উইকিপিডিয়ার মুক্তধারা

পোস্টটি দেখেছেন: 60 অনিরুদ্ধ দত্ত উইকিপিডিয়া একটি মুক্ত অনলাইন বিশ্বকোষ।  এবছর শুরুতে জানুয়ারি মাসের 15 তারিখ উইকিপিডিয়া কাটিয়ে দিল 20 টা বছর। আজ ঢাউস রেফারেন্স বই , বিশাল বপু অভিধান বা একাধিক খন্ডের শব্দকোষ অন্য জায়গায় বহন করে নিয়ে যাওয়ার যুগ শেষ। একটা স্মার্ট ফোন, ইন্টারনেট যোগাযোগ, সার্চ ইঞ্জিন আর যদি জানার ইচ্ছা থাকে তবে […]

উইকিপিডিয়া

অনিরুদ্ধ দত্ত

উইকিপিডিয়া একটি মুক্ত অনলাইন বিশ্বকোষ।  এবছর শুরুতে জানুয়ারি মাসের 15 তারিখ উইকিপিডিয়া কাটিয়ে দিল 20 টা বছর। আজ ঢাউস রেফারেন্স বই , বিশাল বপু অভিধান বা একাধিক খন্ডের শব্দকোষ অন্য জায়গায় বহন করে নিয়ে যাওয়ার যুগ শেষ। একটা স্মার্ট ফোন, ইন্টারনেট যোগাযোগ, সার্চ ইঞ্জিন আর যদি জানার ইচ্ছা থাকে তবে যে কোন বিষয়ে তথ্য-সন্ধান — হুজুরে হাজির উইকিপিডিয়া। যারাই জ্ঞানের জগতে বিচরণ করতে চান উইকিপিডিয়া তাদের নানা বিষয়ে তথ্য এবং আলোচনা ও অন্যান্য নানা দিক থেকে  বিষয়-জ্ঞান  পৌঁছে দেয় আগ্রহীদের কাছে। মনে করিয়ে দিই এই পরিষেবা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ও বাধাহীনভাবে পাওয়া যায়।

                  20 বছরের জন্মদিন পালনের অনুষ্ঠানে wikimediafoundation.org সকল ব্যবহারকারীকে জানাচ্ছে —  …to create a free encyclopedia, written by volunteers, for everyone in the world. It seemed impossible. Over 20 years, Wikipedia has become the largest collection of open knowledge (তথ্য ও জ্ঞানের স্বাধীনতা বিষয়ে এই সংখ্যায় একটি লেখা আছে যা পাঠকরা পড়ে নেবেন এই অনুরোধ রাখছি) in history. How did it happen? People, like you.

ফাউন্ডেশন আরো জানাচ্ছে যে, “For Wikipedia’s 20th birthday, we are celebrating the power of human collaboration, creativity, and curiosity.”

             উল্লেখ করে রাখা ভালো যে সর্বপ্রথম চালু হওয়া  উইকি (দ্রুত)-র নাম উইকি উইকি ওয়েব। প্রথম প্রকাশ হয় 25 শে মার্চ 1995, উদ্বোধক ছিলেন হাওয়ার্ড জি কানিংহাম যিনি মার্কিন কম্পিউটার প্রোগ্রামার হিসেবে স্বনামখ্যাত। উইকিপিডিয়ার কাজ শুরু 2001 থেকে। এখানে “পিডিয়া” শব্দের ব্যবহার এনসাইক্লোপিডিয়ার অনুসরণে।

 The  wikiway : Quick Collaboration on the web:

          জি কানিংহাম ও বো লেউফ “উইকি”র বৈশিষ্ট্য নির্দেশ করেছেন— উইকির লেখাগুলি সংশোধনযোগ্য, প্রয়োজনবোধে এতে তথ্য যুক্ত করা, সংশোধন করা,  সংযোজন করার জন্য নিয়মনিষ্ঠাভাবে এগোতে পারেন যে কোন ব্যবহারকারী (collaboratively edited)। কেবল বিশেষজ্ঞ নির্ভর নয় উইকি ধরনের তথ্য বিতরণ ব্যবস্থাগুলি। এই ব্যবস্থা এমন হবে না যে বিশেষজ্ঞ বা  প্রতিষ্ঠিত  লেখকরাই লেখাগুলি তৈরী করবে পাঠকদের জন্য বরং ওয়েবসাইটে যারা আসছেন বা ব্যবহার করছেন তথ্যগুলি তাদের সৃষ্টিশীল সহযোগিতা ও অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে জীবন্ত থাকবে প্রতিনিয়ত।

                 উইকিপিডিয়া পরিচালিত হয় এভাবেই, 300 টি বিভিন্ন ভাষায়। উইকিপিডিয়া এক ধরনের পারস্পারিক সহযোগিতার মধ্যে দিয়ে গড়ে ওঠে যা সম্পূর্ণভাবে ব্যক্তিমালিকানা ও বাজার নির্ভরতা মুক্ত একটি তথ্যভান্ডার হিসাবে আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত। জ্ঞান অর্থনীতির শাসনের বাইরে উইকিপিডিয়া যে জ্ঞান-ভান্ডার গড়ে তুলেছে তার পরিমাণ বিশাল। উইকিপিডিয়া শতাধিক উইকির  সংকলন (পাঠকরা এর মধ্যে নিশ্চয়ই উইকিমিডিয়ার বিষয়ে পরিচিত)। এ ধরনের উইকি ওয়েবসাইট আরো আছে। এদের মধ্যে প্রথম দশের তালিকায় উইকিপিডিয়া আছে 2007 সাল থেকেই। ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত উইকিপিডিয়া তে 2020 এর হিসাব মত রয়েছে প্রায় 60 লক্ষ বিভিন্ন আর্টিকেল। প্রতিমাসে এর এডিটিংয়ের কাজে দুনিয়াজুড়ে দু’ লক্ষ আশি হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

অর্থনীতির জগতে শাসনভার নির্ধারিত হয় তথ্যের দখলদারির ভিত্তিতে। GAFAM এখন একটি পরিচিত শব্দবন্ধ। ব্যক্তিমালিকানায় পরিচালিত ও বাজারভিত্তিক 5 টি দৈত‍্যাকার সংস্থার (গুগুল, এপেল,ফেসবুক, আমাজন, মাইক্রোসফট) নামের আদ্যাক্ষর এগুলি। দুনিয়ার চলমান অর্থনীতির একটা বড়ো অংশের নিয়ন্ত্রক এই তথ্য-প্রযুক্তি সংস্থাগুলি। সবকটি সংস্থাই তথ্যের কারবারি। এদের অনেকগুলির বার্ষিক কারবারের পরিমাণ ভারতের মতন বহুদেশের বার্ষিক আয়ের (জিডিপি) এর চেয়ে অনেকগুণ বেশি। এইসব সংস্থার পুজি সঞ্চয়নের  হার অত্যন্ত উর্ধ ও দ্রুতগামী এবং লাভজনক হয়ে ওঠার প্রচেষ্টায় বিভিন্ন দেশের পরিচালক সরকারগুলিকে এরা জমিদারের খাজাঞ্জিবাবুর  মত ব্যবহারে অভ্যস্ত। উইকিপিডিয়ার মত উদ্যোগ ও তা আন্দোলনে রূপ পাওয়া এইসব সংস্থার বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানোর একটা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। আফশোষ এই যে অতীতে কম্পিউটার  বিরোধিতাকে এজেন্ডা করা বাম দলগুলি এবং জ্ঞান অর্থনীতির ভূমিকা বুঝতে অপারগ ও নিষ্ক্রিয়তায় আক্রান্ত বেশিরভাগ কমিউনিষ্ট ও অন্য বামদলগুলো এই ধরনের বিরোধিতার কর্মসূচিকে প্রায় কোনো গুরুত্বই দেয় না। অথচ দুনিয়াজুড়ে এই ধরনের বিরোধিতায় সোচ্চার নানা আন্দোলন যে গড়ে উঠছে তাও স্পষ্ট হয়ে উঠছে ক্রমশ। আজকের পুজিবাদ যা ব্যাঙ্ক-পুঁজি ও বাজার-নির্ভরতার মেলবন্ধনের ফাঁসে রুদ্ধশ্বাস, তার মৃত্যুঘন্টাও শোনা যাচ্ছে মাঝেমধ্যেই । এক্ষেত্রে  অন্যতম প্রধান আঘাত আসছে তথ্য-প্রযুক্তির জগতের বিভিন্ন  সমাধান অযোগ্য দ্বান্দ্বিকতার কারণে।

            আলোচনা দীর্ঘায়িত না করে Paul Mason- এর Post Capitalism বইটির প্রারম্ভিক অনুচ্ছেদের কয়েকটি বাক্য বিনা মন্তব্যে উল্লেখ করে লেখার নটে গাছটি মুড়িয়ে দিই এবারের মতো —-

  “We are seeing  the spontaneous rise of production: goods, services  and  organisations are appearing that no longer respond to dictates of the market and the  managerial hierarchy. The biggest information product in the  world –wikipedia –is made by 27000 volunteers, for free,  abolishing the Encyclopaedia business and depriving the advertising industry of an estimated 3 billion dollar a year in revenue”.

Contact:

pariprashna.in@gmail.com

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top