বঙ্কিম দত্ত
“ধর্মীয় নেতা ও শাস্ত্রকাররা যখন অপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রাধান্য পেল, তখন থেকেই তারা হতদরিদ্র জনসাধারণের আত্মিক প্রয়োজন অনুযায়ী ধর্ম ব্যাখ্যা করতে শুরু করল; বিত্তবান সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের তখন চাই জনসাধারণের সম্ভাব্য প্রতিবাদ অত্যাচারের বিরুদ্ধে নিরাপত্তার আশ্বাস এবং পুরোহিতদের নিজেদের জন্য চাই ধন ও ক্ষমতা।”
লিখেছেন সুকুমারী ভট্টাচার্য, তাঁর ‘নিয়তিবাদ উদ্ভব ও বিকাশ’ গ্রন্থে। এই গ্রন্থের পূর্বকথা অংশে তিনি লিখেছেন “১৯৮১ সালে কানাডার উইনিপেগ শহরে একটি বিদ্বৎ সমাবেশে আমন্ত্রিত হয়ে যাই, যেখানে প্রবন্ধটি ছিল প্রাচীন ভারতে নিয়তিবাদ সম্বন্ধে। আলোচনার মধ্যে বলেছিলাম যে জন্মান্তর ও কর্মবাদ পৃথিবীর দর্শন ও ধর্ম-চিন্তার দুষ্টতম আবিষ্কার। শ্রোতারা তীব্রভাবে আক্রমণ করেন, এঁরা প্রাচ্য পাশ্চাত্য নানাদেশ থেকে এসেছিলেন। তখনই বুঝেছিলাম যে নিয়তিবাদের সঙ্গে ঐ তত্ত্ব দুটি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত এবং প্রকৃতপক্ষে সব মিলে একটি কায়েমি স্বার্থ, এর প্রভাবে জনমানুষে যে ঔদাসীন্য ও নিষ্ক্রিয়তা গড়ে ওঠে তা-ই সে কায়েমি স্বার্থের প্রকাশ।” এই দেশের প্রাচীন সংস্কৃতিতে কীভাবে একই সঙ্গে ধরা আছে দৈব আর পুরুষকার, আস্তিক্য ও নাস্তিকতা, মান্যতা আর সংশয় প্রাচীন সাহিত্য আর সমাজ বিশ্লেষণ করে আসীম নিষ্ঠার সঙ্গে তিনি তা তুলে ধরেন।
সুকুমারী ভট্টাচার্যের জন্মশতবর্ষ এবছর। তিনি জন্মেছিলেন ১২ ই জুলাই ১৯২১ এবং মারা যান ২৪ শে মে ২০১৪ সালে। সুকুমারী দেবীর শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী, তাঁর দেহ দান করা হয় আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অ্যানাটমি বিভাগে । ৯০ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু অসময়োচিত এ কথা বলা যাবে না। তবে তাঁর সৃষ্টির দিকে নজর করলে আমরা বলতে পারি আমরা হারিয়েছি এমন একজন ভারতবিদ্যাবিদকে যিনি একদিকে যেমন ছিলেন বহু ভাষাবিদ আবার প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্য ও সমাজ পর্যালোচনায় এক আলোকস্তম্ভ। সুকুমারী ভট্টাচার্য বস্তুবাদী ও দ্বান্দিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যকে কেন্দ্র করে ভারত আত্মার খোঁজে ছিলেন অক্লান্ত। ব্যক্তিগত যাপনেও তিনি ছিলেন নাস্তিক, ধর্মনিরপেক্ষ এবং মার্কসবাদী। বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব, দর্শনের অধ্যাপক দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় ও পরবর্তীকালে ইংরাজি সাহিত্যের আর এক বিশিষ্ট অধ্যাপক রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য প্রমুখ প্রাচীন ভারতীয় দর্শনের মধ্যে দিয়ে যে কাজ করেছেন শ্রীমতি ভট্টাচার্য তাই করেছেন প্রাচীন সংস্কৃত সাহিত্যকে আকর করে।
ব্যক্তির সম্পূর্ণ বিকাশের মধ্য দিয়ে সমাজের সম্পূর্ণ বিকাশ— এই দার্শনিক ভিত্তি থেকেই সুকুমারী ভট্টাচার্য আলো ফেলেছেন প্রাচীন ভারতের অন্ধকারময় সামাজিক নানা দিকে । হিন্দুত্ববাদী ভারত নির্মাণের ধ্বংসাত্মক প্রক্রিয়া আজ যেভাবে ক্রিয়াশীল তাকে আটকাতে জন্মের শতবর্ষে সুকুমারী ভট্টাচার্যের স্মরণ তাই এক প্রয়োজনীয় কর্তব্য।
বাবা মা খ্রিষ্টান ছিলেন। বাবা ছিলেন কবি মধুসূদন দত্তের বংশধর। সেন্ট মার্গারেট স্কুলে পড়ার সময় গার্ল-গাইডে যুক্ত হতে অস্বীকার করেন সুকুমারী। ব্রিটিশ রাজকে অভিবাদন জানিয়ে শপথ নিতে হতো এই স্কাউট ও গাইডদের। ব্রিটিশ অধীনত ভারতের একজন ছাত্রী হিসাবে এটা ছিল তাঁর প্রতিবাদ।
ম্যাট্রিক উত্তীর্ণ হন সেন্ট মার্গারেট স্কুল থেকে । বি.এ ক্লাসে সংস্কৃতে সাম্মানিক নিয়ে প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়তে চেয়েছিলেন। কিন্তু তখন ঐ কলেজে মেয়েদের প্রবেশাধিকার না থাকায় প্রত্যাখ্যাত হন। ১৯৪২ সালে স্নাতক পরীক্ষায় ভিক্টোরিয়া কলেজে থেকে কলা – বিভাগে সকল বিষয়ে সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ নম্বর পান। মেধাবী ছাত্রী সুকুমারী সকল বিষয়ে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েও খ্রিষ্টান বলে প্রাপ্য হওয়া সত্ত্বেও ঈশান বৃত্তি পাননি। কারণ বর্ণহিন্দু ছাড়া আর কাউকে এই বৃত্তি দেওয়া যাবে না এমনটাই ছিল বৃত্তিদাতার নির্দেশ। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কৃতে এম.এ-তে ভর্তি হয়েও বাঙালী খ্রিষ্টান হওয়ার কারণে বাধার সম্মুখিন হন (অন্য মতে বৃত্তি না পাওয়ার প্রতিবাদস্বরূপ)। শেষ পর্যন্ত ইংরাজি নিয়ে এম.এ পাশ করেন। তবে পরে প্রিয় বিষয় সংস্কৃতে এম.এ করেন প্রাইভেট পরিক্ষার্থী হিসাবে এবং সেখানে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম।
লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে অধ্যাপনার শুরু। কবি বুদ্ধদেব বসুর আমন্ত্রণে লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ ছেড়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগে যোগ দেন সুকুমারী দেবী। পরে চলে যান সংস্কৃত বিভাগে। বিবাহ করেন ইংরেজির সুপণ্ডিত অধ্যাপক অমল ভট্টাচার্যকে। তিনি সুকুমারী দেবীর আগেই প্রয়াত হন । মেয়ে-জামাই সুপরিচিত ইতিহাসবিদ তনিকা সরকার ও সুমিত সরকার। তাঁরা দিল্লি প্রবাসী। কলকাতায় আমৃত্যু একাই থাকতেন সুকুমারী দেবী।
তাঁর লেখা ইংরেজি ও বাংলায় প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৩৫-এর বেশি। ইতিহাসবিদ রোমিলা থাপারের লেখায় পাই : “আমাদের কাছে প্রশ্ন অনেক। সুকুমারী ভট্টাচার্য কিছু প্রশ্ন তুলেছেন ও তার সাথে অন্যদের উৎসাহ দিয়েছেন নিহিত অনুল্লেখিত প্রশ্নগুলি তোলবার জন্য। পৌরাণিক হিন্দুধর্ম কি অ-বৈদিক দেবদেবীদের উপাসনার পুনরুত্থান, যারা এতদিন গুরুত্ব না পেয়ে অলক্ষ্যে ছিল? অহিংসার ওপর নতুন করে জোর দেওয়া থেকে কি ধারনা হয় যে এতে কি বৌদ্ধ ও জৈন শ্রমণদের প্রভাব আছে? এর সাথে সাথে কি স্থানীয় লৌকিক ধর্মের পুনরুত্থান হয়েছিল? – যাতে পবিত্র জায়গা, গাছপালা, বিভিন্ন অশরীরীদের পূজা এবং বিশেষ করে দেবমাতৃকার পূজা এত গুরুত্বপূর্ণ ছিল যা মনে করিয়ে দেয় হরপ্পার ধর্মের কথা, যার সম্বন্ধে আমরা খুব কমই জানি।” অন্যত্র তিনি বলেছেন, ” তাঁর (সুকুমারী ভট্টাচার্য) কাজ প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রে মাইলফলক হয়ে আছে।”
তাঁর লেখা বইয়ের কয়েকটি:
ইংরাজি গ্রন্থ–
হিস্ট্রি অফ ক্লাসিকাল সংস্কৃত লিটারেচর, উইমেন অ্যান্ড সোসাইটি ইন এনশিয়েন্ট ইন্ডিয়া, রিলিজিয়ন কালচার অ্যান্ড গভর্নমেন্ট, ফেটালিজম ইন অ্যানশিয়েন্ট ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়ান থিয়োগনি।
বাংলা গ্রন্থ–
প্রাচীন ভারত: সমাজ ও সাহিত্য, বিবাহ প্রসঙ্গ, বেদে সংশয় ও নাস্তিক্য, মন্থন, নিয়তিবাদ: উদ্ভব ও বিকাশ।
মন্থন গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃতি–” বেদাঙ্গে যে জ্যোতিষ- শাস্ত্র ছিল তা হল নক্ষত্রের অবস্থান বিচার করে যজ্ঞের কাল নিরূপণ করা। কিন্তু তার হিসাব সম্পূর্ণ পৃথক। যজ্ঞ গেল, পূজা এল,এখনো তিথি ধরেই পূজা হয়। কিন্তু হিন্দুর আর এক জ্যোতিষ আছে : সামুদ্রিক জ্যোতিষ, মানুষের অবয়বসংস্থান, দেহলক্ষণ ও হস্ত-পদর রেখা ধরে ভবিষ্যত গণনা। এ বস্তু বেদের দূরতম কল্পনাতেও ছিল না। গ্রহ, রাশিচক্র বিচার করে যে ফলিত জ্যোতিষের রমরমা ব্যবস্থা সারা হিন্দু সাম্রাজ্য জুড়ে তাও বেদে সম্পূর্ণ অপরিজ্ঞাত ছিল
( বেদ ও হিন্দুত্ব)। বেদভক্ত সামুদ্রিক জ্যোতিষপ্রেমি কেন্দ্রিয় মন্ত্রীরা তথা সঙ্ঘ পরিবারের সদস্যরা কী বলছেন? কী বলবেন ইন্দিরা গান্ধী মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় জ্যোতিষ পঠন- পাঠন যুক্ত করতে চাওয়া কর্তা-ব্যক্তিরা!
রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ চায় একই সঙ্গে হিন্দুত্ব ও বেদের পুনরুজ্জীবন। সুকুমারী ভট্টাচার্য-র মতে তা সোনার পাথর বাটি। সঙ্ঘীরা বলেন যে হিন্দু সংস্কৃতি প্রাচীন সংস্কৃতিগুলির অন্যতমই শুধু নয়, এটাই প্রাচীনতম। বেদ প্রাচীনতম সংস্কৃতির আদিমতম গ্রন্থ। সুকুমারী ভট্টাচার্য বলছেন, “বৈদিক সংস্কৃতি প্রাচীন পৃথিবীর আদি সংস্কৃতিগুলির আদিমতম নয়ই বরং অর্বাচীন-তম। চীনা সুমেরীয় অসিরীয় ও ব্যাবিলনীয় মিশরীয় গ্রীক রোমান ইরানীয় ও মেক্সিকোর সভ্যতাগুলি প্রাচীনতর। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম সহস্রাব্দ থেকেও কিছু কিছু সংস্কৃতির নিদর্শন পাওয়া যায়। সেখানে বৈদিক সংস্কৃতি খৃষ্টপূর্ব দ্বাদশ শতকের কিছু আগে শুরু হয়। কাজেই প্রাচীনতার নিরিখে বৈদিক সভ্যতা পৃথিবীর আদিমতম সভ্যতাগুলির মধ্যে কনিষ্ঠতম। আর শ্রেষ্ঠত্বের বিচার করতে গেলে অন্যান্য প্রাচীন সভ্যতাগুলির সম্বন্ধে যথেষ্ট ঘনিষ্ঠ জ্ঞান থাকা দরকার যা এদের (সঙ্ঘ পরিবারের) নেই। কাজেই বৈদিক সভ্যতা শ্রেষ্ঠ কিনা সে বিচার অসঙ্গত অবাস্তব এবং এটা প্রাচীনতম নয়ই। তাহলে এসব মিথ্যা কারণে বেদকে পাঠ্য করার কোন যুক্তি নেই”(বেদ ও হিন্দুত্ব)।
সুকুমারী ভট্টাচার্যের লেখা ‘প্রাচীন ভারত : সমাজ ও সাহিত্য’ তথাকথিত উদারতা ও সহিষ্ণুতার আড়ালে কীভাবে হিন্দু ধর্মে নারী ও শুদ্রের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ ও বৈষম্যমূলক আচরণ বৈদিক যুগের সূচনার অল্প সময় ব্যবধানে চালু হয় তারই এক প্রামাণ্য দলিল।
আর একটি মিথ বেদের যুগে অন্নের অঢেল ব্যবস্থা নিয়ে। রামরাজ্য ফিরে পাবার স্বপ্ন যারা ফেরি করে বেড়াচ্ছেন তারা যে প্রতারণাকে আস্থায় রূপান্তর করতে পেরেছেন তার প্রধান কারণ সমাজে প্রসারিত এক সর্বব্যাপী ক্ষুধা। আশা ছলনাময়ী।
তবু মনে হয় ‘তবু দুটি অন্ন খুঁটি….’! ভাতের গন্ধ ছুটিয়ে নিয়ে যায় অসম্ভব অতীতে। শোনা যাক কী বলছেন সুকুমারী ভট্টাচার্য তাঁর লেখায়–“পুরাকালে মানুষের অবস্থা ভাল ছিল, বেদের যুগে মানুষ বেশী ভালো খেতে,পড়তে পেত এমন একটা কল্পকথা সমাজে, চালু আছে। এ গ্রন্থে (বেদে ক্ষুধা প্রসঙ্গ) বৈদিক সাহিত্যের প্রত্যক্ষ নজিরে এ কল্পকথাটা যাচাই গিয়ে ঠকে গেছি।উত্তর বৈদিক তত্ত্বের যুগেও যারা ব্রাহ্মণ ও ব্রাহ্মণ্যেতর প্রস্থানের বড় বড় তত্ত্বের প্রবক্তা, তারা ইহকাল,পরলোক, জন্মান্তর, কর্ম, কর্মফল নিয়ে বিস্তর আলোচনা করেছেন। কিন্তু যে মানুষগুলো দিনভর খেটে তাদের অন্ন জুগিয়ে নিশ্চিন্ত রেখেছে, এইসব তত্ত্ব আলোচনার অবকাশে সেই হতভাগ্যরা দুবেলা খেতে পেল কিনা তা নিয়ে তারা কেউই মাথা ঘামাননি। ফলে সমাজে চর্চাও চললো, পাশাপাশি ক্ষুধার প্রকোপও রইল অব্যাহত।
মনে পড়ে গান্ধীজির একটি উক্তি- “ক্ষুধিতের সামনে স্বয়ং ভগবানও খাদ্য ছাড়া অন্য চেহারায় আসতে সাহস পান না ‘। কথাটা প্রণিধানযোগ্য। ক্ষুধা এক তীব্র অভিজ্ঞতা। তার দাবিও তেমনি অপ্রতিরোধ্য। তার মুখোমুখি হতে গেলে কেবলমাত্র খাদ্য সংস্থান দিয়েই তা সম্ভব ; নীতিকথা ধর্মাচরণ,তত্ত্ব-উপদেশ সেখানে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক। এই যে সরাসরি খাদ্য দিয়ে ক্ষুধার মোকাবিলা করা, তা বেদের যুগেও হয়নি, আজও হয়নি” (বেদে ক্ষুধা প্রসঙ্গ )।
রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ সগর্বে যে প্রচার করে অতীতের স্বর্ণযুগ তথা হিন্দু যুগ-এর মিথ এবং তাকে কেন্দ্র করে নানা অণৃত ভাষণ তার বিরুদ্ধে সুকুমারী ভট্টাচার্য-র লেখনি গড়ে তোলে এক সবল প্রতিবাদ। আর্য ভারতের গরিমাকীর্তন, হিন্দুত্বের সূচনা পর্ব, হিন্দু রাষ্ট্রের ধারণা ইত্যাদির যে নির্মাণ হিন্দুত্ববাদীদের হাতে ঘটেই চলেছে সেই ঐতিহাসিক বিকৃতির বিরুদ্ধে প্রাচীন তথ্য- ভান্ডারকে বিশ্লেষণাত্মক ও বিজ্ঞানসম্মতভাবে উপস্থিত করাটা বুদ্ধিজীবীর সামাজিক দায়। এই কাজে ব্রতী থাকার জন্য দাভোলকর, পানেসর, কালবুর্গি. গৌরী লঙ্কেশ উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের হাতে নিহত হয়েছেন। তাঁর সেকুলার ও মার্কসবাদী মতাদর্শ এবং বৈজ্ঞানভিত্তিক অনুসন্ধান পদ্ধতির জন্য এই রাজ্যে সুকুমারী ভট্টাচার্যও নানা বাধার মুখে পড়েছেন বারবার। মার্ক্সবাদী সুকুমারীর এই সব গবেষণালব্ধ তথ্য সনাতনপন্থীদের কাছে প্রখর বিদ্বেষ ও বিদ্রুপের বিষয় হয়ে ওঠে।
আজীবন বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় ভাবে যুক্ত থেকেও ২০০৯ সালের নন্দীগ্রামের ঘটনায় তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়েছিলেন সুকুমারী ভট্টাচার্য । এই কারণে সি পি আই (এম) পার্টির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিন্ন হয়। তিনি পার্টির তরফ থেকে আসা সাহায্য ফিরিয়ে দেন। যদিও তখন তিনি শারীরিকভাবে যথেষ্ট অক্ষম। এধরণের উদাহরণ বিরলতম।
“পুরোপুরি বামপন্থায় বিশ্বাসী এই মানুষটার চিন্তার পটভূমিতে ডি ডি কোসাম্বি থেকে আর এস শর্মারা যেমন ছিলেন, তেমনি ছিলেন হীরেন মুখোপাধ্যায় বা চিন্মোহন সেহানবীশ এর মত মানুষ। আর সংস্কৃত বিদ্যার সঙ্গে বিখ্যাত বিদেশি ভারত- তত্ত্ববিদদের নিত্য বিনিময় তাঁর বিদ্যার জগৎটাকে এমন এক বিস্তারের নিয়ে গিয়েছিল, যেখানে সুকুমারীর সঙ্গে মেলামেশা করা মানে পড়াশোনার জগতে আলোর সঙ্গে ওঠাবসা করা”, জানাচ্ছেন তাঁর গবেষক ছাত্র নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী যিনি একজন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক ও সংস্কৃত সাহিত্যের বিশিষ্ট অধ্যাপক।
পল্লবগ্রাহিতা আর চাটুকারিতার বাহুল্যময় বর্তমান বুদ্ধিজীবি সমাজে ঋজু ও প্রত্যয়ী মানুষের অভাব বেশী করে মনে করিয়ে দেবে সুকুমারী ভট্টাচার্যের মতো মননশীল মানুষদের অনুপস্থিতি।
তথ্য সমৃদ্ধ লেখা র জন্য ধন্যবাদ ।সমযাচিত প্রবন্ধ ।