দিবাং ভ্যালি জল বিদ্যুত প্রকল্প বনাম পরিবেশ বিপর্যয়

পোস্টটি দেখেছেন: 121 সন্তোষ সেন : পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত ধরে নিত্যনতুন ভাইরাসের মারণকামড়, সাইক্লোন -টর্নেডো- হারিকেন এর মত দানবীয় ঝড়-ঝঞ্ঝার সংখ্যা, ব্যাপ্তি  ও বিধ্বংসী ক্ষমতা বেড়েই চলেছে ক্রমাগত। এখন সকলের কাছে দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হচ্ছে যে , নিজেদের বাঁচাতে ,পরবর্তী প্রজন্মকে বাঁচাতে, এই নীল গ্রহে মানুষ সহ তামাম জীব-বৈচিত্র্য কে টিকিয়ে রাখতে হলে  জীবাশ্ম […]

সন্তোষ সেন : পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত ধরে নিত্যনতুন ভাইরাসের মারণকামড়, সাইক্লোন -টর্নেডো- হারিকেন এর মত দানবীয় ঝড়-ঝঞ্ঝার সংখ্যা, ব্যাপ্তি  ও বিধ্বংসী ক্ষমতা বেড়েই চলেছে ক্রমাগত। এখন সকলের কাছে দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হচ্ছে যে , নিজেদের বাঁচাতে ,পরবর্তী প্রজন্মকে বাঁচাতে, এই নীল গ্রহে মানুষ সহ তামাম জীব-বৈচিত্র্য কে টিকিয়ে রাখতে হলে  জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার অতি দ্রুত কমিয়ে এনে, বন ধ্বংস বন্ধ করে, বায়ু দূষণ -জল দূষণ বন্ধ করে , প্রকৃতির উপর দখলদারি না ফলিয়ে  প্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে প্রাকৃতিক মানুষ হয়ে বাঁচতে হবে। ঠিক এই আবহে বিশ্বজুড়ে  করোনা মহামারির মধ্যেই  মুনাফা সর্বস্ব দেশী-বিদেশী বহুজাতিক কোম্পানি ও তাদের দোসর রাষ্ট্রনায়করা পরিবেশকে ধ্বংস করার নতুন নতুন পরিকল্পনা হাজির করছেন। তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো-   দিবাং ভ্যালি জল বিদ্যুত প্রকল্প ।

 কোরোনা আবহের মধ্যেই কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রকের ফরেস্ট এ্যাডভাইসারি কমিটি (FAC) অরুণাচল প্রদেশের  নিম্ন দিবাং উপত্যকায় “Etalin hydro power project” ও  দিবাং মাল্টি-পারপাস ড্যাম (DMD) তৈরীর ছাড়পত্র দিয়ে দিলেন। এটি জিন্দাল গ্রুপ ও অরুণাচল জলবিদ্যুৎ কোম্পানির  যৌথ উদ্যোগ , যা হবে পৃথিবীর উচ্চতম বাঁধ (২৮৮মিটার)  দ্রি ও টাঙ্গো নদীর উপর। এই দানবীয় বাঁধ  নির্মাণ ও DMD প্রকল্পের জন্য ছয় হাজার হেক্টরের বেশি জমি ও বনাঞ্চল জলের তলায় তলিয়ে যাবে। ১৮ টি গ্রাম জুড়ে  ছড়িয়ে থাকা ঈদু- মিশমি জনজাতির কম করে দুই হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হবেন। কাটা পড়বে  ২.৭ লাখ  বড় গাছ। বিজ্ঞানীরা বলছেন বিশাল এই জলাধার নির্মিত হলে ঐ  অঞ্চলে ভূমিকম্পের সম্ভাবনাও  বেড়ে যাবে  কয়েকগুন।  দিবাং ভ্যালিকে  অরুণাচল প্রদেশের অন্যতম রিচ বায়োডাইভারসিটি অঞ্চল বলে স্বীকার করা হয়। এখানে আছে নানা প্রজাতির পাখি -লেপার্ড -হাতি -গিব্বন- মেছোবাঘ ইত্যাদি। পরিবেশের বারোটা বাজিয়ে এই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিকল্পনা  মনোমোহন সিংয়ের আমলে নেওয়া হলে আদিবাসী জনজাতির ব্যাপক বিক্ষোভ প্রতিরোধের সামনে পড়ে তখনকার মতো প্রকল্পটি   হিমঘরে চলে যায়। মানুষের লোভ- লালসা ও বাণিজ্যের উদগ্র বাসনায় নতুন করে ফিরিয়ে আনা হলো সর্বনাশা এই প্রকল্পটিকে, যা সবুজ বনাঞ্চল ধ্বংস করে, হাজার হাজার মানুষকে উদ্বাস্তু করে- পথে বসিয়ে, কৃষিজমি গ্রাস করে, বর্ষার সময় নদীর নিম্ন অববাহিকাকে প্লাবিত করে পরিবেশের সার্বিক বিপর্যয় ডেকে আনবে। অসংখ্য গাছ কেটে ফেললে কয়েক লক্ষ বন্যপ্রাণ আশ্রয়হীন হবে। Zoonotic  ভাইরাসের অন্যতম বাহক বাদুড় বনাঞ্চল থেকে বেরিয়ে করোনার মতো নানান রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটাবে। বাতাসে  কার্বনের পরিমাণ বাড়বে, বাড়বে গড় তাপমাত্রা ।

পরিবেশ বিপর্যয়কারী প্রকল্পগুলোর বিরুদ্ধে বিজ্ঞানী, পরিবেশবিদ , ছাত্রসমাজ , যুবা বাহিনী ও স্থানীয় মানুষেরা প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন। ছবি নর্থ ইস্ট নাউ

” South Asia network on dams, rivers and people “এর গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে – এতসব বিপর্যয় ঘটিয়েও দেশের নব্বই শতাংশ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তাদের ঘোষণা থেকে অনেক কম এমনকি অর্ধেক পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। হিমালয়ের কোলে অবস্থিত পুরো অরুণাচল জুড়ে ১৬৯ টি নদী বাঁধের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারগুলি। যাদের মধ্যে ইটালিন হাইডেল প্রজেক্ট সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত ও পরিবেশ বিপর্যয়কারী পরিকল্পনা।  পরিবেশবিদ ও বিজ্ঞানীদের আরো আশঙ্কা – বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ার কারণে যে হারে হিমালয়ের বরফ গলছে তাতে করে প্রবল জলোচ্ছাসের কারণে প্রস্তাবিত  বাঁধগুলো যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। যার ফলে নিম্ন অববাহিকার লক্ষ লক্ষ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন চূড়ান্তভাবে ব্যাহত হবে। বানভাসি হবেন অগণিত মানুষ, কয়েক হাজার হেক্টর কৃষি জমি চলে যাবে জলের তলায়। স্থানীয় মানুষের কন্ঠে উদ্বেগ স্পষ্ট-“এই বাঁধগুলো যেন এক একটি টাইম বোমা, যার উপর নির্ভর করছে আমাদের বাঁচা-মরা। অথচ লকডাউন পর্বেই “National board of wildlife” ও FAC এই ধরনের তিরিশটির বেশী প্রকল্প নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করেছে বা ছাড়পত্র দিয়েছে । এদের মধ্যে  বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য –হাতির জন্য সংরক্ষিত আসামের ডেহিং পাটকাই বনাঞ্চলে কয়লাখনি, গির ন্যাশনাল পার্কে লাইমস্টোন  উত্তোলন,পশ্চিমঘাট পর্বতমালার বিস্তৃর্ণ বনাঞ্চলের উপর দিয়ে রেললাইন স্থাপন এবং কর্নাটকের শারাভতী সংরক্ষিত বনাঞ্চলে ভূ-গবেষণার ছাড়পত্র দেওয়া।  প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলো পনেরোটি  ব্যাঘ্র- সংরক্ষণ বনাঞ্চলকে ধ্বংসের কিনারায় পৌঁছে দেবে।

এইসব পরিবেশ বিপর্যয়কারী প্রকল্পগুলোর বিরুদ্ধে বিজ্ঞানী, পরিবেশবিদ , ছাত্রসমাজ , যুবা বাহিনী ও স্থানীয় মানুষেরা প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন। টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক, ই-মেইল ইত্যাদি মাধ্যমে মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। ২৯১ জন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী পরিবেশ ধ্বংসকারি এইসব প্রকল্প বাতিলের দাবি পরিবেশ মন্ত্রকের কাছে পাঠিয়েছেন । সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে ক্ষোভ-বিক্ষোভের ফলে  দিবাং ভ্যালি প্রকল্পকে আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে বা বলা ভালো পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা আংশিক সাফল্য ও স্বস্তির খবর হলেও এইসব সর্বনাশা প্রকল্পগুলো রুখে দিতে প্রয়োজন সর্বস্তরের মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ প্রতিরোধ।।

তথ্যসূত্র:-

1. www.science.war

2. www.change.org

3. www.thehindu.com

3 thoughts on “দিবাং ভ্যালি জল বিদ্যুত প্রকল্প বনাম পরিবেশ বিপর্যয়”

  1. সুপর্ণা দে

    এই নিউজটা জানা ছিল না সত্যিই চিন্তার বিষয়

  2. সন্তোষ সেন

    30 তারিখ দিত্বীয় সংখ্যা প্রকাশিত হবে। প্রকৃতি পরিবেশের ওপর বেশ কয়েকটি লেখা থাকবে। সাথে থাকুন, সময়োপযোগী মননশীল লেখা পাঠান আমাদের দপ্তরে।

  3. সুব্রোতো

    প্রতিটি পোস্টের প্রকাশনার তারিখ ও প্রতিবেদকের বিস্তৃত পরিচয় পোস্টে থাকা উচিত।
    যেসব তথ‍্য ইন্টারনেটে যাচাই করে নেওয়া সম্ভব সেইক্ষেত্রে লিঙ্কগুলো দেওয়া দরকার।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top