লোহিতসাগরের পাশে মরুভূমির কিনারা ঘেঁষে ৫০০ বিলিয়ন ডলার খরচ করে নতুন এক শহর গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে সৌদি প্রশাসন। ১০ লক্ষ মানুষ বসবাস করতে পারবে এই শহরে, শক্তির উৎস হবে জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে “গ্রিন হাইড্রোজেন”। কিভাবে পাওয়া যাবে এই বিপুল হাইড্রোজেন?
সৌরশক্তি ও মরুভূমির উপর বয়ে যাওয়া বাতাসের বেগকে কাজে লাগিয়ে জলের তড়িৎ বিশ্লেষণ করে অক্সিজেনকে আলাদা করে বের করে আনা হবে হাইড্রোজেন। তৈরি হবে চার গিগাওয়াটের শক্তি-ঘর। এবং এরকম আরো বেশকিছু শক্তিঘর তৈরির চিন্তাভাবনা করছেন সৌদি- সরকার।
বৃহৎ তেল কোম্পানিগুলো কি তাহলে জীবাশ্ম- জ্বালানির ব্যাপক ব্যবহার থেকে সরে আসতে শুরু করেছে? অনেক বহুজাতিক কোম্পানি- বিনিয়োগকারী, সরকার ও পরিবেশবিদরা দাবি করছেন- হাইড্রোজেনকে শক্তির উৎস হিসেবে ব্যবহার করলে বিশ্বজুড়ে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার এবং বৈশ্বিক উষ্ণতাবৃদ্ধি কমবে। নিউইয়র্ক-এর Natural Resources Defense Council -এর শক্তি বিশেষজ্ঞ Rachel Fakhry বলছেন-“এটা বেশ সাড়া জাগানো প্রকল্প। বায়ু ও সৌরশক্তি যেখানে গৃহস্থালী ও বৈদ্যুতিক গাড়ির শক্তি যোগান দেয়, সেখানে গ্রীন হাইড্রোজেন বড় বড় উৎপাদন সংস্থার শক্তি যোগানোর ব্যবস্থা করতে পারে। জার্মানিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ গ্রীন হাইড্রোজেনের দিকে ঝুঁকছে। এই প্রসঙ্গে ইউরোপিয়ান কমিশনের বক্তব্য- ” কার্বন বিহীন অর্থনৈতিক জগতে গ্রীন হাইড্রোজেন হল পাজলের একটি মিসিং পার্ট”।
কেন বলা হচ্ছে গ্রিন হাইড্রোজেন? বর্তমানে প্রাকৃতিক গ্যাস মিথেন জলীয়-বাষ্পের সাথে বিক্রিয়া করে হাইড্রোজেন, কার্বন মনোক্সাইড ও কার্বন ডাইঅক্সাইড তৈরি করে, যা শেষ পর্যন্ত বাতাসে গ্রীন হাউস এফেক্ট বাড়িয়েই দেয়। কিন্তু পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তি দিয়ে তড়িৎ বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে প্রাপ্ত হাইড্রোজেনের শক্তিকে বলা হচ্ছে গ্রীন হাইড্রোজেন।
তাহলে কি জীবাশ্ব জ্বালানির আর দরকার হবে না?? আসলে বিষয়টা অত সহজ সরল নয়। প্রথমত: হাইড্রোজেন প্রকৃতিতে মুক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় না। সুতরাং জল থেকে একে আলাদা করতে হলে প্রচুর শক্তির দরকার হবে, তা চিরাচরিত বা অচিরাচরিত যে উৎস থেকেই আসুক না কেন।
দ্বিতীয়তঃ হাইড্রোজেন গ্যাসকে ষ্টোরেজ করতে হলে শূন্যের নিচে ২৫৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা ও ৭০০ বায়ুচাপের প্রয়োজন। কোথা থেকে আসবে এ বিপুল ব্যবস্থার বিশাল শক্তি?
তৃতীয়তঃ অন্যান্য জীবাশ্ম জ্বালানির তুলনায় গ্রীন হাইড্রোজেন তৈরিও বেশ ব্যয়সাপেক্ষ। একটি উদাহরণ দিই- অস্ট্রেলিয়ার শক্তিমন্ত্রক একটি ২৬ গিগাওয়াটের গ্রীন হাইড্রোজেন প্রকল্পের সাহায্যে সিঙ্গাপুরে শক্তি সরবরাহের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। যার জন্য প্রয়োজন হবে বিশাল মাপের প্রায় দুই হাজার উইন্ড টার্বাইন ও তিরিশ বর্গমাইল এলাকা জুড়ে সৌর প্যানেল।
বিশ্বজুড়ে চলতে থাকা বড় মাপের পরিবেশ বিপর্যয়কে কি শুধুমাত্র এইসব প্রযুক্তি দিয়েই সমাধান করা যাবে, না কি ভাবতে হবে নতুন তারিখায়? সমাধান কি লুকিয়ে আছে অন্য কোনোখানে??
তথ্যসূত্র:
https://www.bbc.com/future/article/20201112-the-green-hydrogen-revolution-in-renewable-energy






লেখাটি শেষ হইয়াও শেষ হইল না !