পুঁজিবাদী মন্দার প্রেক্ষাপট থেকে । উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং মজুরি হ্রাসের মাধ্যমে ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় অতিমন্দার দশক শুরু হয়ে যায় । সেই গভীর মন্দা থেকে পুঁজিবাদকে বের করে আনার জন্যে কেইনসের নেতৃত্বে অর্থনীতিবিদেরা “চুঁইয়ে পড়া অর্থনীতি”( tricle down economy বা embodied liberalism ) অর্থাৎ বেরোজগারি দূর এবং মজুরীবৃদ্ধির মাধ্যমে শ্রেণি সমঝোতার নীতি নিয়ে অর্থনৈতিক সুস্থিরতা আনেন । ব্রেটন উডস কনফারেন্স অনু্যায়ী World Bank , IMF তৈরী হয় ১৯৪৪ সালে ।
নয়া-উদার অর্থনীতির উত্থানপর্ব
’৭০ এর দশকে ভিয়েতনাম যুদ্ধের ফলে আমেরিকার অর্থভান্ডারে টান পড়ে, সেই সাথে সোনার দাম বেড়ে যায় ডলারের দাম নিম্নমুখী হয় । ১৯৭১ সালে সেজন্যে ডলারকে স্বর্ণমান থেকে বিচ্ছিন্ন করে পেট্রোলের সাথে যুক্ত করে আমেরিকা । কিন্তু গোটা দশক জুড়েই মহামন্দা আমেরিকা তথা উন্নত দেশগুলির পিছু ছাড়ে নি । ’৮০ এর দশকে ব্যবসা বানিজ্যের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত উদ্যোগ বা কার্যকলাপের উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণের অনুপস্থিতি অবাধ বাণিজ্যের নীতি, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য নীতি গ্রহন করা হয় বিশ্ব-অর্থনীতিতে(laissez-faire)।
https://mpra.ub.uni-muenchen.de/22436/1/Neoliberalism_and_Macroeconomic_Performance-1980_to_2000.pdf
এতদিন উন্নত দেশে দক্ষ-অদক্ষ শ্রমিকের মাইগ্রেশন ব্রেইন ড্রেইন নির্ভর শ্রমশোষণের অর্থনীতি চালু ছিল। এবার সস্তাশ্রম আর কাঁচামালের জন্যে বিগ-ইন্ডাস্ট্রি হাউসগুলো টুকরো করে উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত দেশে পাচার করার কাজ শুরু করে তাদের প্রোডাকসান সেন্টারগুলোকে ।
বিশ্বায়নের অর্থনীতি
এই অর্থনীতি লাগু করতে “বিশ্বায়নের নীতি” “গ্যাট-চুক্তি”র মধ্যে আসতে হয় সকল দেশকে । ১৯৯১ সালে প্রধানমন্ত্রী নরসীমা রাও ভারতবর্ষে বিশ্বায়নের অর্থনীতি গ্রহন করেন । ধীরে ধীরে “প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ” চালু হয় রাষ্ট্রীয় ও অরাষ্ট্রীয় সংস্থায় । ইতোমধ্যে ১লা জানুয়ারি ১৯৯৫ তে প্রতিষ্ঠা হয়ে গেছে WTO । বিশ্ব-বাণিজ্য নীতি নির্ধারিত হতে থাকল একদিকে WTO, WB,UNO, IMF ইত্যাদি বৈশ্বিক নিয়ন্ত্রক সংস্থার মাধ্যমে ।
ভ্যালু এডেড চেইন সিস্টেম
সত্তরের দশকের পর থেকে একচেটিয়া পুঁজিবাদ উৎপাদনের ইউনিটগুলো বিশ্বের সেই দেশগুলোয় পাঠাতে শুরু করলো যেখানে উৎপাদনের ন্যূনতম পরিকাঠামো বজায় আছে এবং দক্ষ ও অদক্ষ সস্তা শ্রম পাওয়া যায় সুলভে । উৎপাদনের পীঠস্থান হয়ে উঠল জাপান তাইওয়ান চিন দঃকোরিয়া ইন্দোনেশিয়া হংকং মালয়েশিয়া ইন্দোনেশিয়া । সস্তাশ্রম , কাঁচামাল ,প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর দেশগুলিতে পণ্য উৎপাদিত হয়ে তা ইউরোপ আমেরিকা অস্ট্রেলিয়া আরবদেশগুলির বাজারে অধিক মূল্যে বিক্রি হয়। এভাবেই “ভ্যালু এডেড চেইন “ সিস্টেমের মধ্যে দিয়ে গিগ ইকোনমির বাড়বাড়ন্ত শুরু হলো, পুঁজিবাদ তার ঘনঘন সঙ্কট থেকে অনেকখানি স্বস্তির আশা করল । এই গিগ কোম্পানীগুলোতে ইন্টারনেট অ্যাপের মাধ্যমে সারা বিশ্বে উৎপাদন ও বাজারব্যবস্থা বিন্যস্ত । এরা আবার বিভিন্ন সংস্থাগুলোর উপর দায়িত্ব দিয়ে দেয় উৎপাদনের । যেমন, আপেল আই-ফোন প্রস্তুতকারক সংস্থা “ফক্সকন” নামক একটি সংস্থাকে দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের দক্ষ সস্তার শ্রম দিয়ে উৎপাদন করায় । এভাবেই গিগ-প্রোডাকসন হাউসগুলো একেকটা জাতীয় সীমানা ছাড়িয়ে , কোনটা ইন্টারন্যাশনাল, মাল্টি-ন্যাশনাল ট্রান্স-ন্যাশনাল কোনটা আবার স্টেটলেস কর্পোরেশনে পরিণত । এক্ষেত্রে কর্মীরা যেমন স্বাধীনভাবে কাজ নিতে পারে, কোম্পানিগুলোও তাদের ইচ্ছামতো দক্ষতা অনুযায়ী নির্বাচন করে এবং কাজের মানের উপর পারিশ্রমিক দেয় । সব কাজই অ্যাপভিত্তিক, তাই গিগ ইকোনোমিতে কর্মক্ষেত্রগুলো অনলাইন রেটিংসের উপর নির্ভরশীল এবং অ্যাপের মাধ্যমেই নিরাপদ পেমেন্ট-সিস্টেম কার্যকর হয়। এটা অনেকাংশেই বদলে দিচ্ছে সমাজ, সংস্কৃতি শিক্ষা চাকরি বা ব্যবসার পরিবেশ।
উন্নয়নশীল দেশে ক্রনি-ক্যাপিটালিজম
গিগ-ইকোনমির পাশাপাশি স্বজনতোষী পুঁজিবাদ বা ক্রনি-ক্যাপিটালিজম জন্ম নিয়েছে রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা রাষ্ট্রীয় নেতাদের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সুবিধা করছাড় দেশের জমি-সম্পত্তি দখল ও আইনি সুবিধা গ্রহন করে পুঁজির প্রবৃদ্ধি ঘটিয়ে একচেটিয়া পুঁজির অংশীদারিত্ব গ্রহন করা এদের উদ্দেশ্য। ক্রনি-ক্যাপিটালিস্টদের শীর্ষে আছে রাশিয়া , যার জিডিপিতে অবদান ১৮ শতাংশ । ২২টি চিহ্নিত দেশগুলির মধ্যে রাশিয়া বাদে অন্যান্য দেশগুলি হল মালয়েশিয়া ফিলিপাইন সিঙ্গাপুর ইউক্রেন মেক্সিকো ইন্দোনেশিয়া তুরস্ক ভারত তাইওয়ান । ভারতে রিলায়েন্স গোষ্ঠীর মুকেশ আম্বানি এভাবেই বিশ্বের চতুর্থ ধনী (অধুনা সপ্তম স্থানে) , আদানি বিদ্যুৎ উতপাদনে বিশ্বে ষষ্ঠস্থান অধিকার করেছে ।
উৎপাদন-সম্পর্কে শ্রমিকের চরিত্র বদল
মার্ক্স-এঙ্গেলস-লেনিনের যুগে শিল্প-বিপ্লবজাত উৎপাদন ক্ষেত্রগুলিতে সংগঠিত শ্রমিকের উদ্ভবের কারণে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম ও বৈপ্লবিক অনুকূল পরিস্থিতি তৈরী হয়। আশির দশকে নয়া-উদারনীতির পুঁজিবাদী কার্যক্রমের ফলে ধীরেধীরে বিশ্বে ৯৩ শতাংশ অসংগঠিত চুক্তিভিত্তিক শ্রমিকের জন্ম হয় । ইন্টারনেটভিত্তিক ও এ্যাপভিত্তিক সংস্থাগুলি ওয়ার্ক ফ্রম হোমের মাধ্যমে কাজ করিয়ে নিচ্ছে যে শ্রমিকদের তাদের আর শ্রমিক চরিত্র থাকছে না । কাজের ঘন্টা নেই , ছুটি নেই অন্যান্য সুযোগসুবিধা নেই , শ্রমিক এখানে কাজের ঠিকাদারে পরিণত । করোনা-উত্তর পরিস্থিতিতে বৃহৎ পুঁজির সংস্থাগুলো তাদের কর্মীদের প্রায় ৫০ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশ এই পদ্ধতির দিকে এগোচ্ছে ।
ভারতের অর্থনীতির নয়া মোড়
আশির দশকের নয়া-উদারনীতিবাদ , ১৯৯১ সালে বিশ্বায়নের নীতি , এফডিআই, ১৯৯৪ সালে গ্যাট-চুক্তি, নব্বইয়ের দশকে সোভিয়েত রাশিয়ার পতন ও একমেরু বিশ্বের উদ্ভব ভারতবর্ষের উৎপাদন ও বাজার অর্থনীতিতে রাষ্ট্রীয় মুঠোকে আলগা করে দি্যেছে। ভারতবর্ষের স্বাধীনতার সময়ে রাষ্ট্রীয় অধীনে ৫টি সংস্থা ছিল । বিশ্বের অনুন্নত দেশগুলোর মতো ভারতের পুঁজিপতিদের প্রয়োজনে একে একে প্রায় ৩৬০টি রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থার জন্ম হয় । ইন্দিরা গান্ধী ১৯৬৯ সালে ব্যাঙ্ক জাতীয়করণ করলেন , ১৯৭৩ সালে খনি রাষ্ট্রায়ত্বকরণ করলেন । ফলে দেশে সংগঠিত শ্রমিকশ্রেণির জন্ম হলো । ট্রেড ইউনিয়ন গঠন হলো, ভারত সরকার এবং বিভিন্ন রাজ্য সরকার প্রায় শ’চারেক শ্রমিক সুরক্ষার আইন বানাল । রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা হলো– ১) নবরত্ন ২) মহারত্ন ৩} মিনিরত্ন । নব্বইয়ের দশকের পর থেকে দেশের রাজকোষ ঘাটতি মেটাতে প্রত্যেক সরকার তিনটি পদ্ধতিতে রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো থেকে অর্থসংগ্রহ শুরু করল –১) প্রাইভেটাইজেশন (বে-সরকারিকরণ) ২) ডিস-ইনভেস্টমেন্ট (বিলগ্নিকরণ) ৩) স্ট্র্যাটেজিক ডিস-ইনভেস্টমেন্ট ।
বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের আমলে অর্থনীতির বেহাল-দশা
২০১৯ এর মার্চ- রাষ্ট্রীয় সংস্থার সংখ্যা ছিল ৩৪৮টি । ডিমনিটাইজেসন ও জিএসটির ফলে দেশের ৬.৮০ লক্ষ শিল্প-ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। প্রায় চল্লিশ জনের মতো অসাধু ব্যবসায়ী ব্যাঙ্কের প্রায় ব্যবসায়ী ১০ লক্ষ কোটি টাকা মেরে বিদেশে পালিয়েছে। পেট্রোল এর দাম খোলা বাজারে নিয়ন্ত্রিত হওয়ার কারণে জিনিস পত্রের দামে আগুন এবং পর্যাপ্ত আয় না থাকায় মানুষ মৃত্যু মুখে এগিয়ে চলেছে। ডলারের তুলনায় টাকার দাম হুহু করে কমছে। জিডিপির হার মাইনাস ২৩.৯%
( এপ্রিল থেকে জুন ), বিশ্বের সর্বসেরা রেকর্ড পতন । ভারতের নিজস্ব সবচেয়ে লাভদায়ক কোম্পানি ONGC প্রচুর পরিমাণে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে । এয়ারটেল ভোদাফোন বিএসএনএল ইত্যাদি টেলিকম সংস্থাগুলি ধুঁকছে অথচ সরকারি মদতে কর-ছাড়ে , সরকারি বরাতদানে পুষ্ট হয়ে উঠছে রিলায়েন্স-জিও । ২০২৪ সালের মধ্যে রেল স্টেশন, বাসস্ট্যান্ড থেকে সমস্ত বিমানবন্দর, এয়ার ইন্ডিয়া, বিএসএনএলের সমস্ত জমি, বিপিসিএলের সমস্ত পেট্রোল পাম্প এবং রিফাইনারিগুলি, সংস্থাগুলিকে বিক্রি করবে সরকার। দেড়শ’টি ট্রেন বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে । IRCTC এর ১৫ শতাংশ শেয়ার বেচে দেওয়া হচ্ছে । HAL এর ১০ শতাংশ শেয়ার বিক্রির প্রস্তুতি চলছে । কয়লাশিল্পে একশ’ শতাংশ প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ ছাড়পত্র দিয়ে গত ১৮ই জুন থেকে দেশের ৪১টি কয়লাব্লকের নিলাম শুরু হয়েছে । উত্তরপ্রদেশের ৪০ টি আইটিআই বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার প্রস্তুতি সারা । মেক ইন ইন্ডিয়া’ আত্মনির্ভরতার কথা বারবার বলেন প্রধানমন্ত্রী। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে প্রায় ১০০ শতাংশ সরঞ্জাম আমদানি বন্ধ করার নীতিও গ্রহণ করেছে সরকার। কিন্তু HAL এর উদ্যোগে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম তৈরির বদলে, বেসরকারি সংস্থাকে মুনাফা করার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে । জয়পুর, গুয়াহাটি তিরুবনন্তপুরম লখনউ, আহমেদাবাদ এবং মঙ্গলুরু বিমানবন্দরকে ৫০ বছরের জন্যে লিজ দেওয়া হয়েছে গৌতম আদানিকে । দেশে চারটি বৃহত্তর রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্ক থাকবে এবং বিক্রি করা হবে পাঞ্জাব ও সিন্ধ , ইউকো , আইডিবিআই এবং ব্যাংক অফ মহারাষ্ট্র। অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরিস বোর্ড বেসরকারিকরণের উদ্যোগ শুরু হয় মে মাসে, করোনা মহামারীর আবহকালেই। সারা দেশে ৪১টি অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরির সঙ্গে যুক্ত প্রায় ৮২০০০ হাজার কর্মীর ভবিষ্যৎ আশঙ্কার মধ্যে চলে যায়। নয়া-শিক্ষা-নীতির নামে একশটি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়কে মুনাফালাভের সুবিধা করে দেওয়া হবে । ২০কোটি বেকার ,চার কোটি প্রতি বছর পাশআউট । বিশ্বায়নের যুগে বেশীর ভাগ রাষ্ট্রে ক্ষমতায় আসছে ফ্যাসিস্ট সরকার । তাদের মদতে একচেটিয়া পুঁজিবাদ মরিয়া হয়ে শ্রম শোষণ করার জন্যে আমাদের দেশের মতো সব দেশেই শ্রমিক সুরক্ষা আইন তুলে দিচ্ছে । বিজ্ঞান-প্রযুক্তির আবিষ্কারের ফলে প্রফিট মার্জিনালাইজড যত হচ্ছে ঠিক ততখানি রাষ্ট্রব্যবস্থা স্বৈরাচারী হয়ে উঠছে । বিশ্বে ৮ কোটি মানুষ বে-নাগরিক আজ । করোনা-সংক্রমন যেখানে সীমানাহীন , কর্পোরেট-বিশ্ব যেখানে উন্মুক্ত , সেখানে নাগরিকত্বের অর্থহীন বন্ধনে মানুষকে সীমানাবন্দী করে রাখার অপচেষ্টাকে মানুষ কোনদিন মেনে নেবেনা ।
মুক্তির দিশা
এই বিশ্বে মানুষই একমাত্র চিন্তাশীল জীব যারাই একমাত্র উৎপাদন করতে পারে । বিশ্ব নামক এই জীব ও জড় জগতে নিহিত আছে সভ্যতা বিকাশের উপাদান । খনিতে জীবাশ্ম জ্বালানি পেট্রোল থাকে তা প্রাকৃতিক উপাদান, খনি থেকে তা তুলে যখন প্লাস্টিক , পলিথিন, পলিয়েস্টার ইত্যাদি তৈরী হয় তখন তাকে উৎপাদন বলি। এই উৎপাদনের মধ্যে দিয়ে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করে , প্রকৃতির স্বাভাবিক জীববৈচিত্রে আঘাত হানে এবং বিশ্ব-প্রকৃতিকে বিপন্ন করে তোলে । অর্থাৎ প্রকৃতির উপাদান নিয়ে পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থা যে উৎপাদন করে সেখানে মুনাফার আকাঙ্খা থাকে অপরিসীম ,আর সেই আকাঙ্খার মধ্যে লুকিয়ে থাকে ধ্বংসের বীজ। এই মুনাফা হাঙর একচেটিয়া পুঁজিবাদ যদি তার উদ্বৃত্ত্ব পুঁজি পুনরুৎপাদনের মাধ্যমে প্রকৃতি মেরামতের জন্যে ব্যয় না করে তাহলে বিশ্ব-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হবে অনিবার্যভাবেই ।
গ্রাফিক্স : Magzeter
লেখক পরিচিতি-
নাট্যকর্মী। কান্দি, মুর্শিদাবাদ।
মেইল আইডি – tarash01@gmail.com