হর্ষ দাশ
দিল্লিতে যে কৃষক আন্দোলন চলছে, সেই কৃষক আন্দোলন শুধুমাত্র কৃষক আন্দোলনে আর থেমে নেই। এই আন্দোলনের পক্ষের ও বিপক্ষের শক্তিকে সামনে আনলে দেখা যাবে এই আন্দোলন শুধুমাত্র কৃষকদের আন্দোলন নয়। প্রাথমিক ভাবে শুরু করেছিলেন কৃষকরা, আস্তে আস্তে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি – শ্রমিকসহ মধ্যবিত্ত শ্রেণী, ছাত্র- ছাত্রী, বুদ্ধিজীবী এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ জন আন্দোলনে অংশগ্রহণ করছেন।
বিপক্ষে কারা আছেন
কর্পোরেটের অর্থ চালিত মিডিয়া, কেন্দ্রীয় সরকার এবং তার সাথে আছে হিন্দুত্ব বাহিনী। অর্থাৎ কর্পোরেট (আদানিও আম্বানি), সরকার এবং হিন্দুত্ব শক্তির মেলবন্ধন।
কেন এই আন্দোলনকে আজ রাস্তায় নামতে হলো
নয়া অর্থনীতির প্রবাহে আজ পৃথিবী দুটো পক্ষে ভাগ হয়ে গেছে। একদিকে কর্পোরেট অর্থ অন্যদিকে সাধারণ জনগণ। গণতন্ত্র আজ পুঁজিবাদ থেকে বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। ফলে পার্লামেন্টের পক্ষে-বিপক্ষের সমস্ত দল আজ কর্পোরেটের অর্থে বিক্রি হয়ে গেছে। পার্লামেন্টে জনগণের হয়ে বলার কেউ নেই। যখনই জনগণ রাস্তায় নামল – সাথে সাথে গদি মিডিয়া নেমে পড়লো এই আন্দোলনের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করার জন্য। সমস্ত গদি মিডিয়াকে আজকে চালায় বকলমে রিলায়েন্সদের মত কর্পোরেটরা। এই মিডিয়া ভোটের ইস্যু তৈরি করে যেসব বিষয় নিয়ে, সেগুলি জনসাধারণের সাথে যুক্ত নয়, বরং সরাসরি হিন্দুত্ববাদী প্রচারের সাথে যুক্ত। এইভাবে তারা নরেন্দ্র মোদিকে কার্যত এক ভগবানে রূপান্তরিত করেছে, যিনি দেশকে বাঁচাতে পারেন।
হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলির প্রচারের উদ্দেশ্য কি?
এদের প্রধান উদ্দেশ্য হলো ভারতবর্ষের সমস্ত গণতান্ত্রিক সংগঠনগুলোকে ভেঙে দিয়ে কর্পোরেটদের স্বার্থে একটা স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন করা।
এই আন্দোলনে নতুন শক্তির উত্থান কোথায়?
নয়া অর্থনীতি দু’ধরনের নতুন শ্রমিকের জন্ম দিয়েছে, যারা আন্দোলনকে বিভিন্নভাবে শক্তি যোগাচ্ছে। একদিকে কম্পিউটার নির্ভর (নলেজ ওর্য়ারকার) শ্রমিক শ্রেণীর জন্ম হয়েছে, আর উল্টো দিকে জন্ম হয়েছে ব্যাপক পরিযায়ী শ্রমিকের। এই পরিযায়ী শ্রমিকদের একটা বড় অংশ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশে ক্ষেতমজুর হিসেবে কাজ করে, যারা এই আন্দোলনের মধ্যে রয়েছে সর্বতোভাবে। পাশাপাশি ছোট ছোট প্রচার গ্রুপ করে ভিডিওর মাধ্যমে নলেজ অর্থনীতির ওয়ার্কাররা গদি মিডিয়ার বিরুদ্ধে প্রচার আন্দোলন গড়ে তুলছে। এর সাথে যোগ দিচ্ছেন ডাক্তার, শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী সহ বিভিন্ন রকম সমাজসেবী দল। তাই পার্লামেন্ট নির্ভর রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে, এক নতুন ধরনের সামাজিক সংগঠনের জন্ম হচ্ছে আন্দোলনের জন্য। এই নতুন দিকটি কিন্তু একটি নতুন ধারার গঠনের জন্ম দেবে বিশ্বব্যাপী, যাকে ঘিরে কর্পোরেট দুনিয়ার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী নতুন গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে উঠবে।
আজকের কমিউনিস্টদের ব্যর্থতা কোথায়?
একদিকে কমিউনিস্টরা শ্রমিকশ্রেণীকে চিনতে পারছে না, পাশাপাশি প্রকৃতি আন্দোলনকে ঘিরে কর্পোরেটদের বিরুদ্ধে নতুন দাবি উঠছে তার থেকেও কমিউনিস্টরা বিশ গজ দূরে। কর্পোরেট চাষ পৃথিবীকে করেছে বিষাক্ত, বিষাক্ত করেছে বাতাসকে, জঙ্গল উচ্ছেদ করে দিয়ে জুনোটিক ভাইরাসকে মনুষ্য সমাজে টেনে এনেছে– এটা মানুষকে বোঝাতে ব্যর্থ হচ্ছে আজকের কমিউনিস্টরা। পাশাপাশি প্রকৃতির এই ধ্বংসলীলার সমস্ত চাপ নারী জাতির উপর দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে, সেই নারী জাতির কষ্ট বুঝতে আজ ব্যর্থ কমিউনিস্টরা। এই কারণেই পৃথিবীব্যাপী কর্পোরেট বিরোধী আন্দোলন গড়ে উঠছে না। সময়ের দাবি-বিশ্বব্যাপী বিপর্যস্ত প্রকৃতি পরিবেশের বিরুদ্ধে জারি থাকা আন্দোলন, চলমান কৃষক আন্দোলন, নারী নির্যাতন ও নারী বিদ্বেষের বিরুদ্ধে মেয়েদের
আন্দোলনকে শ্রমিক শ্রেণীর আন্দোলনের সাথে একসূত্রে গেঁথে নয়া অর্থনিতির প্রধান চালক কর্পোরেটদের সর্বগ্রাসী লোভের বিরুদ্ধে এক সার্বিক ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ে নামতে হবে।