বিদ্যাসাগরের নারীমুক্তি-চিন্তা

পোস্টটি দেখেছেন: 62 অনিরুদ্ধ দত্ত ১৮৯১ সালে ৭১ বছর বয়সে বিদ্যাসাগরের মৃত্যু হয়।  জন্মকালে সমগ্র ভারতবর্ষ ইংরেজের পদানত।  জন্ম  ১৮২০ সালে। তাঁর জন্মের দু’বছর আগে শেষতম পেশোয়াও বিদেশী শাসকের সামনে রাজমুকুট নামিয়ে আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়েছেন। ‘বণিকের মানদন্ড দেখা দিল পোহালে শর্বরী /রাজদণ্ড রূপে ‘।   কর্মকার যখন মারা যাচ্ছেন বিদ্যাসাগর মাঝের দীর্ঘ একাত্তর বছরে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা […]

vidyasagar

অনিরুদ্ধ দত্ত

১৮৯১ সালে ৭১ বছর বয়সে বিদ্যাসাগরের মৃত্যু হয়।  জন্মকালে সমগ্র ভারতবর্ষ ইংরেজের পদানত।  জন্ম  ১৮২০ সালে। তাঁর জন্মের দু’বছর আগে শেষতম পেশোয়াও বিদেশী শাসকের সামনে রাজমুকুট নামিয়ে আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়েছেন। ‘বণিকের মানদন্ড দেখা দিল পোহালে শর্বরী /রাজদণ্ড রূপে ‘। 

 কর্মকার

যখন মারা যাচ্ছেন বিদ্যাসাগর মাঝের দীর্ঘ একাত্তর বছরে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রবাহ যথেষ্টই স্রোতস্বিনী। এই দীর্ঘ সময়জুড়ে ভারতবর্ষকে গড়ে তুলতে যাঁরা ভূমিকা নিয়েছিলেন দয়ারসাগর- করুণাসাগর- বিদ্যাসাগর তাঁদের অন্যতম। তবে কেবল বিশেষন ব্যবহার করে তাকে বোঝানো অসম্ভব। বিশিষ্ট কবি শঙ্খ ঘোষ তাই বলছেন,

 …  “বর্ণপরিচয়, বিধবাবিবাহ, বহুবিবাহ রোধের চেষ্টা, মেয়েদের শিক্ষার ব্যবস্থা -এ সবটা নিয়েই তাঁর একটিই আন্দোলন –যাকে আমরা বলতে পারি এক মানবমুখী সামাজিক আন্দোলন।”

 যেজন আছে মাঝখানে

নিরতিশয় দরিদ্র পরিবারে ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম। তাঁর চেয়ে বড় পন্ডিত, সমাজ সংস্কারক মানুষ এদেশে আরো জন্ম নিয়েছেন। দয়ার সাতসাগরও দেখা মিলবে, করুণানিধিও জন্মেছেন । কিন্তু একই সঙ্গে এত গুণের সমাবেশ আর কোথাও ঘটেনি। রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী বলেছেন, “… ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এত বড় ও আমরা এত ছোট… যে, তাঁহার নামগ্রহণ আমাদের পক্ষে বিষম আস্পর্দ্ধার কথা বলিয়া বিবেচিত হইতে পারে। ” ভারতের ইতিহাসের ঘটনাবহুল সময়ের মধ্যে দিয়ে ঈশ্বরচন্দ্রের জীবনকাল অতিবাহিত হয়েছে। রামমোহন (১৭৭২-১৮৩৩) থেকে রবীন্দ্রনাথকে (১৮৬১-১৯৪১) বাঙালী তথা ভারতের নবযুগের এক পর্বকাল ধরলে বিদ্যাসাগর (১৮২০- ১৮৯১) তার মাঝামাঝি সময়ের।  তিনি স্বভাবতই ছিলেন এই উন্মেষের সচেতন অংশীদার।

 বিধবাবিবাহ – ভাবনা

 দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারের সন্তান বিদ্যাসাগর সামাজিক কুপ্রথা এবং কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সাহসী সংগ্রাম চালিয়েছেন অক্লান্তভাবে যা নিঃসন্দেহে বৈপ্লবিক। ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের অনুজ সহোদর শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্নকে ৩১ শ্রাবণ ১২৭৭ সালে (১১আগস্ট ১৮৬০) লিখছেন- “বিধবা বিবাহ প্রবর্তন আমার জীবনের সর্ব্বপ্রধান সৎকর্ম্ম। এ জন্মে যে ইহা অপেক্ষা অধিকতর আর কোন সৎকর্ম্ম  করিতে পারিব তাহার সম্ভাবনা নাই। এ বিষয়ের জন্য সর্ব্বস্বান্ত হইয়াছি, এবং আবশ্যক হইলে প্রাণান্ত স্বীকারেও পরাঙ্মুখ হইব না।”

বিদ্যাসাগরের একমাত্র পুত্র নারায়নচন্দ্র বিধবা ভবোসুন্দরীকে বিয়ে করার জন্য মনস্থির  করেছেন। কিন্তু সে বিয়ে সম্পন্ন হলে আত্মীয় ও বন্ধুরা তাদের সম্পর্ক পরিত্যাগ করবে।  বিদ্যাসাগর মহাশয় যেন তা নিবারণ করেন তাই  অনুজ শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন বিদ্যাসাগর কে চিঠি লিখে মতামত জানাতে বলছেন।  বিদ্যাসাগর মহাশয় তখনই পত্রের কোনো উত্তর দেননি। 

বিয়ে হ’লে ৩১ শ্রাবণ অনুমোদন জানিয়ে পত্র লেখেন। সেই চিঠির দু-চারটি বাক্য- “….. আমি দেশাচারের নিতান্ত দাস নহি, নিজের বা সমাজের মঙ্গলের নিমিত্ত যাহা উচিত বা আবশ্যক হইবে,তাহা করিব, লোকের বা কুটুম্বের ভয়ে কদাচ সঙ্কুচিত হইব না…।”  তাঁর বন্ধুরা অনেকেই বিধবা বিবাহ মেনে নেননি অথবা পরে পিছিয়ে গেছেন। হরিশচন্দ্র সম্পাদিত ‘হিন্দু পেট্রিয়ট’ বিধবা বিবাহের পূর্ণ সমর্থক ছিল। কিন্তু রাজেন্দ্রলাল মিত্র সম্পাদনার দায়িত্ব নেবার পর লেখেন, ” We have always been opposed to widow-remarriage “। বিদ্যাসাগরের জীবদ্দশাতেই, হিন্দু পুনরুত্থান আন্দোলন শুরু হলে বিধবা বিবাহের বিরুদ্ধে তীব্র বিরোধিতা সোচ্চার হয়ে ওঠে। বিধবা বিবাহের পক্ষে ঈশ্বরচন্দ্র ‘বিধবা বিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব’ এর উপসংহারে যে আবেদন রেখে ছিলেন তা দেখা যাক– “দুর্ভাগ্যক্রমে, যাহারা অল্প বয়সে বিধবা হয়, তাহারা যাবজ্জীবন যে অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ করে এবং বিবাহের প্রথা প্রচলিত না থাকাতে, ব্যভিচার দোষের ও ভ্রুণহত্যা পাপের স্রোত যে উত্তরোত্তর প্রবল হয়ে উঠিতেছে, ইহা বোধকরি, চক্ষুকর্ণ বিশিষ্ট ব্যক্তি মাত্রই স্বীকার করবেন।

 হে পাঠক মহাশয়বর্গ। অন্ততঃ কিয়ত্ক্ষণের  নিমিত্ত, স্থিরচিত্তে বিবেচনা করিয়া বলুন, এমনস্থলে, দেশাচারের দাস হইয়া, শাস্ত্রের বিধিতে উপেক্ষা প্রদর্শনপূর্বক, বিধবাবিবাহের  প্রথা প্রচলিত না করিয়া, হতভাগ্য  বিধবাদিগকে যাবজ্জীবন অসহ্য বৈধব্য যন্ত্রণানলে দগ্ধ করা এবং ব্যভিচার দোষের ও ভ্রুণ-হত্যা পাপের স্রোত উত্তরোত্তর প্রবল স্রোত হইতে দেওয়া উচিত; অথবা দেশাচারের অনুগত না হইয়া, শাস্ত্রের বিধি অবলম্বনপূর্বক, বিধবাবিবাহের প্রথা প্রচলিত করিয়া, হতভাগ্য বিধবাদিগের অসহ্য বৈধব্যযন্ত্রণা নিরাকরণ, এবং ভ্রূণহত্যা  পাপের স্রোত নিবারণ করা উচিত।”

প্রসঙ্গত বলা যায় রামমোহন ও ডিরোজিওদের মত ব্যক্তিদের প্রভাবে বেশ কিছুটা জমি তৈরী হয়েছিল, বিধবাদের অমানুষিক দুঃখ কষ্ট নিরসনে সামাজিক সমর্থনের। তাদের পুনর্বিবাহের জন্য বিদ্যাসাগরের  প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়ে পাশে এসে দাঁড়ালেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, অক্ষয়কুমার দত্ত সহ অনেক সমব্যথী মানুষ। ১৮৫৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর স্থাপিত হল ‘সমাজোন্নতি বিধায়িনী সুহৃদ সমিতি’। সভাপতি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। কার্যনির্বাহক সমিতিতে অন্যান্যদের সঙ্গে রইলেন অক্ষয়কুমার দত্ত (এবছর বাঙলার নবযুগ উন্মেষের এই বিস্মৃতপ্রায় ব্যক্তিত্বের জন্মেরও দ্বিশত বর্ষপূরণ)। এই সমিতিতে স্ত্রীশিক্ষার  প্রবর্তন, হিন্দু বিধবার পুনর্বিবাহ, বাল্যবিবাহ রোধ, বহুবিবাহ রোধ সম্পর্কিত প্রস্তাব গৃহীত হল। স্থির হলো নারীশিক্ষা প্রসারের জন্য বিদ্যালয়  স্থাপনের জন্য সচেষ্ট হবে এই সমিতি।

 বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে

বাল্যবিবাহ রোধে বিদ্যাসাগরের ভূমিকা নিয়ে একথা বলা যায় যে এই বিষয়ে তিনি যে বিরোধিতা করেছিলেন তা ছিল বৈজ্ঞানিক যুক্তির ঠাসবুননে অত্যন্ত আটোসাটো। কোন ধর্মীয় বিধিনিষেধের লাঠৌষুধির প্রয়োজন তার হয় নি। বোঝা যায় যে মানুষ বেদান্ত আর সাংখ্যকে false system of philosophy বলার মতো বৈপ্লবিক সাহস দেখাতে পারেন তাঁকে বিধবার পুনর্বিবাহ দেবার জন্য যে ধর্মশাস্ত্রের সাহায্য নিতে হয় তার কারণ সমাজে আধুনিক মননশীলতা ও প্রাচীন প্রতিক্রিয়াশীল ভাবনার এক প্রবল দ্বন্দ্ব। সতীদাহ প্রথা নিবারণে রামমোহনকে এই কারণেই নিতে হয়েছিলো যুক্তি নয়, আইনের সাহায্য।

নারী শিক্ষা প্রসার

নারী শিক্ষার প্রথম প্রতিষ্ঠানটি এদেশে তৈরি করে ক্রিশ্চান মিশনারীরা, ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে। সাল ১৮১৮। প্রথম বালিকাদের জন্য আবাসিক বিদ্যালয় স্থাপিত হয় ১৮২১ সালে, যা করেন ক্রিশ্চান মিশনারীরাই, তিরুনেলভেলিতে। এসবেরই  লক্ষ্য ছিল ধর্মপ্রচার। বাঙলায় এই কাজে সাফল্য আসে নি। সমাজ ধর্মান্তরিত হবার ভয় পেয়েছে। বাঙলায় প্রথম সেক্যুলার বালিকা বিদ্যালয়টি বাংলার  মিশনারীদের হাতে নয়, বরং বিদ্যাসাগরের  নারীশিক্ষা প্রসারের চেষ্টার প্রত্যক্ষ প্রভাবে তৈরী,  বারাসাতের কালীকৃষ্ণ বালিকা বিদ্যালয়। সাল ১৮৪৫। দু’বছর পর অর্থাৎ ১৮৪৭-এ  তৈরী কলকাতার প্রথম বালিকা বিদ্যালয় সেক্যুলার নেটিভ ফিমেল স্কুল যা পরে ভারতপ্রেমী মিশনারি হোয়াট ড্রিংক- ওয়াটার বেথুনের নামে তা বেথুন স্কুল হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। উল্লেখযোগ্য যে পুণেতে বিশিষ্ট সমাজ সংস্কারক জ্যোতিবা ফুলে ও তাঁর স্ত্রী সাবিত্রী ফুলে ১৮৪৮ সালে প্রথম বালিকা বিদ্যালয় তৈরী করেন।

 বিদ্যাসাগর ১৮৫৬ সালে বিদ্যালয় কমিটির সাম্মানিক সম্পাদক হিসাবে যোগ দেন। শুরু হ’লো নারী সমাজের উন্নতির ভিত্তিস্থাপন, বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা। ১৮৫৭ এর নভেম্বর থেকে ১৮৫৮ এর মে, মাত্র সাত মাসে তিনি বাঙলার বিভিন্ন জেলায় স্থাপন করেন ৩৫ টি বালিকা বিদ্যালয়। প্রায়

১৩০০ ছাত্রী ছিল এখানে। বিদ্যালয় পরিচালন বাবদ মোট খরচ ছিল মাসিক ৮৪৫ টাকা। ভারত সরকার কিছুদিন বাদেই  জানালো স্কুলগুলিকে সরকারী সাহায্য দেওয়া সম্ভব নয় যদি না স্থানীয় জনসাধারণ যথেষ্ট পরিমানে অর্থসাহায্য করে।

বিদ্যাসাগর আর্থিক অনুদান জোগাড়ের জন্য নারীশিক্ষা-প্রতিষ্ঠান ভান্ডার তৈরী করলেন। বিদ্যালয়গুলি চালাতে গিয়ে তিনি ব্যক্তিগত ঋণে জর্জ্জরিত হলেন। বাঙালী ভদ্রলোকরা বাঙলা মাধ্যম স্কুলের কোন ভবিষ্যত আছে বলে মনে করতেন না। ইংরাজী মাধ্যমে শিক্ষা পেলে ব্রিটিশ ভারতে সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়া যাবে এই ছিল তাদের ভাবনা।  বরং গ্রাম বাঙলার নিম্নশ্রেণির শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া শিখে মাথায় চড়ে বসবে এই ভয়ে তারা যথেষ্ট ভীত ছিলেন। নারীশিক্ষা প্রসারে বিদ্যাসাগরের প্রচেষ্টা অনেকটা থমকে যায় এসব কারণে। বেশ কিছু বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যায় ধীরেধীরে, অল্প কিছু অস্তিত্ব রক্ষা করে কোনরকমে চলতে থাকে। বেথুন বিদ্যালয় অবশ্য উল্লখযোগ্য ব্যতিক্রম। তবে বিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা, সমাজ প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করেও যে তিনি তুলে ধরতে পেরেছিলেন,  তার স্পষ্ট সাক্ষ্য রয়েছে সরকার নিয়োজিত কমিশনের উড ডেসপ্যাচ ১৮৫২ তে। আধুনিক শিক্ষার নানা ব্যবস্থার দিকনির্দেশকারী এই প্রতিবেদনে নারীশিক্ষাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার প্রস্তাব উল্লেখযোগ্য। যা বিদ্যাসাগরের কাজেরই স্বীকৃতি হিসাবে গণ্য করা উচিত। 

 তুমি নব নব রূপে এসো প্রাণে

নারীজাতির জন্য স্বনির্দেশিত লক্ষ্য ও সেই  লক্ষ্য পূরণের জন্য  বিদ্যাসাগরের অক্লান্ত পরিশ্রম আজও সমানভাবে সম্মানের সঙ্গে স্মরণীয়। এবং সেই কাজ এখনও অসম্পূর্ণ। বরং একদিকে ব্রাহ্মণ্যবাদী সংস্কৃতির চাপে নারীদের নানা  অধিকারকে সঙ্কুচিত করা, অসম্মানিত করা, ‘অনার কিলিং’ কন্যাভ্রূণ হত্যা, বাল্যবিবাহ, বিদ্যালয়ে না পাঠিয়ে ঘরের কাজে আটকে রাখা এসব চলছে সমানতালে, অন্যদিকে আধুনিকতা আর ব্যক্তিস্বাধীনতার মোড়কে নারীকে পণ্য করে তুলছে আজকের আর্থিক ব্যবস্থা। একদিন পুঁজিবাদী ব্যবস্থা উত্পাদনের কাজে নারীর শ্রমশক্তিকে ব্যবহারের জন্য আয়োজন করেছিল নারী শিক্ষা আর স্বাস্থ্যের। সেই ব্যবস্থার অধোগতিতে আজ অনন্যোপায় জীবনকে বেছে নিতে হচ্ছে পশুস্তর। শরীর বেচে বা প্রদর্শন করে জীবিকা নির্বাহ করাটা নারীর জন্য বহু ক্ষেত্রেই একমাত্রিক বাধ্যতা। আজকের বিদ্যাসাগরের খোঁজে  তাই সেদিনের বিদ্যাসাগরকে বুঝে নেওয়াটা খুবই  জরুরী।

 পুনশ্চ

পাঁচ দশকে কমপক্ষে দু’বার বিদ্যাসাগরের উল্লেখযোগ্য মুন্ডুপাত হয়েছে। তাঁদের জন্য বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য মহাশয়ের একটা লেখার কিছুটা তুলে দিলাম। এই লেখারও নানা সমালোচনার উত্তর হ’তে সাহায্য করবে তা—-

‘….বিদ্যাসাগর কোন খাটের মাপেই মেলেন নি। কেন তিনি ব্রিটিশ বিরোধিতায় যান নি,কেন কৃষক আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন নি— এমন অনেক প্রশ্ন উঠেছে। আর, খাটের মাপে না মিললেই তো বরবাদ! দোষটা যে বিদ্যাসাগরের না হয়ে খাটটারও হতে পারে— এমন ভাবনা বোধহয় কারও মাথায় আসে না। ধানের ক্ষেতে কখনোই বেগুন পাওয়া যাবে না—এটা জেনেও কিছু লোক তবু বেগুনই খোঁজেন। যেন ভাত না পেলেও চলবে, বেগুনটা চাই-ই (অবশ্য, ‘বেগুন’ বলতে সবাই আবার এক জিনিস বোঝেন না। কেউ কেউ বিলিতি বেগুনকেও বেগুন বলে ধরেন)।

সহায়ক সূত্র:

১)   https://gkthought.blogspot.com/2020/05/vidyasagar-biography-in-bengali.html?m=1

২) বিদ্যাসাগর রচনা সংগ্রহ- বিদ্যাসাগর স্মারক জাতীয় সমিতি।

৩)বিদ্যাসাগর : নানা প্রসঙ্গ-রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য। ৪) বিদ্যাসাগর বিশেষ সংখ্যা-সংবর্তক পত্রিকা।

2 thoughts on “বিদ্যাসাগরের নারীমুক্তি-চিন্তা”

  1. আমি মন্তব্য করতে সংকোচ বোধ করি কারণ কিছু বললে সেটা establish করার দায় আমার ওপর বর্তায়।আমার পড়াশুনা যেহেতু scattered তাই সহজে refference দিতে অপারগ।আবার স্মৃতি থেকে বলতে গেলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।তবুও একটু ভাবনা উষ্কাতে একটু বলছি।১)বিদ্যাসাগর মহাশয় তার নিজের কন্যা এবং স্ত্রীর শিক্ষার ক্ষেত্রে উদাস হীন ছিল কেনো?
    ২)শুদ্র রমনীর সাহায্যে (রাসমণি) বিদ্যালয় তৈরি হলেও কতজন শুদ্র কে তিনি enlighted করতে পেরেছিলেন।
    ৩)আমরা নিজেদের মহৎ মিশন কে execute করার জন্য কি আমাদের পুত্র বা কন্যার বিবাহতে উতসাহ দেবো না কি তাদের ব্যক্তিগত দাম্পত্য জীবন যাতে সুখকর হয় সে দিকটাও ভাববো?
    ৪)বিদ্যা সাগরের মধ্যেও কি ব্রিটিশ তৈরি বিকৃত ইতিহাস জ্ঞান ছিলো না?উনার বিভিন্ন লেখা পাত্রে তার প্রমাণ কিন্তু রেখেছেন ।
    ৫)আমরা যত বিদ্যাসাগর চর্চায় উঠসহী আমরা কি জ্যাতিবা ফুলে নিয়ে চর্চা করি?আমরা কি সত্যশোধক সমাজ নিয়ে আলোচনা করি?
    ৬)হুগলি নদী পাশে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয় গুলো নিয়ে যতটুকু চর্চা করি আমরা কি অধুনা পূর্ব বাংলায় তখন তথাকথিত নিম্নবর্গীয় দের মধ্যে কি ভাবে শিক্ষা আন্দোলনের চেষ্টা হচ্ছিল এবং অর্থাভাবে ও বর্ণবাদিদের চকরান্তে সে গুলো ব্যর্থ হচ্ছিল সে চর্চা করি?
    পরিশেষে বলি সমাজ সংস্কারে উনার অবদান শদ্রার সাথে স্মরনীয় কিন্তু আমরা যদি ইতিহাসের subaltern দিকটা যদি না চর্চা করি তাহলে আমরাও ইতিহাসের ছাত্র হিসাবে অপরাধী হয়ে থাকবো।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top