ব্যাংক ব্যবস্থার রূপান্তর

পোস্টটি দেখেছেন: 51 ডক্টর নির্মলেন্দু নাথ ১৯৬৮ সালে গার্নার মিরডাল-এর “এশিয়ান ড্রামা” প্রকাশিত হয়। তিন ভলিউমের এই গ্রন্থে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত এই অর্থনীতিবিদ ভারতবর্ষ নিয়ে আলোচনা করেন। ১৯৫১-১৯৫৫ , ১৯৫৫-১৯৬০ এবং ১৯৬০- ৬৫ পরপর তিনটি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা সত্ত্বেও অধ্যাপক মিরডাল ভারতের ভবিষ্যত সম্পর্কে সন্দিহান ছিলেন। ভূমিসংস্কার সংক্রান্ত কর্মসূচির অসম্পুর্নতা, ক্রমবদ্ধর্মান দুর্নীতি, বিরাজমান জাতিভেদ প্রথা এবং বেকার […]

ব্যাংক ব্যবস্থা

ডক্টর নির্মলেন্দু নাথ

১৯৬৮ সালে গার্নার মিরডাল-এর “এশিয়ান ড্রামা” প্রকাশিত হয়। তিন ভলিউমের এই গ্রন্থে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত এই অর্থনীতিবিদ ভারতবর্ষ নিয়ে আলোচনা করেন। ১৯৫১-১৯৫৫ , ১৯৫৫-১৯৬০ এবং ১৯৬০- ৬৫ পরপর তিনটি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা সত্ত্বেও অধ্যাপক মিরডাল ভারতের ভবিষ্যত সম্পর্কে সন্দিহান ছিলেন। ভূমিসংস্কার সংক্রান্ত কর্মসূচির অসম্পুর্নতা, ক্রমবদ্ধর্মান দুর্নীতি, বিরাজমান জাতিভেদ প্রথা এবং বেকার সমস্যার  (মূলত শিক্ষিতদের) উত্তরোত্তর বৃদ্ধির জন্য অধ্যাপক মিরডাল চিন্তিত ছিলেন। ১৯৬৯ সালে ১৪টি ব্যাংককে জাতীয়করণ করা হয়। ঘোষিত লক্ষ্য  ছিল কৃষি, শিল্প, রপ্তানি বাণিজ্য ও বৃহত্তর সামাজিক স্বার্থ রক্ষার মাধ্যমে অর্থননীতিতে গতিময়তা আনা।

ইতিমধ্যে অর্ধশতক অতিক্রান্ত হয়েছে। ভারতবর্ষে অনেক পরিবর্তন এসেছে। ক্রমবদ্ধর্মান আয়বৈষম্য সত্ত্বেও জাতীয় আভ্যন্তরিন উৎপাদন (জি ডি পি) এর বাৎসরিক বৃদ্ধির হার হিন্দু গ্রোথ রেট-এর চৌহদ্দি (অর্থাৎ ২.৫ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশ) অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছে। দারিদ্র রেখার নিচে জনসংখ্যার পরিমাণ ষাটের দশকের তুলনায় হ্রাস পেয়েছে। পরিবর্তন রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পের মালিকানার ক্ষেত্রে এবং ব্যাংক শিল্পের ক্ষেত্রেও এসেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পের ক্ষেত্রে বিলগ্নীকরণ করা হয়েছে। এবং ব্যাংক গুলোর (রাষ্ট্রায়ত্ত) ক্ষেত্রে নায়েক কমিটির (২০১৪) সুপারিশ মোতাবেক সংহতি করণের উপর জোর দেয়া হচ্ছে। আমাদের আলোচনা এই শেষের বিষয়টিকে ঘিরে।

অনাদায়ী  ঋণ

ব্যাংক শিল্পের ক্ষেত্রে যে বিষয়টা সবচেয়ে আলোচিত তা হলো অনাদায়ী ঋণ (Non Performing Asset) । ব্যাংকের কাজ হল ঋণের ব্যবসা করা অর্থাৎ ঋণ নেওয়া ও ঋণ দেওয়া। ব্যাংক সাধারণের কাছ থেকে ঋণ নেয় এবং উদ্যোগপতিদের ঋণ দেয়। সাধারণভাবে ব্যাংক  থেকে দেওয়া অর্থ যদি ধারের ৯০ দিনের মধ্যে কোন সুদ বা আয় না হয় তবে তাকে অনাদায়ী ঋণ বলে। সামগ্রিকভাবে ব্যাংক ব্যবস্থার স্বাস্থ্য মাপার ক্ষেত্রে এই অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে সাধারণভাবে এই অনাদায়ী ঋণকে মোট বিনিয়োগকৃত অর্থের (Gross Advance) আনুপাত হিসেবে দেখা হয় এবং এই আনুপাতকে একটা সূচক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

স্বভাবতই সূচকের মান কম থাকলে তা ব্যাংক ব্যবস্থার সুস্থতাকে নির্দেশ করে আর সূচকের মান বেশি হলে ব্যবস্থা যে কিছুটা যে সংকটাপণ্য তার ইঙ্গিত দেয়। ২০০০ থেকে ২০১৬ এর পরিসরে, রিজার্ভ ব্যাংকের প্রদত্ত তথ্য  বিশ্লেষন করে যদি সূচকের গতিপ্রকৃতি অনুধাবন করা যায় তাহলে দেখা যাবে এটা ইউ (U) আকৃতির, অর্থাৎ ২০০- ০১সাল থেকে ২০০৮-০৯ পর্যন্ত এই সূচকের মান ৬.২ শতাংশ থেকে ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেয়ে ২.০ তে এসেছে। ২০১০- ১১ সালে এই সূচকের মান ১.১ শতাংশ। তারপর এই  সূচকের মান প্রতি বছর বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ২০১৬-১৭ সালে এই সূচকের মান ৫.৩ শতাংশ হয়েছে। এর তাত্পর্য হল সাম্প্রতিক অতীতে ব্যাংক ব্যবস্থার ক্ষেত্রে যে দুর্নীতি ঘটেছে তার প্রতিফলন ঘটেছে এই ইউ (U) আকৃতির রেখার মাধ্যমে।

সামগ্রিকভাবে ব্যাংক ব্যবস্থায় মোট বিনিয়োগকৃত অর্থের মধ্যে অনাদায়ী ঋণের অনুপাত অনুসন্ধান করার সাথে যদি পৃথকভাবে ব্যাংকগুলোতে শুধুমাত্র অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ বিচার করা হয়, তাহলে দেখা যাবে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়াতে এই সমস্যা প্রকট। এই ব্যাংকে ২০১৭ সালের জুন মাসের অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ ছিল ১,৮৮,০৬৮ কোটি টাকা। স্টেট ব্যাংক এই ধাক্কা সামাল দিয়েছিল তার বিপুল পরিমাণ অ্যাডভান্স-এর মাধ্যমে। সঙ্গে যেসব ব্যাংকের এই অনুপাত অপেক্ষাকৃত বেশি তাদের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে এই ধরনের পদক্ষেপের ফলে অপেক্ষাকৃত দুর্বল ব্যাংক , যেমন ইউবিআই, সফল হয়ে উঠবে। কিন্তু এমনটা নাও হতে পারে, প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন এই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি আরো বলেছেন ভারত বর্ষ হলো “রিস্কলেস ক্যাপিটালিজম” এর উদাহরণ। এর অর্থ হলো অনাদায়ী ঋণের পাহাড় জমলেও তা নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না। ভিন্ন পন্থায় ব্যাংকগুলোকে সচল রাখার চেষ্টা করা হবে। তবে এই পন্থার পরিণতি কী  তা ভবিষ্যতই বলবে।

লেখক পরিচিতি:

  প্রাক্তন অধ্যক্ষ চিত্তরঞ্জন কলেজ, কলকাতা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top