প্রায় ২০০ কোটি টন কয়লা উত্তোলনের লক্ষ্যে দেউচা-পাচামি ও দেওয়ানগঞ্জ- হরিণসিঙা দুটি কোল ব্লকে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম কয়লাখনি প্রকল্পের প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ সরকারিভাবে শুরু হয়ে গেছে।
West Bengal Power Development Corporation Ltd ( WBPDCL) কে এই প্রকল্প রূপায়নের সবুজ সংকেত কেন্দ্রীয় সরকার দেয় গত বছর জুন মাসে। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে- এই কোল-ব্লক থেকে প্রতিবছর 3-4 কোটি টন কয়লা তোলা হবে, যার মধ্যে রাজ্য সরকার 50 লক্ষ টন কয়লা বিক্রি করতে পারবে। বাকিটা ব্যবহৃত হবে অন্যান্য কাজে যেমন অ্যামোনিয়া বা ইউরিয়া তৈরিতে।12 হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পে নানা দেশী বিদেশী সংস্থাকেও পার্টনার হিসেবে নেওয়া হবে।
উদ্বেগের বিষয় এগারো হাজার হেক্টরের বেশি এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই প্রকল্পে সরকারকে কম করে নয় হাজার হেক্টর জমি অধিগ্রহন করতে হবে, যার ফলে 35 টি গ্রামের উনিশ হাজার অধিবাসীকে (7000 জন আদিবাসী-জনজাতির মানুষ সহ) অন্যত্র সরে যেতে হবে বাধ্যতামূলকভাবে।
স্থানীয় মানুষ প্রকল্পটি ঘোষণার পর থেকেই তা বাতিলের দাবিতে নানান সময় সরকারি অফিসে দরবার করেছেন- বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। কাকস্য পরিবেদন। ওখানকার মানুষের অভিজ্ঞতা বলছে- পাথর খাদানের কাজে পুনর্বাসন প্যাকেজের সুযোগ পান নি অনেক মানুষ। উল্টে পাথর খাদানের ফলে মাটির নিচের জলস্তর আরো নিচে নেমেছে, শুখা রুখা হয়ে পড়েছে বেশ কিছু গ্রাম। আর এলাকার মানুষের শ্বাসকষ্টের সমস্যা ও ফুসফুসের রোগ বেড়েছে। সরকারি সূত্র বলছে- কয়লাখনি প্রকল্পের পাঁচ শতাংশ অঞ্চলে ছয় হাজার হেক্টর সবুজ বনাঞ্চল জাস্ট ভ্যানিশ হয়ে যাবে। পরিবেশবিদদের দাবী- প্রকল্পের কাজ পুরোমাত্রায় শুরু হলে জল, মাটি ও বায়ুদূষণ বাড়বে সাংঘাতিকভাবে, ফলে বাড়বে গ্রিন হাউস গ্যাসের পরিমাণ- বাড়বে গড় তাপমাত্রা।
সরকারগুলো বাতাসে কার্বন নিঃসরণ কমানোর কথা বলছেন প্যারিস চুক্তি মোতাবেক। ফসিল ফুয়েলের ব্যবহার কমিয়ে অচিরাচরিত শক্তির ব্যবহার বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে সারা দেশ জুড়েই আসাম- উত্তরাখণ্ড-ওড়িশা-ঝাড়খণ্ড সহ এই বঙ্গেও একের পর এক কয়লা খনির ছাড়পত্র দিয়ে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই দ্বিচারিতার মানে কি? তাহলে কি সমস্তটাই পরিবেশকর্মী বিজ্ঞানী সহ সাধারণ মানুষের চোখে ধুলো দিয়ে দেশি-বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মুনাফা বাড়ানোর জন্য পরিবেশ লুটের অবাধ ছাড়পত্র দেয়া হচ্ছে?
সরকারের পক্ষ থেকে ভাঁড়কাটা গ্রামপঞ্চায়েতের অধীনে গ্রামগুলি থেকে মাত্র 6 জনকে ডাকা হয় গত 22 শে সেপ্টেম্বরের আলোচনা সভায়। এই চিঠি পেয়ে গ্রামবাসীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাদের দাবি- “কেন মাত্র ছয় জনকে ডাকা হল? জমি নিতে হলে সমস্ত গ্রামবাসীদের সাথে আলোচনায় বসতে হবে। সরকার আমাদের সাথে সঠিক আলোচনায় না বসলে এক কোদাল মাটিও কাটতে দেব না আমরা।” বাইশ তারিখেই বীরভূম আদিবাসী গাঁওতার নেতৃত্বে চার হাজার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত মিছিল গ্রামগুলোতে পরিক্রমা করে।
2.https://www.economictimesofbureau–11.9.2019
3.https://thewire.in/rights/tribal-agitation-bengal-mining-deocha-pachami-mamata





