সন্তোষ সেন
স্পেস এক্স ও স্টারশিপ:
স্পেস -এক্স কোম্পানি মঙ্গলগ্রহে কলোনি তৈরির প্রচেষ্টা হাতে নিয়েছে। কোম্পানির প্রধান এলন মাস্ক জানাচ্ছেন “স্টারশিপ” মহাকাশযান সুপার হেভি রকেটের পেটে চেপে ১০০ জন মানুষ ও বাড়তি ১০০ টন ভার নিয়ে মঙ্গলে পৌঁছে যেতে পারবে । বলা হচ্ছে- এই স্টারশিপ পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী লঞ্চ ভেহিকেল সিস্টেম, যা মঙ্গলে সঞ্চিত জল ও কার্বন ডাইঅক্সাইডকে তরল অক্সিজেন ও মিথেনে পরিণত করে তার জ্বালানি রিফিল করতে পারবে এবং আবারো পৃথিবীতে ফিরে আসতে পারবে। প্রতিটি মহাকাশযান ২০ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে।
স্পেস এক্স ও নাসার পরিকল্পনা:
ওদের পরিকল্পনাটা একটু খুঁটিয়ে দেখা যাক। ২০২৪ – ২০৫০ সালের মধ্যে প্রতিদিন তিনটি মহাকাশযান দশ লক্ষ মানুষকে লাল গ্রহের মাটিতে পৌঁছে দেবে । তার আগে অবশ্য ২০২১ সালে মানুষ ছাড়া দু-দুটো মহাকাশযান পাঠানো হবে, যা লাল গ্রহকে বসবাসযোগ্য করার জন্য সমস্ত জীবনদায়ী ব্যবস্থা করে ফেলবে। এই পুরো কর্মযজ্ঞটি পরিকল্পনা করা হয়েছে “নাসার” মঙ্গলগ্রহ অভিযান প্রকল্পের সাথে যুক্ত হয়ে এবং আরো নানান বেসরকারি সংস্থার সাথে হাত মিলিয়ে।
উল্লেখ্য নাসার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে- “স্পেস-এক্স কোম্পানি তাদের মহাকাশযানের কার্যকারিতা প্রমাণ করতে না পারা পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে পারব না এবং মঙ্গল গ্রহে বসতি স্থাপনের লক্ষ্যে নাসা এক দীর্ঘকালীন প্রকল্পের কাজে এর মধ্যেই হাত দিয়েছে।” অন্যদিকে ২০১৬ সালে কাজ শুরু হলেও এখনো পর্যন্ত স্পেস এক্সের “স্টারশিপ ” বাস্তব চেহারায় হাজির হতে পারে নি। যদিও অতি সম্প্রতি (৪ই আগস্ট) স্টারশিপের একটি প্রটোটাইপ (SN 5) সফলভাবে এক মিনিটের মধ্যে পাঁচ হাজার ফুট পাড়ি দিয়ে ফিরে এসেছে। সত্যিকরের স্টারশিপকে মঙ্গলে পাঠানোর আগে এইরকম আরো কয়েকটি প্রটোটাইপ উত্ক্ষেপণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে স্পেস- এক্স কোম্পানি।
কত লাগবে মঙ্গলে যেতে?
আচ্ছা ঠিক কত দাম পড়বে একটি মঙ্গল- টিকিটের? আপাতত মাত্র পাঁচ লক্ষ ডলার, অবশ্য মঙ্গলে গিয়ে টিকতে না পারলে আপনাকে বিনি পয়সায় আবার ধরাধামে ফিরিয়ে আনা হবে। তাই এলন সাহেবের প্রস্তাব মেনে নিজের বাড়িঘর জমি-জমা বিক্রি করে টিকিটের জন্য তাড়াতাড়ি লাইন দিন।
কিছু কূটভাষ:
ধনকুবেররা টিকিট কাটতে থাকুন, সেই ফাঁকে আমাদের কিছু প্রশ্ন -দ্বিধা -সংকোচ তুলে ধরি। ইউরোপিয়ান কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট বলছেন -“It is only for the super rich which is against my social convictions”।
NASA এবং “Aero- space ‘র এক যৌথ সমীক্ষা (২০১০) বলছে – বাণিজ্যিক কারণে এই হারে মহাকাশযান পাঠাতে থাকলে গ্লোবাল ওয়ার্মিং আরো বাড়বে। তাঁরা হিসেব দিয়েছেন- এক হাজার মহাকাশযান থেকে নির্গত ৬০০ মেট্রিক টন কালো কার্বন বাতাসকে আরো দূষিত করে তুলবে, যা মেরু প্রদেশের তাপমাত্রা ০.৪ থেকে এক ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড পর্যন্ত বাড়িয়ে দেবে, ওজোন-স্তরও আরো বেশি করে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এসব কিছু ছাড়িয়ে আর একটি নাছোড় প্রশ্ন- এলন মাস্ক দের মতো বিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলারের ধন কুবেরারা তাদের লোভ-লালসা ও অপরিসীম মুনাফার চাকাকে সচল রাখতে পৃথিবীর প্রকৃতি-পরিবেশ কে নির্বিচারে লুঠ করে চলেছে, যার হাত ধরে তামাম জীব বৈচিত্র্য ও বাস্তুতন্ত্র আজ ধ্বংসের দোরগোড়ায়। বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ছে চড়চড় করে, সমস্ত রেকর্ড ছাপিয়ে মেরুপ্রদেশ ও হিমালয়ের বরফ গলছে অন্তত সাত গুণ বেশি হারে। আর এসবের ফলে মানব সভ্যতা পৃথিবী থেকে চিরতরে অবলুপ্ত হওয়ার দিকে নিশ্চিত পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
মঙ্গলে অমঙ্গল?
পৃথিবীর বিপর্যস্ত বিধস্ত প্রকৃতি পরিবেশ ঠিক করার কাজে হাত না দিয়ে, প্রকৃতি পুনরুৎপাদনে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ না করে, সমস্ত মানব প্রজাতির ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার কাজে উদ্যোগ ও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ না করে, কি করতে চাইছেন এলন-মাস্ক দের মতো টাইকুন ও নাসার কর্তা ব্যক্তিরা?
বিজ্ঞান- প্রযুক্তির অভূতপূর্ব বিকাশকে কাজে লাগিয়ে ও ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করে শুধুমাত্র কিছু ধনকুবেরদের, ওদেরই তৈরি করা দূষিত বিষাক্ত পৃথিবী থেকে মঙ্গলে সরিয়ে নেওয়ার এক চূড়ান্ত ঘৃণ্য পরিকল্পনার ছক কষা হচ্ছে সরকারি ও বেসরকারি
মহাকাশ সংস্থাগুলোর উদ্দ্যোগে সরকারি পরিকাঠামো ও সমস্ত সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করে। আর ওদের এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে প্রাণ প্রকৃতি পরিবেশ ধ্বংসের লম্বা হাত পৃথিবী থেকে মঙ্গলের বুকেও পৌঁছাবে অনিবার্য ভাবে।
তথ্যসূত্র:





