সুন্দরবন: প্রকৃতি, মানুষ ও বিপন্ন বাস্তুতন্ত্র

পোস্টটি দেখেছেন: 43 প্রীতিলতা বিশ্বাস অদ্ভুত সমাপতন। ২০০৯ সালের সেই দিনটিও ছিল ২৬শে মে, যেদিন বিধ্বংসী আইলায় বিধ্বস্ত হয়েছিল সুন্দরবন। এবারের ইয়াসের দিনটিও ২৬শে মে। এরমধ্যে আমরা দেখে ফেলেছি লায়লা, ফনি ও আম্ফান। পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট বা বাদাবন এবং রামসার তালিকাভুক্ত জলাভূমি এই সুন্দরবন জাতিপুঞ্জের ঐতিহ্যবাহী স্থান গুলোর মধ্যে অন্যতম। যার […]

প্রীতিলতা বিশ্বাস

অদ্ভুত সমাপতন। ২০০৯ সালের সেই দিনটিও ছিল ২৬শে মে, যেদিন বিধ্বংসী আইলায় বিধ্বস্ত হয়েছিল সুন্দরবন। এবারের ইয়াসের দিনটিও ২৬শে মে। এরমধ্যে আমরা দেখে ফেলেছি লায়লা, ফনি ও আম্ফান। পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট বা বাদাবন এবং রামসার তালিকাভুক্ত জলাভূমি এই সুন্দরবন জাতিপুঞ্জের ঐতিহ্যবাহী স্থান গুলোর মধ্যে অন্যতম। যার দুই তৃতীয়াংশ আছে বাংলাদেশে আর এক তৃতীয়াংশ ভারতে। রাজনৈতিক সীমানা একটা আছে ঠিকই কিন্তু প্রকৃতি সেই সীমানা মানে না। পশ্চিমে ভাগিরথী-গঙ্গা, উত্তরে পদ্মা, পূর্বে পদ্মা-মেঘনা, তার মাঝে যে ব-দ্বীপ তার নাম গঙ্গা ব-দ্বীপ। ভৌগোলিক দিক থেকে এটিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। উত্তরে মুর্শিদাবাদের দিকটা পরিণত ব-দ্বীপ, মাঝে উত্তর ২৪ পরগনা আর নদীয়ার কিছু অংশ নিয়ে মৃতপ্রায় ব-দ্বীপ, যে ব-দ্বীপ গঠনের কাজ শেষ হয়ে গেছে এমন নয়। বড় বড় বন্যায় এখনও এখানে পলি জমে। আর শেষ অংশটি হলো সুন্দরবন, যাকে সক্রিয় ব-দ্বীপ বলা হয় কারণ এর ভূমি গঠনের কাজটি এখনো শেষ হয় নি। এই ব-দ্বীপ গঠিত হতে সাত কোটি বছর সময় লেগেছে। এর নীচের শিলাস্তরটিকে আর্কিয়ান শিলাস্তর বলা হয়, যার উপরে দীর্ঘকাল ধরে সঞ্চিত হয়েছে পলি, পাশাপাশি সরে গেছে সমুদ্র।

সুন্দরবনে দুহাজার বছরেরও আগেকার সভ্যতার নিদর্শন মিলেছে। মেগাস্থিনিসের বর্ণনায় তিনশ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে নিম্নগাঙ্গেয় সভ্যতাকে “গঙ্গারিডি” সভ্যতা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পৌণ্ড্রজাতি ও পৌণ্ড্রোদেশ বলে চিহ্নিত হয়েছে প্রাচীন সাহিত্যে। হাড়োয়া থানার চন্দ্রকেতুগড়ে প্রত্নবস্তু মিলেছে তৃতীয় থেকে পঞ্চম শতকের মধ্যভাগের। ত্রয়োদশ থেকে সপ্তদশ শতকে সংখ্যাগরিষ্ঠ শূদ্রজনগোষ্ঠী ও নবাগত ইসলাম শক্তির প্রচেষ্টায় কৃষি ও বাণিজ্যে সমৃদ্ধশালী হয়ে উঠেছিল এই অঞ্চল। পীরগাজিদের গান, মঙ্গলকাব্য, পাঁচালী ইত্যাদিতে সুন্দরবনের লোকজীবন আর অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বিবরণ পাওয়া যায়। পরবর্তীকালের ইতিহাসের নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠতে থাকে মগ আর পর্তুগীজরা। সাগরদ্বীপ, ময়দা, কুলপীতে এদের শক্ত ঘাঁটি তৈরি হয়। এদের দৌরাত্ম এবং তাণ্ডবলীলায় দুই বাংলার সুন্দরবন অঞ্চল কার্যত জনহীন হয়ে পড়ে।

সুন্দরবনের বর্তমান জনপদের পত্তন হয় ইংরেজ বণিকদের সীমাহীন রাজস্ব আদায়ের চাহিদা পূরণ করার তাগিদ থেকে। ১৭৮৩ সালে টিলম্যান হেঙ্কল সুন্দরবনের সীমানা নির্ধারণ করে অনাবাদি বনভূমি হাসিল করে আবাদি করে তোলার পরিকল্পনা করেন। পরবর্তী ১০০ বছরে হাসনাবাদ, ভাঙ্গর, হাড়োয়া, কুলপি, হিঙ্গলগঞ্জ, মিনাখা, ক্যানিং, জয়নগর, মথুরাপুর এবং সাগরের অধিকাংশ জমি হাসিল করে বসতি ও চাষাবাদ শুরু হয়। ১৯৩৯ সালের মধ্যে সন্দেশখালি, কাকদ্বীপ, পাথরপ্রতিমা, কুলতলি, গোসাবা প্রভৃতি অঞ্চলে জমি হাসিল করে চাষাবাদ শুরু হয়।

ঔপনিবেশিক শাসকরা তাদের অনুগত ও বিশ্বস্ত জমিদার-বেনিয়া-আমলা-দালালদের মধ্যে লটে জমি বিলি বন্দোবস্ত করে দেয়। সেদিন এক শ্রেনীর দালাল নানান প্রলোভন দেখিয়ে আশেপাশের নিম্নবর্ণের ভূমিহীন কৃষক ও আদিবাসীদের ধরে আনে বন হাসিল করে কৃষিকাজ কারানোর জন্য। এর পরের ইতিহাসে আছে শহুরে জমিদার আর কৃষকের মাঝে লাটদার, জোতদার, তালুকদার ইত্যাদি মধ্যস্বত্বভোগীদের আগমন আর সীমাহীন শোষনে ক্রমশ কৃষকের জমি হারিয়ে ভাগচাষি থেকে কৃষি মজুর ও মহিন্দারে পরিণত হবার করুণ কাহিনী। যার পরিণতিতে স্বাধীনতার প্রাক্কালে হওয়া তেভাগা আন্দোলনের ঢেউ আছড়ে পড়ে সুন্দরবনে। উপনিবেশ উত্তরকালেও বারবার কৃষক আন্দোলনে উত্তাল হয়েছে এই অঞ্চল। জমিদারি প্রথার অবসান এবং বাম আমলের ভূমি সংস্কারের হাত ধরে জমির পাট্টা পেয়েছেন অনেকে। জোতদার, তালুকদাররাও আর জমির উপর নির্ভরশীল নন। তারা এখন শহরমুখি। যারা থেকে গেলেন তারা জমির মালিকানার জোরে না হলেও রাজনৈতিক দলের নেতা হিসাবে, স্কুল-শিক্ষকতা, ব্যবসা, চাকুরি, শহরের সঙ্গে যোগ ইত্যাদি নানান কিছুর সাহায্যে গ্রামীন ক্ষমতার কেন্দ্রে অবস্থান করতে থাকলেন। ইতিমধ্যে চাষের চরিত্র বদলে গেছে। প্রধানতঃ একফসলি জমিতে এখন শীতেও চাষ হয়। উচ্চফলনশীল ধানের বীজ, রাসায়নিক সার, কীটনাশক, ইত্যাদির প্রচলন হয়েছে। ফলে কৃষকের উদ্বৃত্ত জোতদার, মহাজনের পরিবর্তে এখন বীজ সার কীটনাশকের ব্যাবসায়ীরা লুঠ করছে।

কৃষিতে লাভ কমায় জমির ব্যবহারে পরিবর্তন এসেছে। ক্ষমতার কেন্দ্র থাকা উচ্চবিত্ত মানুষ পুঁজি-নিবিড় বাগদা চিংড়ির চাষ শুরু করেছে জমিতে আল দিয়ে নোনাজল ঢুকিয়ে। ভেড়ি অঞ্চলে অনিচ্ছুক কৃষক তার জমি বাঁচাতে পারে নি কর্পোরেট পুঁজির হাত থেকে। শুরু হয়েছে কৃষক উচ্ছেদের নতুন অধ্যায়। তাও প্রায় দুই দশকের উপর। বাগদা চিংড়ি রপ্তানী যোগ্য, বৈদেশিক মুদ্রা আনে। তাই রাজনীতির অলিন্দে রয়েছে প্রচ্ছন্ন প্রশয়। প্রায় ৮০ শতাংশ জমি ভেড়িতে পরিণত হয়েছে। এদিকে ভেড়ির চাষে লোক লাগে কম। তাই শুরু হলো অভিবাসন, ভিনরাজ্যের নির্মাণ শিল্পে, কাজের সন্ধানে। নারী ও শিশুরা নিযুক্ত হলো মীন ধরার কাজে। এখন চিংড়ি রপ্তানীর বাজারে কিছুটা মন্দা চলছে। আবার দুই দশক ধরে অবিরাম চাষের ফলে লাভের হার কমে এসেছে। এদিকে পরিত্যক্ত ভেড়িতে কৃষিকাজ সম্ভব নয় সঙ্গে সঙ্গে। তাই সে জায়গায় গজিয়ে উঠেছে ইঁটভাটা। মাটি লাশ হয়ে ইঁটের আকারে চলে আসছে নগরায়নের প্রয়োজন মেটাতে। এই মাটির এক কণাও আর কোনদিন সুন্দরবনে ফিরে আসবে না। নদী বিশেষজ্ঞদের মতে সুন্দরবনের একটা অংশ জলের নিচে তলিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। গত এক শতাব্দীর মধ্যে শুধু পশ্চিমবঙ্গেই উপকূল বরাবর ৪২০ বর্গ কিলোমিটার চলে গেছে নদী গর্ভে।

সুন্দরবনে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বরাবর কৃষির উপর নির্ভরশীল। সেই ক্ষেত্রটির চরিত্র বদলে গেল। বাঘের সঙ্গে লড়াই করে মধু, কাঠ, খেজুরের রস ইত্যাদি সংগ্রহ করে কিছু মানুষ। আর গ্রাম জীবনে সাধারণ ভাবে প্রয়োজনীয় কিছু পেশায় রয়ে গেছেন কিছু মানুষ। রাজা আসে, রাজা যায়। অবস্থা বদলায় না। কী ঔপনিবেশিক রাজত্বে কী উপনিবেশ উত্তরকালে পশ্চিমবঙ্গের প্রান্তিক এই অঞ্চলটির অর্থনৈতিকভাবে বঞ্চিত, সামাজিকভাবে অবহেলিত এই মানুষজনের অবস্থার কোন পরিবর্তন হয় না। এই অঞ্চলের মানুষের প্রধান সমস্যা নদী-বাঁধ। পশ্চিমবঙ্গের অংশে ১০২টির দ্বীপের মধ্যে এখন ১০০ টি আছে। যার ৫২টি তে জঙ্গল পরিষ্কার করে মানুষ বাস করে আর ৪৮টিতে রয়েছে বনাঞ্চল। এই ৫২টি দ্বীপে মনুষ্য বসতি গড়ে তোলার প্রাথমিক শর্ত ছিল নদী-বাঁধ। দিনে দুবার জোয়ারের জল যে উচ্চতায় ওঠে মানুষ দ্বীপে তার তিন-চার ফুট নীচে বাস করে। তাই চারিদিকে বাঁধ দিয়ে অনেকটা কানা উচু থালা বাটির মতো করে নিয়ে মানুষ বাস করে। ৫২টি দ্বীপে মোট ৩৫০০ কিলোমিটার নদি-বাঁধ রয়েছে। বাঁধ মূলতঃ মাটি দিয়ে তৈরি হয়। অনেক সময় উপরের দিকে পাথর বা সিমেন্টের বস্তা দেওয়া থাকে। সুন্দরবনে ছোট, বড়, শাখা সব নদীই পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে সমুদ্রের সঙ্গে যুক্ত। প্রত্যেকটি বড় নদী তার শাখা-প্রশাখা নিয়ে জালকাকারে এক একটা নদীতন্ত্র বা সিস্টেম তৈরি করে। প্রকৃতি তার আপন খেয়ালে কখনো কোন সিস্টেম ব্যবহার করে জোয়ারের জল ঢোকানো-বার করার জন্য আবার কোনটা ত্যাগ করে। জোয়ারের জল নীচে আপনা থেকে হওয়া চ্যানেল দিয়ে বেগে ঢোকে আবার অপর একটি চ্যানেল দিয়ে বেরিয়ে যায়। এরফলে ক্রমাগত জলের ধাক্কায় বাঁধের তলার দিক ক্ষয় হতে হতে দুর্বল হয়। বঙ্গপোসাগর এমনিতেই ঘূর্ণিঝড় প্রবন অঞ্চল। তার উপর বিশ্ব উষ্ণায়ন এই প্রবনতাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছ।

দেখা গেছে বঙ্গপোসাগরের উপরিস্থ বায়ুর স্তর ২০০ milibar  বায়ুর চাপে এবং ২৬.৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় তিন বা চারদিন অবস্থান করলেই ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়। জলের ধাক্কায় দুর্বল হয়ে থাকা নদী-বাঁধ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের সামনে অসহায় হয়ে ধূলিসাৎ হয়।

সক্রিয় ব-দ্বীপ হওয়া সত্ত্বেও সুন্দরবনের ভূমি গঠনের প্রক্রিয়াটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সেই অষ্টাদশ শতাব্দী থেকেই। বাদাবনের জঙ্গল হাসিল করে নদী-বাঁধ দিয়ে ঘেরার ফলে বসবাসের দ্বীপগুলিতে নদী তার স্বাভাবিক প্লাবনভূমি হারিয়ে ফেলেছে। আর তাই নদী খাতেই পলি জমে জোয়ারের জলস্ফিতির পরিসর কমিয়ে দিচ্ছে। অথচ জঙ্গল অঞ্চলে আজও ভূমিগঠনের প্রক্রিয়া অব্যাহত। তাই নদীকে তার  স্বাভাবিক প্লাবনভূমি ফিরিয়ে দিতে হবে। সামুদ্রিক ঝড় ও প্লাবন থেকে দ্বীপাঞ্চলকে স্বাভাবিকভাবে রক্ষা করে এখানকার বাদাবনের জঙ্গল, যার মাটির উপরে উঠে থাকা শ্বাসমূলগুলি ঘন সন্নিবিষ্ট থেকে জলোচ্ছাসের গতি কমিয়ে দেয় এবং প্লাবনভূমিতে পলি জমতে সাহায্য করে। এই বাদাবনের জঙ্গলনিধন বন্ধ করতে হবে। অবিলম্বে ভেড়ির চাষ, ইঁটভাটা বন্ধ করা প্রয়োজন, যার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাস্তুতন্ত্র, দুর্বল হয়েছে নদী-বাঁধ, বেড়েছে ভূমিক্ষয়, লবনাক্ত হয়েছ চাষের জমি, যাকে চাষযোগ্য করে তোলাটা বেশ সময় সাপেক্ষ বিষয়। ভেড়ি চাষের হাত ধরে এসেছে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন—সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবক্ষয়। ট্রপিকাল সাইক্লোনে নোনা-হাওয়ার স্রোত স্থলভাগে বহুদূর পর্যন্ত পাছপালাতে লবনের অধঃক্ষেপ ফেলে এবং অতিরিক্ত লবনের প্রভাবে গাছ নষ্ট হয়ে যায়। এর থেকে বাঁচার জন্য লবন নিরোধক গাছ লাগাতে হবে। এই কাজে ম্যানগ্রোভের জঙ্গল খুব সহায়ক ও কার্যকরি ভুমিকা রাখতে পারে।

 সোজা কথায় প্রকৃতিকে জানতে হবে। সে কী চাইছে বুঝতে হবে। স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি উভয় প্রকার পরিকল্পনাকে একইসঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। ওখানকার hydro-ecology অর্থাৎ জলস্রোত, জোয়ারভাটা ও বাস্তুতন্ত্রের আন্তঃসম্পর্কের সূত্রগুলি বুঝতে হবে। পরিবেশ বান্ধব মাছ ও ধান চাষের প্রচলন করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন যথাবিধ গবেষণা, তাই গবেষণাখাতে ব্যায়-বরাদ্দ বাড়াতে হবে। নদী-বাঁধের জন্য বিজ্ঞানসম্মত পরিকল্পনা দরকার। লাগাম টানতে হবে ইকো-ট্যুরিজমের নামে হয়ে চলা পরিবেশ দূষণে।

পৃথিবীর গড় তাপমাত্রাকে সামনে রাখলে দেখা যাচ্ছে যে বিংশ শতাব্দীতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করে এবং ১৯৯০ এ বিশ্বায়নের পর থেকে তা বাধনহারা হয়ে যায়। প্রকৃতির উপর যার প্রভাব পড়েছে মারাত্মক ভাবে। এর প্রধান কারণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই গড়ে তোলা জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর অর্থনীতি। আন্তর্জাতিক বাজারে ডলার ভিন্ন জীবাশ্ম জ্বালানির বিনিময় সম্ভব নয়। এই সূত্র ধরেই পৃথিবীব্যাপী আধিপত্য বিস্তার করেছে ডলার বা নয়া সাম্রাজ্যবাদ, যা মানুষের ভোগবাদকে বাড়িয়ে তুলে তার চেতনাকে প্রকৃতির বিরুদ্ধে চার দেওয়ালের মধ্যে আবদ্ধ করেছে। কিন্তু সুন্দরবন অঞ্চলে মানুষকে প্রতিদিন প্রকৃতির মুখোমুখি দাঁড়িয়েই বাঁচতে হয় এবং হবেও। যে বাঁচার লড়াই একক ভাবে সম্ভব নয়। তাই জীবন-জীবিকার ক্ষেত্রে সমবায় সংগঠনের প্রয়োজন, যেখানে মানুষ ব্যক্তি স্বার্থের উর্ধে যৌথ স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে শিখবে। করপোরেট পুঁজির বিপরীতে মানুষের সমবায় সংগঠনে প্রয়োজনে সরকারকে আর্থিক সহায়তা দিতে হবে। প্রকৃতির সঙ্গে বিরোধ নয়, তার সঙ্গে সহাবস্থানই সুন্দরবন তথা আমাদের অস্তিত্বের একমাত্র শর্ত।

সূত্রঃ অনীক পত্রিকা ২০১৩, জুলাই সংখ্যা ও অন্যান্য।     

লেখক পরিচিতি:

বিজ্ঞানের ছাত্রী, গণিতে সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে কাজ করেছেন এক দশকের উপর। বর্তমানে প্রবাসী এবং ইতিহাস ও সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ে জানা বোঝায় আগ্রহী।

যোগাযোগ:

biswaspritilata2017@gmail.com

7 thoughts on “সুন্দরবন: প্রকৃতি, মানুষ ও বিপন্ন বাস্তুতন্ত্র”

  1. Subhasish Debnath

    খুব ভালো লেখা । আপনার যদি আরও কিছু লেখা থাকে আমাদের পাঠাতে পারেন ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top