পাঠশালার কথকতা

পোস্টটি দেখেছেন: 29 যখন আমরা “পৃথিবীর পাঠশালা”র কাজ হাতে নিয়েছিলাম, সেই শুরুর দিনগুলো থেকেই আমাদের একটা কথা স্পষ্টভাবে মনে হয়ে,ছিল। শুধুমাত্র অর্থাভাবে অথবা প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে যে সমস্ত শিশু-কিশোররা পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে যাহোক একটা কাজে লেগে পড়তে বাধ্য হয়, খানিকটা সুযোগ পেলে তারা নিজেদেরকে মেলে ধরতে সক্ষম। শুধু প্রয়োজন একটু সাহস জোগানোর, প্রয়োজন কিছু সমমর্মী […]

যখন আমরা “পৃথিবীর পাঠশালা”র কাজ হাতে নিয়েছিলাম, সেই শুরুর দিনগুলো থেকেই আমাদের একটা কথা স্পষ্টভাবে মনে হয়ে,ছিল। শুধুমাত্র অর্থাভাবে অথবা প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে যে সমস্ত শিশু-কিশোররা পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে যাহোক একটা কাজে লেগে পড়তে বাধ্য হয়, খানিকটা সুযোগ পেলে তারা নিজেদেরকে মেলে ধরতে সক্ষম। শুধু প্রয়োজন একটু সাহস জোগানোর, প্রয়োজন কিছু সমমর্মী বন্ধুতার। উপযুক্ত বয়সের আগেই তাদের অনেককে কাজে লেগে পড়তে হয়। হয়তো কাউকে তালিম নিতে হয় “সংসার সামলানো”র কাজের।

তাই, “পৃথিবীর পাঠশালা”কে আমরা দেখতে চেয়েছি বন্ধুতার একটা পরিসর হিসেবে, পারস্পরিক শেখার একটা জায়গা হিসেবে। শিক্ষার মতো একটা আজীবনের সম্পদকে যে সমাজে, যে সময়ে টাকা দিয়ে কিনতে হয়, সেখানে মানুষ খণ্ডিত হয়ে যেতে বাধ্য। সিসিটিভি সার্ভিলেন্সের দাঁড়িপাল্লায় যে শিক্ষা, যে শৃঙ্খলার ওজন মাপা হয়, সেই শিক্ষা কুশিক্ষার নামান্তর, সে শৃঙ্খলা মনে বেড়ি পড়ানোর সামিল।

এই কথাগুলো মাথায় রাখার একেবারে প্রাথমিক একটা সুফল আজ পাওয়া গেল। পাঠশালায় আজ খুঁজে পাওয়া গেল একটি মুখচোরা কিশোরকে, যে তার কাঁচা বয়সে, কাঁচা হাতে লিখে ফেলেছে ছোট্ট দুটো কবিতা। সবচেয়ে বড় কথা, সেই আনকোরা কবিতাদুটোতে অনুকরণের বিন্দুমাত্র চেষ্টা নেই, বরং তাতে খুঁজে পাওয়া যাবে তার বাস্তব অভিজ্ঞতা, খুঁজে পাওয়া যাবে তার নিজের দেখার চোখদুটোকে।

আমাদের যে বন্ধু পড়াতে গিয়ে এই ক্ষুদের সাক্ষাৎ পেয়েছে, সে লিখেছে,

“চিনতে পারিনি এতদিন।

কিন্তু আজকে পৃথিবীর পাঠশালাতে পড়াতে গিয়ে সেই কবিবন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়ে গেল।

‘স্যারে’র কাছে লজ্জায় দেবে না, দেবে না করে অবশেষে তার দুটো কবিতা আমার হাতে এল।”

কবিতাদুটো এখানে দিচ্ছি।

বর্ষাকাল

“বর্ষাকালে বৃষ্টি হবে
কে না জানে ভাই
ঘরের মধ্যে এক হাঁটু জল
দেখেশুনে যাই।
বৃষ্টি নামে ঝম ঝমাঝম
যে যার ঘরে পালাইরে
ঘরের মধ্যে কাদা কাদা
বসার জায়গা নাই রে।
বৃষ্টি হলে জানালার ধারে
বসে দেখি বাইরে,
ঠান্ডায় শরীর কাঁপে কনকন
কি করি যে ভাইরে।”

রোদ উঠেছে, ফুল ফুটেছে

“রোদ উঠেছে
ফুল ফুটেছে
কাকেরা সব
ডাক ছেড়েছে,
রোদ উঠেছে
ফুল ফুটেছে
ফুলের গন্ধে মৌমাছিরা
এদিক ওদিক ছুটেছে,
রোদ উঠেছে
ফুল ফুটেছে
নতুন দিনের শুরু
নতুন দিনের মোরগটাও
ডাকছে নতুন করে,
ডেকে ডেকে মোরগটাতো
ক্লান্ত হয়ে গেল
রাতের বন্ধু জোনাকির দল
কোথায় হারিয়ে গেল।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top